Advertisement
১০ মে ২০২৪

প্লাস্টিক সরলেও প্লাস্টিকমুক্ত হল না গড়িয়াহাট

গত ১৯ জানুয়ারি গড়িয়াহাট মোড়ের এক বহুতলে আগুন লাগে। তাতে যেমন পুড়ে যায় পাঁচতলা ওই বহুতলের এক দিকের অংশ, তেমনই ভস্মীভূত হয় ১২টি দোকান এবং ৫০টির মতো হকারের ডালা। দমকল ও পুলিশ প্রাথমিক ভাবে আগুন দ্রুত ছড়ানোর পিছনে হকারদের প্লাস্টিক আর বেআইনি ভাবে টানা বিদ্যুতের তারের জঙ্গলকেই দায়ী করে।

ঘেরাটোপ: এখনও প্লাস্টিক খোলেননি গড়িয়াহাটের অনেক হকার। নিজস্ব চিত্র

ঘেরাটোপ: এখনও প্লাস্টিক খোলেননি গড়িয়াহাটের অনেক হকার। নিজস্ব চিত্র

দীক্ষা ভুঁইয়া
শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৪:২৪
Share: Save:

কোথাও প্লাস্টিক গুটিয়ে রাখা। কোথাও তার উপরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে সাদা চাদর। কোথাও আবার কাঠের কাঠামোর উপরে বেআইনি বিদ্যুতের সুইচবোর্ড। অগ্নিকাণ্ডের সম্ভাব্য বিভিন্ন কারণ সম্বল করে গড়িয়াহাট যেন ফিরছে আবার তার পুরনো ছন্দেই।

গত ১৯ জানুয়ারি গড়িয়াহাট মোড়ের এক বহুতলে আগুন লাগে। তাতে যেমন পুড়ে যায় পাঁচতলা ওই বহুতলের এক দিকের অংশ, তেমনই ভস্মীভূত হয় ১২টি দোকান এবং ৫০টির মতো হকারের ডালা। দমকল ও পুলিশ প্রাথমিক ভাবে আগুন দ্রুত ছড়ানোর পিছনে হকারদের প্লাস্টিক আর বেআইনি ভাবে টানা বিদ্যুতের তারের জঙ্গলকেই দায়ী করে। হকারদের যথেচ্ছ প্লাস্টিকের ব্যবহার এবং ফুটপাতে তারের জাল দমকলের কাজে বাধা সৃষ্টি করেছে বলে ঘটনাস্থলেই ওই দিন অভিযোগ করেন দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু। পরের দিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে মেয়র ফিরহাদ হাকিম ঘোষণা করেন, ফুটপাত প্লাস্টিকে মুড়ে ফেলা যাবে না। হকারদের সাহায্য করতে পুরসভার তরফ থেকে স্টিলের স্টল দেওয়া হবে। তবে প্রথমে সেই সব স্টল পাবেন পুড়ে যাওয়া দোকান ও ডালার মালিকেরা।

গোল বেধেছে এখানেই। মেয়রের কথা শুনে প্রাথমিক ভাবে প্লাস্টিক সরিয়ে ফেলেছেন অনেক হকারই। কিন্তু তা তাঁরা যত্ন সহকারে দোকান কিংবা ডালার আশপাশেই রেখে দিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, নতুন স্টিলের স্টল প্রথমে পাবেন গড়িয়াহাটের ওই আগুনে ডালা ও দোকান পুড়ে গিয়েছে যাঁদের, সেই সব হকারেরা। কিন্তু যাঁদের দোকান অক্ষত রয়েছে, তাঁরা প্লাস্টিক খুলে দিয়ে স্টিলের স্টলের জন্য কত দিন বসে থাকবেন? তাঁদের বক্তব্য, এর পরে গরম পড়বে। কালবৈশাখীতে বৃষ্টির সময় মাথার উপরে ছাউনি না থাকলে মালপত্র নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে অগ্নিকাণ্ডের ১১ দিন পরে গড়িয়াহাট মোড় সংলগ্ন অংশে হকারদের দোকানে প্লাস্টিক সরেছে ঠিকই। কিন্তু ওই তল্লাটে বালিগঞ্জ স্টেশনের দিকে ফার্ন রোডের মুখে এখনও অনেক দোকানই প্লাস্টিকে ঢাকা। একই ছবি রাসবিহারীর দিকেও।

সাউথ ক্যালকাটা হকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক গোপাল ঘোষ বলেন, ‘‘প্লাস্টিকের ছাউনি খুলে দিয়েছেন অনেকেই। আপাতত বিকল্প হিসেবে হকারদের বড় ছাতা ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। তবে এটাও ঠিক যে, বৃষ্টির সময় মালপত্র নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় রয়েছে। ফলে স্টল না আসা অবধি প্লাস্টিকের ছাউনির বিকল্প কী হতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করতে দ্রুত বৈঠক ডাকা হয়েছে।’’

গড়িয়াহাট ইন্দিরা হকার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দেবরাজ ঘোষের দাবি, তাঁর অংশের ৯৯ শতাংশ হকারই প্লাস্টিক সরিয়ে ফেলেছেন। তবে তিনি বলেন, ‘‘বড় চৌকো ছাতা প্রয়োজন। তা না হলে বৃষ্টিতে মালপত্র ঢাকা দেওয়া যাবে না। একটি ছাতা প্রস্তুতকারক সংস্থা ওই ধরনের ছাতা তৈরি করে দিতে অন্তত ৪৫ দিন সময় চাইছে। ফলে ছাউনি তৈরি না করলেও হকারেরা রোদে-বৃষ্টিতে মালপত্র বাঁচাতেই প্লাস্টিক সঙ্গে রাখছেন।’’

অন্য দিকে কলকাতা পুরসভা যা জানাচ্ছে, তাতে গড়িয়াহাট এলাকার ভোল বদলাতে আরও কয়েক মাস। বৃহস্পতিবার পুরসভার মেয়র পারিষদ তথা হকার সংক্রান্ত অ্যাপেক্স কমিটির সদস্য দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘আশা করা যাচ্ছে, বর্ষা আসার আগেই স্টিলের স্টল বণ্টন সম্ভব হবে। এই মুহূর্তে আশা করা যায় আবহাওয়ার বিশেষ অবনতি হবে না। তাই হকারদের কোনও প্রয়োজন নেই প্লাস্টিক ব্যবহার করার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gariahat Gariahata Fire Hawker Plastic
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE