Advertisement
E-Paper

দুর্ভোগ চলবে কত দিন? কয়েক মাস, না কয়েক বছর?

বুধবার সকাল থেকেই যানজটে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে প়়ড়েছিল বেহালা, নিউ আলিপুর, চেতলা, হরিদেবপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা। কর্মরত ট্র্যাফিক পুলিশের কর্মীরা চেষ্টা করেছিলেন বটে, কিন্তু পুরো সামাল দিতে পারলেন না।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায় শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৫৩
থমকে: অতিরিক্ত গাড়ির ভিড়ে স্তব্ধ হয়ে যায় দুর্গাপুর সেতু। বুধবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

থমকে: অতিরিক্ত গাড়ির ভিড়ে স্তব্ধ হয়ে যায় দুর্গাপুর সেতু। বুধবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

দুর্ভোগ শুরু হয়ে গিয়েছিল সেতুভঙ্গের বিকেল থেকেই। এখন প্রশ্ন, দুর্ভোগ চলবে কত দিন? কয়েক মাস, না কি কয়েক বছর? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার যে আশু সম্ভাবনা নেই, তা অবশ্য প্রশাসনিক কর্তা থেকে সাধারণ মানুষ— কারওই অজানা নয়।

বুধবার সকাল থেকেই যানজটে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে প়়ড়েছিল বেহালা, নিউ আলিপুর, চেতলা, হরিদেবপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা। কর্মরত ট্র্যাফিক পুলিশের কর্মীরা চেষ্টা করেছিলেন বটে, কিন্তু পুরো সামাল দিতে পারলেন না। যার ফলে নাকাল হলেন অসংখ্য নিত্যযাত্রী। এক পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘এই যন্ত্রণা তো সবে শুরু। মাঝেরহাট সেতু ফের চালু না হওয়া পর্যন্ত যন্ত্রণা মিটবে না।’’ এবং তা কবে ফের চালু হতে পারে, সে ব্যাপারে আপাতত প্রত্যেকেই অন্ধকারে। ওই পুলিশকর্মীর বক্তব্য, ‘‘সামনেই পুজো। প্রতি বছরই এ সময়ে যানজট বাড়ে। ‘‘এ বার তো গোদের উপরে বিষফোঁড়া হয়ে গেল,’’ বলছেন তিনি।

বেহালা ও বাকি কলকাতার মধ্যে যান চলাচল ঘুরপথে চালাচ্ছে পুলিশ। কিন্তু সেই ঘুরপথে গাড়ি চালিয়েও সমস্যা মেটেনি। বরং সরু রাস্তায় বড় গাড়ি ঢুকে গিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। এ দিন অমিত দাস নামে এক যুবক নির্মীয়মাণ জোকা মেট্রো স্টেশনের সামনে থেকে বাসে উঠেছিলেন। সেই বাস হরিদেবপুর, এম জি রোড দিয়ে টালিগঞ্জে পৌঁছয়।

আরও খবর: এক বছর অবহেলায় আটকে মাঝেরহাটের ৩ কোটির সংস্কার

অমিত বললেন, ‘‘ওই রাস্তায় বাস যেন নড়ছিলই না। টালিগঞ্জে যখন নামলাম, তত ক্ষণে সওয়া ঘণ্টা কেটে গিয়েছে।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, হাইড রোডে বড় বড় গর্ত থাকার ফলে গাড়ি চলাচলে সমস্যা হয়েছে। পুরসভা, কেএমডিএ ও বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে অবিলম্বে ওই রাস্তা সারিয়ে ফেলতে অনুরোধ করা হয়েছে। এ দিন পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানান, সারানোর কাজ শীঘ্রই হবে।

বাসের বদলে টালিগঞ্জমুখী অটোর রুটেও এ দিন ছিল বিরাট লাইন। বড়িশার বাসিন্দা অনিমেষ চক্রবর্তী টালিগঞ্জে আসার জন্য অটো ধরতে গিয়ে দেখেন, সেখানে কয়েকশো লোকের লাইন। দুপুরে তিনি বলছিলেন, ‘‘অফিসে তো চলে এলাম। এ বার বাড়ি ফিরতে গিয়ে কতটা হেনস্থা হতে হবে, কে জানে!’’ বেহালা থেকে সিজিআর রোড ও জাজেস কোর্ট রোডে ট্রাম চলাচল বন্ধ থাকায় ওই রুটের যাত্রীদেরও সমস্যা হয়েছে। মাঝেরহাট ও নিউ আলিপুরের মধ্যে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে প়়ড়েছেন বজবজ থেকে শিয়ালদহের দিকে আসা নিত্যযাত্রীরাও।

পুলিশ সূত্রের খবর, সকাল থেকে দুর্গাপুর ব্রিজ, নলিনীরঞ্জন অ্যাভিনিউ ও টালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে অতিরিক্ত গা়ড়ি ঢুকে পড়ায় যানজট হয়। গাড়ির চাকা প্রায় নড়ছিলই না। যানজটের রেশ ছড়িয়ে পড়ে চেতলাতেও। রাসবিহারী অ্যাভিনিউ থেকে চেতলামুখী গাড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই এলাকা থেকে বেহালা রুটের অটো টালিগঞ্জ সার্কুলার রোড দিয়ে পাঠানো হয়। অভিযোগ, ঘুরপথে যাওয়ার জন্য অটোচালকেরা বেশি ভাড়া দাবি করেন। তা নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বচসাও হয়। যার জেরে কিছু ক্ষণ অটো চলাচল বন্ধ করে দেন চালকেরা। পরে গাড়ির চাপ কমলে রাসবিহারী অ্যাভিনিউ দিয়ে চেতলার দিকে গাড়ি চলাচল শুরু হয়। অটো সমস্যাও মেটে।

এ দিন ডাফরিন রোড দিয়ে যাওয়া বাসগুলিকে আলিপুরের দিকে পাঠানোর বদলে খিদিরপুরের দিকে পাঠায় পুলিশ। হাওড়া থেকে বেহালার মিনিবাসে উঠেছিলেন মিনতি রায়-সহ ভবানী ভবনের কয়েক জন কর্মী। খিদিরপুর মো়ড়ে নেমে হেঁটে ভবানী ভবনে পৌঁছন তাঁরা। সকালে নলিনীরঞ্জন অ্যাভিনিউ দিয়ে একমুখী গাড়ি চালানোয় যানজট বাড়ছিল। পরে সাহাপুর রোড চালু করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা হয়। অনেকেই বলছেন, কিছু বাসকে বন্দর এলাকা দিয়ে ঘুরিয়ে পাঠানো হচ্ছে। তাতে যাত্রাপথের সমস্যা বা়ড়ছে। কিন্তু পুলিশ সূত্রের বক্তব্য, বাসের মতো বড় গাড়ি ওই রাস্তা দিয়েই ঘুরিয়ে পাঠানো উচিত। না হলে যান-যন্ত্রণা আরও বাড়বে।

লালবাজারের খবর, মঙ্গলবার বিকেলে মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ার পরে তড়িঘড়ি ঘুরপথে গাড়ি চালানো শুরু হয়েছিল। পরিকল্পনা করতে গভীর রাতে বৈঠকে বসেন ট্র্যাফিক-কর্তারা। ঘুরপথে বাস চালানোর পাশাপাশি বন্দর এলাকার রাস্তা থেকে পণ্যবাহী গাড়ির পার্কিং সরানো হয়েছে। এ দিন ক’টি গাড়িকে অবশ্য সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। পুলিশের বক্তব্য, সকাল থেকে সরানো শুরু হয়েছে। গাড়িগুলি সরালে তাদের বিকল্প জায়গার বন্দোবস্ত করে দিতে হচ্ছে। তবে সব গাড়িই সরিয়ে দেওয়া হবে।

Majerhat Majerhat Bridge Kolkata Flyover Collapse মাঝেরহাট Traffic
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy