Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

চাকরির নামে ‘প্রতারণা’, ধৃত

তদন্তে নেমে অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াচ্ছিল কলকাতা পুলিশ। চাকরি দেওয়ার নাম করে অন্ধ্রপ্রদেশের তরুণী এইচ চন্দ্রিকার কাছ থেকে ৯ লক্ষ টাকা হাতিয়ে গা ঢাকা দিয়েছিল শহরের এক প্রতারক-দল। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে মোবাইল নম্বর, সর্বত্র ভুয়ো ঠিকানা, ভুয়ো পরিচয় দিয়ে রেখেছিল তারা। ফলে বারবার বিভিন্ন ঠিকানায় হানা দিয়ে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছিল তদন্তকারীদের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৬ ০১:০৮
Share: Save:

তদন্তে নেমে অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াচ্ছিল কলকাতা পুলিশ। চাকরি দেওয়ার নাম করে অন্ধ্রপ্রদেশের তরুণী এইচ চন্দ্রিকার কাছ থেকে ৯ লক্ষ টাকা হাতিয়ে গা ঢাকা দিয়েছিল শহরের এক প্রতারক-দল। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে মোবাইল নম্বর, সর্বত্র ভুয়ো ঠিকানা, ভুয়ো পরিচয় দিয়ে রেখেছিল তারা। ফলে বারবার বিভিন্ন ঠিকানায় হানা দিয়ে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছিল তদন্তকারীদের।

কিন্তু কাল হল অতি লোভ। ৯ লক্ষ টাকা পাওয়ার পরে আরও ২০ হাজার টাকার জন্য পুলিশের পাতা ফাঁদে পা দিল প্রতারকেরা। এক অফিসার জানান, চাকরি পেতে তিনি আরও টাকা দিতে রাজি, এ কথা চন্দ্রিকা জানাতেই নতুন করে দরাদরি শুরু হয়। অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে এসে টাকা দেওয়ার নাম করে প্রতারকদের ধর্মতলায় কার্জন পার্কের কাছে ডাকেন চন্দ্রিকা। পুলিশের দাবি, টাকা নিতে এসেই রবিবার ধরা পড়ে এক প্রতারক। ধৃতের নাম কুশ দাস। বাড়ি মধ্যমগ্রামে। আদালতে তার পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, প্রতারণা চক্রের মূল পাণ্ডা এখনও অধরা। অভিযোগ, একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে চাকরি দেওয়ার নাম করে এই চক্রটি চাকরিপ্রার্থীদের থেকে টাকা নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল। এই চক্রের সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মী-অফিসারেরা যুক্ত থাকার আশঙ্কাও করছে পুলিশ। জানা গিয়েছে, ‘ব্যাঙ্কের চাকরিতে আগ্রহী, যোগাযোগ করুন নিদির্ষ্ট নম্বরে’ — অনলাইনে এই বিজ্ঞাপন দিয়ে বেকারদের আকর্ষণ করত তারা। অন্ধ্রপ্রদেশের কুর্নুলের বাসিন্দা বছর তিরিশের চন্দ্রিকা সেই ফাঁদে পা দেন। মার্চে তিনি কলকাতার হেয়ার স্ট্রিট থানায় এই চক্রের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ করেন।

চন্দ্রিকার দাবি, বিজ্ঞাপন দেখে তিনি ফোন করলে ওই ব্যাঙ্কের পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দেওয়া হবে বলে এক ব্যক্তি তাঁকে জানায়। তিনি আগেই ওই ব্যাঙ্কে চাকরির পরীক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু ফল বেরোনোর আগেই ফোন করে ওই প্রতারক চন্দ্রিকাকে বলে, লিখিত পরীক্ষায় পাশ করা ছাড়াও ইন্টারভিউ ও মেডিক্যাল টেস্টেও পাশ করতে হবে। তার জন্য কয়েক লক্ষ টাকা দিতে হবে।

চন্দ্রিকা পুলিশকে জানান, চাকরির আশায় তিনি মার্চে কলকাতা আসেন। তাঁর দাবি, বিশ্বাস অর্জনের জন্য প্রতারকেরা তাঁকে কয়েক জনের নিয়োগপত্র দেখায়। ওই ব্যাঙ্কের বিভিন্ন শাখায় তাঁকে নিয়েও যাওয়া হয়। ব্যাঙ্কের ‘আধিকারিক’ বলে অনেকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় করায় প্রতারকেরা।

পুলিশের দাবি, এর পরে প্রতারকেরা তাঁর ভুয়ো ইন্টারভিউ এবং ডাক্তারি পরীক্ষা নেয়। চন্দ্রিকার অভিযোগ, দাবি মতো তিন দফায় তিনি ৯ লক্ষ টাকা নিদির্ষ্ট অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়ার পরেই সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় প্রতারকেরা। সুইচড অফ হয়ে যায় সব মোবাইল। পুলিশ জানায়, ব্যাঙ্কের যে সব শাখায় চন্দ্রিকা গিয়েছিলেন, সেখানকার সিসিটিভির ফুটেজও খতিয়ে দেখেন তদন্তকারীরা। তাতে কিছু তথ্য মিললেও অভিযুক্তদের ব্যপারে তেমন সূত্র মেলেনি। হঠাৎই একটি মোবাইল আবার অন হয়। চন্দ্রিকাকে দিয়ে তাতে ফোন করিয়ে বলা হয়, তিনি চাকরির জন্য আরও টাকা দিতেও রাজি। সেই ফাঁদে পা দিয়ে ধরা পড়ে যায় কুশ।

জেরায় কুশ জানায়, তারা বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত বলে প্রচার চালানো হতো। বলা হতো, ব্যাঙ্কের নিয়োগ সংক্রান্ত সব বিষয় দেখভালের দায়িত্ব তাদেরই। অভিযোগ, কুশদের ফাঁদে পা দিয়ে অনেকেই টাকা খুইয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fraud Job arrested
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE