অ্যাকাডেমির সামনে সচেতনতার প্রচার। নিজস্ব চিত্র
এ আবার হয় না কি! বাঙালি বিয়ে, কিন্তু রসগোল্লা-দই বাদ?
মাসখানেক আগে মেয়ের বিয়ের সময়ে চোখ কপালে উঠেছিল শ্রেয়া সাহার মা-বাবার! জামাই বাবাজীবন অভিনব কপূর বাঙালি প্রেমিকার সৌজন্যে দিব্যি পাতুরি, মালাইকারি খেতে শিখেছিলেন। বছর তিনেক আগে পশুপ্রেমের তাগিদে ‘মিয়াঁ-বিবি’ মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ছেড়ে দিয়ে ভিগান হয়ে উঠলেন।
গত ডিসেম্বরে দু’জনের বিয়ের মেনুতে সয়াবিনের চাঁপ, কাজুবাদামের দুধের দইবড়া, আর নারকোলের দুধের কুলফিরাই রাজত্ব করেছিল। বিয়ের অনুষ্ঠান ঘি-বর্জিত! নমস্কারিতে রেশমের শাড়ি, চামড়ার জুতোর প্রবেশ নিষেধ। উৎপাদনের সময়ে কোনও পশুর উপরে পরীক্ষা করা হয়নি দেখে তবেই বাছাই করা হয় কনের প্রসাধনীও।
সম্প্রতি কলকাতা সাক্ষী থাকল এমনই ছক-ভাঙা যাপনের। অভিনব-শ্রেয়সী দু’জনেই এখন শহরের বাইরে। তবে ২৬ বছরের মেরিন ইঞ্জিনিয়ার সায়ন মুখোপাধ্যায়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য ইতিহাসের এমএ নন্দিতা দাস বা তপসিয়ার ইন্টিরিয়র ডিজাইনার আলতাফ হুসেনরা— একযোগে পশুদের উপরে নিষ্ঠুরতার প্রতিবাদে পথে নামলেন। অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসের সামনে ছবি, স্লোগানে প্রচার চালালেন তাঁরা।
‘‘মানুষ কি ভেবেছে এটা মগের মুলুক! পশুপাখিরা কি কেনা!’’— রাগী গলায় পিটার সিঙ্গারের ‘অ্যানিমাল লিবারেশন’ বইটার কথা শোনালেন সায়ন। নন্দিতা-আলতাফেরা মুখর, ‘‘গরু-ছাগল পালন ও তাদের খাবারের সংস্থান করতে গিয়ে কী বিপুল কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন প্রমুখ বিষাক্ত গ্যাস উৎপন্ন হয়!
মাংস-দুধ খাওয়া কমলে এ গ্রহের উষ্ণায়নও কমবে।’’
পেশায় স্থপতি, ৬০ বছরের সুব্রত ঘোষ বললেন, ‘‘আমার মনে হয়েছে, পৃথিবীর কাজে লাগার এটাই সহজতম রাস্তা! ’’ গোমাতার পূজারী বা ধর্মীয় কারণে পর্ক বিমুখদের থেকে ভিগানরা যে আলাদা, তা-ও বোঝালেন তিনি।
বছরখানেক আগে দুধ-মাংস ছেড়ে দেন সুব্রতবাবু। তবে উচ্চ রক্তচাপ, সুগার, বেশি ওজনে ‘ভিগান ডায়েট’ অনুসরণ করা খুব সোজা ছিল না। ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ মেনে তিনি এখন ডালে তিসির বীজযোগে প্রোটিন খুঁজছেন কিংবা কাবুলি ছোলার সুজি বা নানা কিসিমের ফল-বাদামের শেক-জুস তৈরির নেশায় মজেছেন। ওজনও খানিকটা কমিয়ে, ঝরঝরে ফুরফুরে সুব্রতবাবু। সল্টলেকের শখের ‘বডিবিল্ডার’ কুন্তল ঘোষ আবার ‘মাস্ল’ গড়তে কাবুলি ছোলা, সয়াবিনের মহিমায় মুখর। তিন বছর আগেও পটাপট ডজনখানেক ডিম বা পৌনে কেজি মাটন খেয়ে ফেলতেন। তাঁর এখন দুনিয়ার নামজাদা ভিগান বডিবিল্ডারদের ডায়েট মুখস্থ।
কলকাতায় ডিম-দুধ বিহীন ভিগান কেক বা বাদামের দুধের গুলাবজামুনও কেউ কেউ তৈরি করছেন। শিলিগুড়ি-দুর্গাপুর থেকেও তাঁরা অর্ডার পাচ্ছেন। কলকাতার ভিগানরা মাসে দু’-একবার ভাগাভাগি করে নারকোলের দুধের পিঠে, নলেনগুড়ের ভিগান মিষ্টি খান। রাতারাতি অভ্যস্ত ডায়েট বদলালে কিছু বেগতিকেরও আশঙ্কা করেন কোনও কোনও ডাক্তারবাবু। তবে পুষ্টিবিশারদ বিপাশা দাসের দাবি, ‘‘কাজুবাদামের দুধের মতো দামি জিনিস ছাড়া অল্প খরচেও ভিগান ডায়েট মেনে প্রোটিন-এনার্জির খোরাক জোগানো যায়।’’
শুধু খাওয়া নয়, ওষুধ বা প্রসাধনী কেনার আগেও পশুপ্রেমীরা কেউ কেউ ‘ক্রুয়েলটি কাটার’ বলে একটি অ্যাপ ব্যবহার করেন। মোড়কের বারকোড স্ক্যান করে যা বলে দেবে, উৎপাদনের সময়ে পরীক্ষায় তা কোনও পশুকে কষ্ট দিয়েছিল কি না! তবে কিছু ওষুধে পশুজাত উপাদানের ব্যবহার অনিবার্য। তাই ১০০ ভাগ খাঁটি ভিগান হওয়া নিয়ে ভিগানদেরই কারও কারও সন্দেহ আছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy