হাতেনাতে: বাজেয়াপ্ত হওয়া গয়না ও সোনা। নিজস্ব চিত্র
সল্টলেকে তাঁর ঝাঁ-চকচকে বাড়ি। বাইরের লোক জানে তিনি বড়বাজারে শাড়ির ব্যবসা করেন। গোয়েন্দাদের অভিযোগ, অশোক জালান নামে এমন এক ব্যক্তির হাত দিয়েই গত ৫ বছরে ভারতে প্রায় ১০৮ কোটি টাকার সোনা পাচার হয়ে এসেছে।
কখনও এই সোনা এসেছে বাংলাদেশ, কখনও ভুটান, কখনও ব্যাঙ্কক থেকে। অভিযোগ, প্রধানত হাওলার মারফতে অশোক এই টাকা বিদেশে পাঠিয়ে রাখতেন। তাঁর এই চক্রে শামিল বাঙুরের বাসিন্দা তাঁর ভাইপো অমিত জালানও, এমনটাই জানান গোয়েন্দারা। ডিরেক্টরেট অব রেভিনিউ ইনটেলিজেন্স (ডিআরআই)-এর অফিসারদের হাতে মঙ্গলবার কাকা-ভাইপো ধরা পড়েছেন। বুধবার ব্যাঙ্কশাল কোর্টেও তোলা হয় তাঁদের। বিচারক দু’জনকে জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
ডিআরআই সূত্রের খবর, প্রতি কিলোগ্রাম সোনা পাচারে অশোকের লাভ ছিল ৫০ হাজার টাকা। গত কয়েক বছরে সোনা পাচার করে এ ভাবে তিনি কয়েক কোটি টাকা রোজগার করেছেন বলে অভিযোগ গোয়েন্দাদের। যিনি তাঁর হয়ে সোনা বয়ে আনতেন, তাঁকে তিনি কিলোগ্রাম প্রতি ৬ হাজার টাকা করে দিতেন বলেও জানা গিয়েছে।
ডিআরআই কর্তারা জানান, এর আগে বহু বার অশোকের হয়ে লোকে সোনা আনতে গিয়ে তাঁদের হাতে ধরা পড়েছেন। কিন্তু, কখনওই অশোকের নাম সামনে আসেনি। পুরো চক্রটি অশোক ও অমিত এমনই পারদর্শীতায় চালাতেন যে যিনি সোনা বয়ে আনছেন, তিনি সরাসরি তাঁদের নাম জানতেন না। অন্য কারও হাতে তাঁর সোনা তুলে দেওয়ার কথা থাকত। চক্রের এক ব্যক্তি ধরা পড়ে যাওয়ায় চক্রের পরবর্তী ব্যক্তির খোঁজ পেতেন না গোয়েন্দারা। কিন্তু, এ বার হিসেবে ভুলচুক হয়ে গিয়েছিল।
ডিআরআই সূত্রের খবর, গত ৯ জুন শিলিগুড়ি থেকে কলকাতায় আসা একটি বাসে সোনা পাচার হচ্ছে বলে খবর আসে। ডানকুনির টোল প্লাজায় সেই বাসকে আটকে শুরু হয় তল্লাশি। প্রায় ২ কোটি ৭১ লক্ষ টাকার সোনা পাওয়া যায় এক ব্যক্তির কাছ থেকে। এক কিলোগ্রাম ওজনের ৮টি বিস্কুট ছিল আনন্দ নামে ওই ব্যক্তির কাছে। জানা যায়, চিন দেশের ছাপ মারা এই সোনা ভুটান থেকে স্থলপথে ভারতে ঢুকেছে। আনন্দের কাছ থেকে ২৪ হাজার টাকাও পাওয়া যায়। তাঁকে কলকাতায় নিয়ে এসে শুরু হয় জেরা। তিনিই জানান, কিলোগ্রাম প্রতি ৬ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি এই সোনা পাচার করছিলেন। তখনই জানা যায় কাকা-ভাইপোর কীর্তি।
শিলিগুড়ি থেকে আসা ওই বাস থেকেই প্রায় ৭৪ কিলোগ্রাম রুপোর গয়না এবং তিন কিলোগ্রাম গাঁজাও পাওয়া গিয়েছে। সেই গাঁজার মালিককে পাওয়া যায়নি। কিন্তু, ভুটান থেকে পাচার হয়ে আসা রুপোর গয়না সমেত ধরা হয় আরও তিন জনকে। যদিও তাঁদের সঙ্গে কাকা-ভাইপোর কোনও যোগ নেই বলে ডিআরআই জানিয়েছে। ডিআরআইয়ের দাবি, ২০১৫ সালেও তাঁদের হাতে ধরা পড়া সোনা লোক মারফত তিনিই আনছিলেন বলে জেরায় অশোক স্বীকারও করে নিয়েছেন।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy