Advertisement
E-Paper

সেতুভঙ্গে সঞ্চয় হারিয়ে সঙ্কটে শ্রমিকেরা

কাজের চাপ ছিল খুব। কিন্তু পুজোর আগে এ ভাবে ছুটি চাননি ওঁরা। এখন কোনও কাজ নেই। বন্ধ রোজগারও। ঝুপড়ির ঘরে বসে দিন কাটছে দুশ্চিন্তায়। অনেকে আবার ইতিমধ্যেই ফিরে গিয়েছেন গ্রামের বাড়িতে।

আর্যভট্ট খান ও শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:২৯
পরিত্যক্ত: মাঝেরহাট সেতু সংলগ্ন ঝুপড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন বেশির ভাগ শ্রমিকই। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

পরিত্যক্ত: মাঝেরহাট সেতু সংলগ্ন ঝুপড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন বেশির ভাগ শ্রমিকই। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

কাজের চাপ ছিল খুব। কিন্তু পুজোর আগে এ ভাবে ছুটি চাননি ওঁরা। এখন কোনও কাজ নেই। বন্ধ রোজগারও। ঝুপড়ির ঘরে বসে দিন কাটছে দুশ্চিন্তায়। অনেকে আবার ইতিমধ্যেই ফিরে গিয়েছেন গ্রামের বাড়িতে।

মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ার পরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে জোকা মেট্রোর কাজ। সেতুর পাশের অংশেই কাজ করছিলেন জনা সত্তর শ্রমিক। তাঁদের কারও থাকার ঝুপড়ি ছিল সেতুর তলায়, কারও সেতুর পাশে। দুর্ঘটনার পরেও অক্ষত থাকা ঘরগুলির বেশির ভাগই এখন তালাবন্ধ। ফের কাজ শুরু হওয়ার আশায় কেউ কেউ এখনও রয়ে গিয়েছেন।

তাঁদেরই এক জন, হলদিয়ার গুরুপদ জানা বলেন, ‘‘সে দিন দুর্ঘটনার সময়ে সেতুর নীচে আমার ঘরেই ছিলাম। চাপা পড়েও ভাগ্যের জোরে বেঁচে গিয়েছি। রাখে হরি মারে কে! কিন্তু এ বার সংসারটা চালাব কী করে, জানি না। পুজোয় হয়তো বাড়ির লোকেদের জন্য কিছু নিয়েও যেতে পারব না।’’ তিনি জানান, ঘরে একটি মানিব্যাগ ও টিনের বাক্সে পুজোর জন্য টাকা জমিয়েছিলেন। ধ্বংসস্তূপ থেকে খুঁজে পাননি কিছুই।

গুরুপদর মতোই জমানো টাকার খোঁজ পাননি জামিরুল শেখ, সবিবুর রহমান, মিঠুন শেখ বা প্রকাশ টিমসিমারা। সেতুর ভাঙা অংশ সরানোর কাজ চলছে এখনও। পুরকর্মীদের পাশাপাশি ধ্বংসস্তূপে ঘুরছেন তাঁরাও। জামিরুল আক্ষেপ করেন, ‘‘সারাদিন খেটে সাড়ে ৫০০ টাকা পেতাম। প্রায় মাস ছয়েকের রোজগার বাক্সে ছিল। এখন তো ভাঙা অংশ প্রায় সাফ হয়ে গিয়েছে। সঙ্গে আমাদের টাকাও বোধহয় সাফ হয়ে গেল। আমরা কয়েক জন অন্য জায়গায় কাজ পাওয়া সত্ত্বেও পালা করে দিন-রাত এখানে পড়ে রয়েছি। যদি কিছু বেরোয়।’’

মঙ্গলবার সকাল থেকে চাঙড় সরানোর পরে মাটির দেখা মিললেই ছুটে যাচ্ছিলেন মুর্শিদাবাদের নারায়ণপুরের বাসিন্দা সবিবুর। তিনি বলেন, ‘‘টিনের বাক্স বা চটের ব্যাগে আমরা সবাই টাকা রাখতাম। সাত দিন ধরে আমার টাকার ব্যাগ খুঁজে চলেছি। এখনও পেলাম না।’’

শ্রমিকদের টাকার ব্যাগ গেল কোথায়? পুরসভার কর্মীদের কথায়, ‘‘আমরা জেসিবি মেশিন দিয়ে ওই সব চাঙড় লরিতে তুলে দিচ্ছি। তার সঙ্গে হয়তো ওই সব ব্যাগ ও বাক্স

চলে গিয়ে থাকতে পারে। সব খুঁটিয়ে দেখা তো সম্ভব নয়। তবে মেট্রো শ্রমিকেরা আমাদের বলেছেন। আমরাও নজর রাখছি।’’

মেট্রোর অধিকাংশ শ্রমিক ইতিমধ্যেই নিজেদের বাড়ি চলে গিয়েছেন। গ্রামে চাষবাস করে উপার্জন হবে, এই আশায়। কয়েক জন অবশ্য বেহালা-তারাতলা এলাকায় মেট্রোর নির্মাণে ফের কাজ পেয়েছেন। মাঝেরহাট সেতু থেকে কিছুটা দূরে তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন ঠিকাদার। মুর্শিদাবাদের মহম্মদ ফটিক শেখ জানান, মেট্রোর ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করে দিনে ৬৩০ টাকা পেতেন। তিনি বলেন, ‘‘শুয়ে-বসে সময় কাটছে। জমানো টাকা দিয়েই এখনও কোনও রকমে

চালাচ্ছি। কলকাতায় থাকার খরচ অনেক। এই টাকা ফুরিয়ে গেলে কী হবে, জানি না। তখন বোধহয় বাড়িই ফিরে যেতে হবে।’’ রকিবুল নামে আর এক শ্রমিক বলেন, ‘‘দিনের শেষে কাজ থেকে ফিরে আমরা সবাই মিলে রান্না করে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করতাম। অনেকটা পিকনিকের মতো মনে হতো। সুখ-দুঃখের গল্প

করতাম। এক দিনের দুর্ঘটনাতেই সব শেষ হয়ে গেল।’’

মাঝেরহাট সেতুর কাছে মেট্রোর যে অংশে কাজ হচ্ছিল, সেই অংশের এক ঠিকাদার মঙ্গলবার বলেন, ‘‘ফের কবে কাজ শুরু হবে, কেউ বলতে পারছে না। আমরা তো ওঁদের আটকাতে পারি না। তাই অনেকেই বাড়ি ফিরে গিয়েছেন।’’

MAjerhat Majerhat Bridge Flyover Collapse মাঝেরহাট Metro Labour
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy