Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

মেয়েদের স্কুলে পুরুষ ব্রাত্য নন, একমত সবাই

গত শুক্রবার কারমেল স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুরুষ শিক্ষক ‘বর্জনের’ দাবি জানিয়েছিলেন বিক্ষোভকারী অভিভাবকদের একাংশ।

জমায়েত: কারমেল স্কুলের সামনে অভিভাবকেরা।—ফাইল চিত্র।

জমায়েত: কারমেল স্কুলের সামনে অভিভাবকেরা।—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৪৫
Share: Save:

মেয়েদের স্কুলে পুরুষ শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের আদৌ রাখা হবে কি না, সে বিষয়ে আলোচনায় বসতে চলেছে ‘অ্যাসোসিয়েশন অব খ্রিস্টান স্কুলস’। সোমবার এ কথা জানিয়েছেন অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মলয় ডি’কোস্টা।

গত শুক্রবার কারমেল স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুরুষ শিক্ষক ‘বর্জনের’ দাবি জানিয়েছিলেন বিক্ষোভকারী অভিভাবকদের একাংশ। এ দিন মলয়বাবু বলেন, ‘‘অ্যাসোসিয়েশনের বোর্ড মিটিংয়ে এ বিষয়ে আলোচনা হবে।’’ তিনি জানান, দু’ধরনের পরিস্থিতিতে মেয়েদের স্কুলে পুরুষ শিক্ষক নিয়োগ ছাড়া উপায় থাকে না। স্কুল কর্তৃপক্ষ অনেক সময়ে চেয়েও মহিলা শিক্ষক পান না। এ ছাড়া, মহিলা শিক্ষকদের কেউ ছুটিতে গেলে পরিবর্ত হিসেবে অনেক সময়ে পুরুষ শিক্ষক নিতে হয়।

গত ডিসেম্বরে রানিকুঠির জি ডি বিড়লা সেন্টার ফর এডুকেশনের ঘটনাতেও অভিভাবকদের একাংশ একই দাবিতে সরব হন। তার যৌক্তিকতা নিয়ে অভিভাবকদেরই অন্য অংশ প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন, শিক্ষকের আবার পুরুষ-মহিলা কী? এ ধরনের বিতর্ক শিক্ষাঙ্গনের অভ্যন্তরে শিক্ষক-পড়ুয়া স্বাভাবিক সম্পর্কের পরিপন্থী বলেই মনে করছেন শিক্ষাবিদদের একাংশ। বালিগঞ্জ শিক্ষা সদনে ১০-১২ জন পুরুষ শিক্ষক রয়েছেন। স্কুলের অধ্যক্ষা সুনীতা সেন বলেন, ‘‘পুরুষ শিক্ষকেরা নিজেরাই বলছেন, ‘স্কুলের সব জায়গায় ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা আছে তো? সেগুলি সব চলছে তো? তা হলে নিরাপদ বোঝ করব!’ আমাদের থেকে ওই শিক্ষকদের মানসিক চাপ অনেক বেশি!’’

বালিগঞ্জ শিক্ষা সদনের মতো একাধিক স্কুল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, গোটা বিতর্কে পুরুষ শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের ‘ভীতি’ কাজ করছে। লা মার্টিনিয়ার ফর গার্লসের সচিব সুপ্রিয় ধর বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে যে তিন জন পুরুষ শিক্ষক আছেন, তাঁরা কোনও উদ্বেগের কথা বলেননি ঠিকই। কিন্তু ভীতি যে একটা রয়েছে, তা বেশ বুঝতে পারি।’’ পরিস্থিতির মোকাবিলায় নিজেদের মতো করে দাওয়াই প্রয়োগ করতে সচেষ্ট হয়েছে স্কুলগুলি। বালিগঞ্জ শিক্ষা সদনের অধ্যক্ষার কথায়, ‘‘শিক্ষকদের সব সময়ে বলি, পড়ুয়াদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখুন! ‘নো টাচ’ নীতি মেনে চলুন। কোনও সমস্যা হলে পুরুষ শিক্ষকেরা বাচ্চাদের সামলাবেন না। মহিলা অ্যাটেন্ড্যান্টদের বলবেন। তাঁরা বিষয়টি দেখবেন। তবে, যে সমাজ পুরুষ-নারীর সমানাধিকারের কথা বলে, সেখানে এ ধরনের ভাবনা না আসাই শ্রেয়। তা হলে পিছিয়ে পড়ব। এই বিতর্ক কাম্য নয়।’’

লা মার্টিনিয়ারের সচিব সুপ্রিয়বাবু বলেন, ‘‘আমার প্রস্তাব, পুরুষ শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী নিয়োগের আগে তাঁদের মনস্তত্ত্ব কেমন, তা জানতে পরীক্ষা নেওয়া হোক। এই কাজের আলাদা সংস্থা রয়েছে। পুরুষ শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী রাখা যাবে না, এই দাবি হাস্যকর। তা হলে কো-এড স্কুলে কী হবে? ছেলেদের স্কুলে মহিলা শিক্ষক থাকবেন না, এমন দাবিও তো উঠতে পারে!’’ মডার্ন হাইস্কুল ফর গার্লসের অধিকর্তা দেবী কর বলেন, ‘‘এ ধরনের দাবি সমর্থন করি না। ছেলেদের স্কুলেও যৌন নির্যাতন হতে পারে। কেন শুধু মেয়েদের স্কুলে পুরুষদের নিশানা করা হচ্ছে? কত বিশ্বস্ত কর্মী আমাদের স্কুলে কত বছর ধরে চাকরি করছেন। তাঁদের সরিয়ে দেব? সকলের সঙ্গে না মিশলে শিক্ষা পরিপূর্ণ হয় না।’’

মেয়েদের স্কুলে পুরুষ শিক্ষক বর্জনের দাবি যে সময়োপযোগী নয়, সে বিষয়ে একমত কমবেশি সব স্কুলই। এ বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করেই অনভিপ্রেত ঘটনা রুখতে নিজেদের ভূমিকার কথা জানিয়েছে যাদবপুর বিদ্যাপীঠ, গার্ডেনরিচ নুটবিহারী গার্লস হাইস্কুল ও সল্টলেকের ভারতীয় বিদ্যাভবনের মতো স্কুলগুলি। যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পরিমল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘প্রার্থনাসভায় বলেছি, তেমন কিছু ঘটলে প্রধান শিক্ষকের নজরে আনতে। কেউ যেন কিছু না লুকোয়।’’ গার্ডেনরিচ নুটবিহারী গার্লস হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সঙ্ঘমিত্রা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এই সপ্তাহেই সচেতনতা বৃদ্ধির কর্মসূচি নিয়েছি।’’ সল্টলেকের ভারতীয় বিদ্যাভবনের অধ্যক্ষা রেখা বৈশ্য বলেন, ‘‘আমাদের কো-এড স্কুলে পুরুষ শিক্ষক তো থাকবেনই। তাঁদের নিয়ে মাঝেমধ্যে বৈঠক করি। তবে যা বলা হচ্ছে, তার কোনও ভিত্তি রয়েছে বলে মনে করি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE