Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Electrocuted

Electrocution: তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎবাহী গুদামের শাটার, মৃত্যু প্রৌঢ়ের

মর্মান্তিক: এই তার লেগে থাকা শাটার স্পর্শ করায় কাশীনাথের মৃত্যু হয় বলে অনুমান। ছবি: সুমন বল্লভ

মর্মান্তিক: এই তার লেগে থাকা শাটার স্পর্শ করায় কাশীনাথের মৃত্যু হয় বলে অনুমান। ছবি: সুমন বল্লভ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২১ ০৭:০৩
Share: Save:

তিনতলা ভগ্নপ্রায় বাড়ির দেওয়াল জুড়ে গজিয়েছে আগাছা। বাড়ির দোতলায় কলকাতা পুরসভার তরফে ‘বিপজ্জনক বাড়ি’ বলে নোটিস টাঙানো হয়েছে আগেই। সেই বাড়িরই একতলায় একটি গুদামের শাটার বন্ধ করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল এক প্রৌঢ়ের। বুধবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে জোড়াবাগান থানা এলাকার দর্পনারায়ণ ঠাকুর স্ট্রিটে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম কাশীনাথ জ্যোতি (৫৬)। তাঁর বাড়ি হাওড়ার আমতায়। কর্মসূত্রে তিনি দর্পনারায়ণ ঠাকুর স্ট্রিটে থাকতেন।

শহরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর বা আহত হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। এ দিন দুপুরেই আলিপুর পুলিশ আদালত চত্বরে ভেজা বিদ্যুতের খুঁটিতে হাত দেওয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছেন দুই আইনজীবী। তাঁদের সরাতে গিয়ে আদালতের আর এক কর্মীও আহত হয়েছেন। এই মরসুমেই কখনও জমা জলে, কখনও বিদ্যুতের তারের হুকিং থেকে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। মে মাসে রাজভবনের সামনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছিল পেশায় ইঞ্জিনিয়ার এক যুবকের। সে ক্ষেত্রে গাফিলতি কার, তা নিয়ে শুরু হয় প্রবল চাপানউতোর। কেন রাস্তায় বিদ্যুতের তার পড়ে ছিল, তা নিয়ে সিইএসসি ও কলকাতা পুরসভা একে অন্যের উপরে দায় চাপাতে শুরু করে। কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন। সিইএসসি-র ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত ১৮ জুন একই দিনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় দু’জনের। পাটুলিতে জমা জলে মাছ ধরতে গিয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়। আর হরিদেবপুরে মোটরবাইক নিয়ে যাওয়ার সময়ে রাস্তায় জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় এক ব্যক্তির।

দর্পনারায়ণ ঠাকুর স্ট্রিটের ক্ষেত্রে অবশ্য জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ঘটনা না ঘটলেও বিপজ্জনক বাড়িতে পুরসভা নোটিস দিয়ে তা খালি করার কথা বললেও সেখানে ব্যবসা চালানোর মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। বুধবার রাতে ওই বাড়িতে গুদামের শাটার নামাতে গিয়ে কাশীনাথের মর্মান্তিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে বাড়ির মালিক দায় এড়াতে পারেন না বলেই মনে করছে পুলিশ। তবে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত বাড়ির মালিককে চিহ্নিত করতে পারেনি জোড়াবাগান থানা। পুলিশ জানিয়েছে, ওই বাড়ির একাধিক শরিক রয়েছেন। পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘তদন্ত চলছে। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়েছে।’’

সিইএসসি-র তরফে জানানো হয়েছে, দুর্ঘটনাস্থলে বেআইনি ভাবে পাশের বাড়ির একটি মিটার থেকে বিদ্যুতের তার টেনে সংযোগ করা হয়েছিল। সেই তারেরই কোনও অংশ শাটারের সঙ্গে লেগে ছিল। বুধবার রাতে ঘটনার খবর পেয়েই মিটারটি সিল করে দেওয়া হয়েছে। মিটারটি যাঁর নামে রয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সিইএসসি। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, বেআইনি বিদ্যুৎ সংযোগের বিরুদ্ধে আগেই ব্যবস্থা নিলে তো এমন দুর্ঘটনা এড়ানো যেত? সিইএসসি-র এক কর্তা বলেন, ‘‘আমাদের প্রায় ৩৪ লক্ষ গ্রাহক রয়েছেন। সব জায়গায় বেআইনি সংযোগের উপরে নজরদারি চালানো অসম্ভব। তবে অভিযোগ পেলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিই।’’

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, গুদামের শাটার নামিয়ে তালা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শাটারটি বুধবার রাতে বন্ধ করতে গিয়ে কোনও ভাবে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন ওই প্রৌঢ়। শাটারটির আশপাশে বিপজ্জনক ভাবে বিদ্যুতের তার ঝুলে থাকতে দেখা গিয়েছে। একেই বাড়িটি ভগ্নপ্রায় দশায় রয়েছে। তার উপরে সেখানে ওয়্যারিং ছাড়াই যত্রতত্র ঝুলছে বিদ্যুতের তার। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ওই তারের কোনও অংশ ছিঁড়ে শাটারের সঙ্গে লেগে থাকায় শাটারটি বিদ্যুৎবাহী হয়ে ছিল। পরে সেটি স্পর্শ করতেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন কাশীনাথ। স্থানীয়েরা জানান, কাশীনাথ ওই গুদামেই দীর্ঘদিন ধরে কাজ করতেন। তিনি পাশের একটি ঘরে থাকতেন। বুধবার রাতে বৃষ্টির জন্য কিছু ক্ষণ গুদামে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Electrocuted
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE