Advertisement
E-Paper

প্রকাণ্ড সেতুটা ঝুলে রয়েছে ‘ভি’-এর আকারে

বিকেল চারটের ব্যস্ত সময়ে মাঝেরহাট সেতুর এই বিপর্যয় প্রাণ কাড়ল এক জনের। পাশাপাশি নাস্তানাবুদ করে ছাড়ল শহরের জনজীবন।

শিবাজী দে সরকার ও দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:১৭
ভগ্নস্তূপ: মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ার পর। মঙ্গলবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

ভগ্নস্তূপ: মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ার পর। মঙ্গলবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

নীচে বজবজ লাইন ছাড়িয়ে তারাতলার দিক থেকে কয়েক কদম এগোলেই বুকটা কেঁপে উঠবে। শহর কলকাতার দক্ষিণ-পশ্চিমে বেহালার সঙ্গে সংযোগের মূল সেতুটাই প্রকাণ্ড এক ‘ভি’-এর আকারে নীচে ঝুলে রয়েছে। সপ্তাহের কেজো দিন মঙ্গলবার, বিকেল চারটের ব্যস্ত সময়ে মাঝেরহাট সেতুর এই বিপর্যয় প্রাণ কাড়ল এক জনের। পাশাপাশি নাস্তানাবুদ করে ছাড়ল শহরের জনজীবন।

গত পাঁচ দশক ধরে চেতলা, আলিপুরের দিক থেকে বেহালামুখী কলকাতার ‘লাইফলাইন’ মাঝেরহাট ব্রিজ। সেই সেতুর প্রায় ৩০ মিটার অংশ যে কখনও পলকা খেলনার মতো খসে পড়তে পারে, তা বোধহয় দুঃস্বপ্নেও কেউ ভাবেননি। এর আগে ২০১৩-য় উল্টোডাঙার সেতু ইঞ্জিনিয়ারিং কৃৎকৌশলের কিছু ত্রুটিতে ভেঙে পড়ে। আর ২০১৬-য় নির্মীয়মাণ পোস্তা উড়ালপুল দুর্ঘটনা কলকাতার সাম্প্রতিক বিপর্যয়ের ইতিহাসে দগদগে ক্ষত বলে চিহ্নিত।

মাঝেরহাটে সেতুর ভেঙে-পড়া অংশটি প্রধানত বজবজের রেললাইন লাগোয়া খালের উপরে না-পড়ে জনবহুল রাজপথে পড়লে অঘটনের মাত্রা ঢের বেশি হতে পারত। রাত পর্যন্ত পুলিশের হিসেবে মৃতের সংখ্যা এক। তিনি বেহালার শীলপাড়ার বাসিন্দা, বছর তেইশের সৌমেন বাগ। এসএসকেএম হাসপাতালে তাঁকে ‘মৃত’ ঘোষণা করা হয়। তবে সেতুর নীচে জোকা-বিবাদী বাগ মেট্রোর কাজের শ্রমিকদের অস্থায়ী ঘর চাপা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। এ ছাড়া, ১৩ জন আহতকে এসএসকেএম এবং ১৮ জনকে সিএমআরআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এসএসকেএম থেকে ৮ জনকে এবং সিএমআরআই থেকে ৬ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

দেখুন ভিডিয়ো:

পুলিশের দাবি, পাঁচটি চার চাকার গাড়ি, তিনটি মোটরসাইকেল, একটি মিনিবাস সেতু থেকে ধরাশায়ী। দমকল, পুলিশ, কেন্দ্রীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, সেনা মিলে রাত পর্যন্ত সার্চলাইট জ্বেলে ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ চালাচ্ছে। আরও সাহায্য প্রয়োজন কি না জানতে মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। উত্তরবঙ্গ সফররত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন চেষ্টা করেও শহরে ফিরতে পারেননি। আজ, মঙ্গলবার তাঁর ফেরার কথা। নিহতের পরিবারকে পাঁচ লক্ষ, আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য। সেতু রক্ষণাবেক্ষণের দায় রেলের বলে এ দিন দাবি করেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। কিন্তু জানা গিয়েছে, সেই দায়িত্ব ছিল পূর্ত দফতরের হাতে।

আরও পড়ুন: ‘অনেক দিন ধরেই বলছি, সেতুটা কাঁপছে, কেউ কথা শোনেনি’

৪৫০ মিটার লম্বা সেতুটির মেরামতিতে সম্প্রতি হাত দিয়েছিল পূর্ত দফতর। কিন্তু দুই পিলারের মধ্যে সব থেকে বড় ফাঁকের অংশটিই কী ভাবে খসে পড়ল সেটাই বড় রহস্য। জল্পনা চলছে, মেট্রো রেলের কাজের জেরে কম্পনেই সেতুর ক্ষতি হল কি না! যদিও মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ এ দিনই দাবি করেছেন যে, তাঁদের কাজের জন্য দুর্ঘটনা ঘটেনি। বৃষ্টিতে পিলারের ভিত দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনাও প্রশাসন খতিয়ে দেখছে।

আরও পড়ুন: মাঝেরহাট ব্রিজ বন্ধ, এখন কোন পথে যাতায়াত জেনে নিন

এ দিন অঙ্কের স্যারের কাছে পড়তে যাওয়ার সময় বাড়ির গাড়িসুদ্ধ সেতু থেকে পড়ে গিয়েছিল ১৪ বছরের তিভিষা জাসানি। রাতে ফোনে সে কথা বলতে গিয়েও কেঁপে উঠছিল সে। এক চুলের জন্য প্রাণে বাঁচার এই ঘোরটুকুই শেষ কথা বলে গেল।

(শহরের প্রতি মুহূর্তের সেরা বাংলা খবর জানতে পড়ুন আমাদের কলকাতা বিভাগ।)

Majerhat Bridge Collapse Kolkata flyover collapse Majerhat bridge Majerhat মাঝেরহাট
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy