Advertisement
০৪ মে ২০২৪
পাটুলি

পড়ে মৃত্যু প্রৌঢ়ের, অ্যাসিডে জখম বৃদ্ধা

একটি তিন তলা বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু হল এক ব্যক্তির। ওই বাড়িরই নীচের তলা থেকে উদ্ধার করা হয় অ্যাসিডে জখম এক বৃদ্ধাকে। একই বাড়ির দোতলা থেকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয় মৃত ব্যক্তির স্ত্রীকে। বুধবার, পাটুলির ঘটনা। পুলিশের অনুমান, সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক বিবাদের জেরেই এই বিপত্তি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৬ ০০:৫৬
Share: Save:

একটি তিন তলা বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু হল এক ব্যক্তির। ওই বাড়িরই নীচের তলা থেকে উদ্ধার করা হয় অ্যাসিডে জখম এক বৃদ্ধাকে। একই বাড়ির দোতলা থেকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয় মৃত ব্যক্তির স্ত্রীকে। বুধবার, পাটুলির ঘটনা। পুলিশের অনুমান, সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক বিবাদের জেরেই এই বিপত্তি।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম অসিত দে (৫৮)। ন্যাশনাল মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন অ্যাসিডে জখম পঁচাত্তর বছরের বৃদ্ধা শোভনা চক্রবর্তী। অসিতবাবুর স্ত্রী চিত্রা দে (৪৮) অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

পুলিশ জানায়, এ দিন সকালে ওই এলাকার এক ব্যাক্তি ১০০ ডায়ালে ফোন করে খবরটা জানান। এর পরে পাটুলি থানা থেকে পুলিশ যায়।
তার আগেই ওই তিন জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান পরিজনেরা। পুলিশকে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, চিত্রাদেবী অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলেন। অমিতবাবুর বুকে একটি ক্ষত মিললেও তবে দেহে অন্য কোনও আঘাতের চিহ্ন ছিল না। শোভনাদেবীর চোখে অ্যসিডের আঘাতও গুরুতর নয়।

সাতসকালে ওই বাড়ির উপরের ঘর থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখে বাসিন্দারাই দমকলে খবর দেন। একটি ইঞ্জিন আসে। পুলিশ জানায়, দমকলকর্মীরা ঘর থেকে কিছু পোড়া কাপড় পেয়েছেন।

শোভনাদেবীর মেয়ে শ্রীপর্ণা চক্রবর্তী ওই বাড়িতেই থাকেন। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, বাড়িটির মালিক শ্রীপর্ণার মা শোভনাদেবী। শ্রীপর্ণার প্রথম স্বামী কিংশুক সেনগুপ্তর মাসি এবং মেসো হচ্ছেন অসিত দে এবং চিত্রা দে। ছেলে অমিতের সঙ্গে ওই বাড়িতেই থাকতেন তাঁরা। অমিত রাতে শোভনাদেবীর দেখভালও করতেন। ২০১২ সালে কিংশুকের সঙ্গে ডিভোর্স হয় শ্রীপর্ণার। শ্রীপর্ণার অভিযোগ, তার পর থেকে অসিতবাবুদের বাড়ি ছাড়তে বলা হলেও তাঁরা যাচ্ছিলেন না। দিন দুয়েক আগে এই নিয়ে তাঁদের সঙ্গে তুমুল ঝগড়াও হয়। অভিযোগ, তখনই অমিত হুমকি দিয়েছিলেন শ্রীপর্ণাদের সে এমন অবস্থা করে ছাড়বেন তাঁরা এই বাড়ি ভোগ করতে পারবেন না।

শ্রীপর্ণা জানান, সকালে ঘুমের মধ্যেই শুনতে পাই মায়ের চিৎকার— ‘আমার চোখে কে অ্যাসিড ঢেলে দিয়েছে। জ্বলে যাচ্ছে।’ এর পরে আমার কাজের লোক দেখতে পায় মেসো রাস্তায় পড়ে। উপরে উঠে দেখি, মাসির ঘরে কিছু জিনিসপত্র পুড়ে গিয়ে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। তিনি সিঁড়ির সামনে পড়ে রয়েছেন।

শ্রীপর্ণার অভিযোগ, ‘‘ডিভোর্সের পরে কিংশুক তাঁর প্রথম পক্ষের মেয়েকে নিয়ে চলে যাওয়ার পরেও এই বাড়িতে থেকে বাড়ির দখল নেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন অসিত এবং চিত্রা। তাঁরা অমিতের সঙ্গে আমার বিয়ে দেওয়ার জন্য মায়ের উপরে চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। মা তা মানেননি। আমার প্রথম পক্ষের ছেলে আরমানকে দত্তকও নেন মাসি এবং মেসো। অমিত একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করলেও আমরা আর্থিক সাহায্য করতাম। কারণ মেসো কোনও কাজ করতেন না। আমার বর্তমান স্বামী শুভম চক্রবর্তী এবং দ্বিতীয় পক্ষের মেয়েকে নিয়ে এই বাড়িতেই থাকি। অমিতই এই ঘটনার মূল চক্রী।’’

ওই বাড়ির পরিচারিকা মানা অধিকারী বলেন, ‘‘সকালে বাড়িতে ঢোকার সময় দেখি নীচের ঘরে মাসিমা জ্বলে গেলে পুড়ে গেল বলে চিৎকার করছেন। আর মেসো বাইরে পড়ে আছেন।’’ শোভনাদেবীও পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি
ঘুমিয়ে থাকায় কাউকে দেখতে পাননি। পরিচারিকাই তাঁকে জানান, তাঁর চোখে কেউ অ্যাসিড
ঢেলেছে। ওই বাড়ি থেকে অ্যাসিড জাতীয় কিছু তরল উদ্ধার করেছে পুলিশ, যা ফরেন্সিক তদন্তের জন্য পাঠানো হবে।

পাটুলির ওই বাড়িতে সিসিটিভিও রয়েছে। যদিও শ্রীপর্ণা জানান, দিন সাতেক আগে সিসিটিভির তার পুড়ে যায়। কিন্তু কি করে পুড়ে গেল সেই বিষয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি। স্থানীয়দের একাংশ জানান বেশ কিছু দিন ধরে শ্রীপর্ণা বাড়িটি বিক্রির জন্য চেষ্টা করছিলেন। তবে এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি শ্রীপর্ণা।

বুধবার রাতে শ্রীপর্ণাদেবী মায়ের উপরে অ্যাসিড হামলার কথা জানিয়ে পুলিশের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Acid attack
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE