সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন আরজি করের মর্গের কর্মচারী মনোজ। — ফাইল চিত্র।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ থাকাকালীন সেখানকার কর্মীদের উপর কী ভাবে ছড়ি ঘোরাতেন সন্দীপ ঘোষ, সেই সব অভিযোগ প্রকাশ্যে আসছে। এ বার মুখ খুললেন ওই মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের এক গ্রুপ ডি কর্মী। তাঁর অভিযোগ, তিনি একটা সময়ে ওই হাসপাতালের মর্গে কাজ করতেন। কিন্তু ১০ হাজার টাকা করে ‘মাসোহারা’ না দেওয়ার পাশাপাশি সন্দীপের কথা ‘অমান্য’ করায় তাঁকে বদলি হতে হয় অন্যত্র। তাঁর আরও অভিযোগ, হাসপাতালের মর্গে নানাবিধ অনিয়ম হত। চলত ‘তোলাবাজি’ও। সেই সব অনিয়মের সবটাই জানতেন সন্দীপ এবং তাঁর শাগরেদরা।
আরজি করের অ্যানাটমি বিভাগে গ্রুপ ডি স্তরে কাজ করেন মনোজ মল্লিক। এর আগে তিনি ফরেন্সিক বিভাগে ‘মরচুয়ারি ডোম’-এর পদে ছিলেন। শনিবার মনোজ অভিযোগ করেন, ফরেন্সিক বিভাগে থাকাকালীন তাঁর উপর নানা রকম ভাবে চাপ তৈরি করতেন তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ। মনোজের কথায়, ‘‘এক দিন আমাকে ডেকে পাঠিয়ে মর্গেরই অন্য এক কর্মচারীর নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে বলেন সন্দীপ। আমি বলেছিলাম, বিনা কারণে কেন ওঁর নামে লিখিত অভিযোগ করতে যাব! সরাসরি না বলে দিয়েছিলাম। তখন উনি বলেছিলেন, আমাদের কথা শুনলে ভাল, না হলে বদলি করে দেওয়া হবে। চাকরিও যেতে পারে। আমি কিছু জবাব না দিয়েই বেরিয়ে যাই। পরে ইউনিয়নের এক সদস্যকে দিয়ে আমাকে বলানো হয়, পার্টি ফান্ডের জন্য মাসে মাসে ১০ হাজার টাকা করে ডোনেশন দিতে হবে।’’
মনোজের দাবি, তিনি ইউনিয়নের কথায় পাত্তা দেননি। এর কিছু দিন পরেই তাঁর কাছে বদলির নির্দেশ আসে। ফরেন্সিক বিভাগ থেকে তাঁকে অ্যানাটমি বিভাগের ওয়ার্ড-মাস্টার অফিসে বদলি করে দেওয়া হয়। মনোজের দাবি, বদলির নির্দেশ সম্পূর্ণ ভাবেই মৌখিক ছিল। তিনি এখনও কোনও লিখিত নির্দেশ পাননি।
এর পরেও দু’বার সন্দীপের অফিসে ডেকে পাঠানো হয়েছিল বলে মনোজ দাবি করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও সন্দীপ বার বার তাঁকে ডেকে হেনস্থা করেন বলেও অভিযোগ। মনোজের কথায়, ‘‘মর্গে থাকাকালীন কোনও ভুল কাজ করিনি। কোনও দু’নম্বরি করিনি। সাধারণ মানুষ থেকে পুলিশ, সকলকেই সাধ্যমতো সাহায্য করার চেষ্টা করতাম। আমায় নিয়ে কারও কোনও অভিযোগ ছিল না। অথচ ওঁদের কথা শুনিনি বলে বদলি করে দেওয়া হয়েছিল।’’
এ সব ঘটেছে চলতি বছরের গোড়ার দিকে বলেই মনোজের দাবি। এর পর ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতেই বদলি হয়ে যায় তাঁর। সেই থেকে অ্যানাটমি বিভাগেই কাজ করছেন মনোজ। সে সব অভিযোগ নিয়েই এ বার আরজি করের নয়া অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করেছেন মনোজ। দেখা করেছেন উপাধ্যক্ষ তথা মেডিক্যাল সুপারিন্টেন্ডেন্টের সঙ্গেও।
‘ভুল কাজ’ বা ‘দু’নম্বরি’ বলতে মনোজ কী বোঝাতে চাইছেন? তাঁর কথায়, ‘‘সকলেই ভাবেন মর্গে অনেক টাকা লেনদেন হয়। তাই হয়তো আমার কাছে অত টাকা ডোনেশন চাওয়া হয়েছিল।’’ মনোজের অভিযোগ, ‘‘বেআইনি ভাবে টাকা লেনদেন চলত মর্গে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টের নামে টাকা তোলা হত। মৃতের বাড়ির লোককে ডেকে দেহ সেলাই করতে টাকা চাওয়া, টাকা নিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগে দেহ ছেড়ে দেওয়া, আরও নানা কিছুই চলত মর্গে। মদ খাওয়ার জন্যেও টাকা চাইতেন কেউ কেউ।’’ মনোজের মতে, যাঁরা এ সব করতেন, তাঁরা হয়তো বেশি আয় করতেন। কিন্তু তাঁর মতো সাধারণ কর্মচারীর পক্ষে মাসিক ১০ হাজার টাকা দেওয়া সম্ভব ছিল না বলেই মনোজের দাবি। তাঁর কথায়, ‘‘টাকা দিলে নিশ্চিন্তে এ সব অন্যায়ও করতে পারতাম। কিন্তু আমি কোনও ভুল করিনি, আপস করিনি। আর আপস করিনি বলেই বদলি করে দেওয়া হল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy