রক্ষা: শিশুপুত্রকে নিয়ে সরিদা বেগম ও পড়শিরা। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
ঘিঞ্জি এলাকায় দোতলা বাড়িতে ৩৬টি পরিবারের বাস। ঘরে মজুত ছিল গ্যাস সিলিন্ডার থেকে শুরু করে ফ্রিজ, এসি— সমস্ত কিছুই। পুরো বাড়ি জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে বৈদ্যুতিক তারের জাল। রবিবার বিকেলে কয়েক ঘণ্টার আগুনে ছাই হয়ে গেল রাজাবাজার সংলগ্ন নারকেলডাঙার ৩/এইচ/২৫, রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রিটের ওই দোতলা বাড়িটি।
দমকল ও পুলিশ সূত্রের খবর, বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ তাদের কাছে আগুন লাগার খবর পৌঁছয়। এলাকাটি জনবসতিপূর্ণ হওয়ায় দমকলের ১০টি ইঞ্জিন গিয়ে প্রাথমিক ভাবে কাজ শুরু করে। পরে পৌঁছয় কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। ঘণ্টা চারেকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সমর্থ হয় দমকল। তবে বাড়িটি পুড়ে গেলেও কেউ হতাহত হননি। প্রাথমিক তদন্তে দমকলের অনুমান, শর্ট সার্কিটের জেরেই আগুন লাগে।
সূত্রের খবর, বাড়ির একটি বন্ধ ঘর থেকে প্রথমে ধোঁয়া বেরোতে দেখে সন্দেহ হয় সেখানকার এক বাসিন্দার। তিনি অন্যদের ডেকে ওই ঘরটির তালা ভাঙতেই গলগলিয়ে বেরিয়ে আসে কালো ধোঁয়া। শুরু হয়ে যায় চিৎকার-চেঁচামেচি। আগুন লাগার খবর মুহূর্তে পৌঁছে যায় আশপাশে। দমকল আসার আগে এলাকাবাসীরাই বাড়ি খালি করা এবং আগুন নেভানোর কাজে হাত লাগান। অভিযোগ, যে ঘরে প্রথমে আগুন লাগে, সেখানে প্রচুর কেরোসিন তেল মজুত ছিল। ফলে নিমেষে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের ঘরগুলিতে। ফাটতে শুরু করে একের পর এক গ্যাস সিলিন্ডার।
দমকল, পুলিশ, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং সিইএসসি যত ক্ষণে ঘটনাস্থলে পৌঁছয়, আগুনের হল্কা দোতলা ছাড়িয়েছে। আগুনের তাপে গরম হয়ে গিয়েছিল পাশের বাড়ির দেওয়ালও। শেষে দমকলকর্মীরা একসঙ্গে চার দিক থেকে জল দিতে শুরু করায় আগুন আশপাশের বাড়িতে আর
ছড়াতে পারেনি।
এ দিন সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পোড়া জিনিসপত্র বার করে আনতে দমকলের সঙ্গে হাত লাগিয়েছেন বাড়ির পুরুষ সদস্যেরা। শিশু ও মহিলারা আশ্রয় নিয়েছেন উল্টো দিকের একটি বাড়িতে। এমনই এক গৃহবধূ সরিদা বেগম। আড়াই বছরের শিশুপুত্রকে নিয়ে তাঁর আপাতত ঠিকানা উল্টো দিকের বাড়ির তিনতলায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ‘নাইট শেল্টার’। আগুন নিভে যাওয়ার পরেও ভয়ে কাঁপছিলেন ওই গৃহবধূ।
পোড়া লহেঙ্গার গাঁটরি নিয়ে হাউহাউ করে কাঁদছিলেন বাড়ির এক বাসিন্দা জাকির হোসেন। বললেন, ‘‘সোমবার লহেঙ্গাগুলি দেওয়ার অর্ডার ছিল। জানি না এখন কী ব্যবস্থা করব! ঘরে টাকাও ছিল কয়েক লক্ষ। সব কিছু পুড়ে ছাই।’’ বৃদ্ধা মা ও স্ত্রী শ্যামা পরভিনকে নিয়ে সংসার জাকিরের। এ দিন ঘরে ছিলেন শুধু জাকিরের মা। স্ত্রী বাপের বাড়িতে। পাশের ঘরে আগুন লেগেছে দেখে বৃদ্ধা কোনও রকমে ঘর ছেড়ে প্রাণে বেঁচেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy