Advertisement
E-Paper

অল্প গতির ঝড়েই শহর জুড়ে ভেঙে পড়ল গাছ

মাত্র ঘণ্টায় ৪৫ কিলেমিটার বেগের ঝড়। তাতেই গোড়া থেকে উপড়ে গেল এক ডজন গাছ!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:২৮
সমূলে : ঝড়ে সল্টলেকের জিডি আইল্যান্ডে উপড়ে পড়েছে গাছ। সোমবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক,

সমূলে : ঝড়ে সল্টলেকের জিডি আইল্যান্ডে উপড়ে পড়েছে গাছ। সোমবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক,

মাত্র ঘণ্টায় ৪৫ কিলেমিটার বেগের ঝড়। তাতেই গোড়া থেকে উপড়ে গেল এক ডজন গাছ!

কী গাছ যে এই ঝড়েই উপড়ে গেল? কলকাতা পুরসভা জানাচ্ছে, যে সব গাছ রবিবার রাতে গোড়া থেকে উপড়ে গিয়েছে সেগুলি মূলত কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া এবং কদম। সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ে উপড়ে যায় একটি কৃষ্ণচূড়া গাছ। ওই পথেই নজরুল মঞ্চে যাওয়ার কথা ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বছর দশেক আগে ঘূর্ণিঝড় আয়লায় শহরের যে চেহারা হয়েছিল, সোমবার সকালে শহরের অবস্থা ছিল অনেকটা সে রকমই। দক্ষিণে গাছ বেশি। তাই ভোগান্তি সেখানেই বেশি হয়েছে বলে জানাচ্ছে পুরসভা।

এক ডজন গাছ উপড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ৩০টি গাছের ডাল ভেঙে পড়েছে রাস্তায়। তাতে শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরিয়ে দিতে হয়েছে গাড়ি। যানজটের কবলে পড়েছেন মানুষ। গাছের ডাল পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশ কয়েকটি গাড়িও। তবে কোনও হতাহতের খবর নেই পুলিশের কাছে।

পুরসভা জানাচ্ছে, যে সব গাছ এ দিন উপড়ে গিয়েছে, সেগুলি ১০-১২ বছরের পুরনো। পাম, বাবলা, রুদ্রপলাশ, কদম এবং তুলো গাছের ডাল ভেঙেছে। মেয়র পারিষদ (পার্ক ও উদ্যান) দেবাশিস কুমারের ব্যাখ্যা, ‘‘কৃষ্ণচূড়া জাতীয় গাছের মূল মাটির নীচে বেশি দূর যেতে পারে না। সেগুলিই বেশি।’’ তা হলে ওই জাতীয় গাছ শহরে লাগানো হয় কেন? দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘আগে যা হওয়ার, তা হয়েছে। ২০১১ সালের পরে উদ্ভিদবিদদের পরামর্শ মতো কৃষ্ণচূড়া আর লাগানো হয় না।’’

দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘আমরা ক্ষমতায় আসার পরে শহরে গাছ লাগানো এবং গাছের পরিচর্যা করার জন্য উদ্ভিদবিদ নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁদের পরামর্শ মেনেই এখন কাজ করা হচ্ছে।’’ কিন্তু বিপদ জেনে ওই সব কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া গাছ অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে না কেন, উঠেছে সেই প্রশ্ন।

দক্ষিণ কলকাতার সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ে উপড়ে পড়েছে গাছ। সোমবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক উদ্ভিদবিজ্ঞানী বলেন, শহরে হাওয়া চলাচলের রাস্তা নেই। বাতাস বড়বড় বাড়ির গায়ে দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসে। সেই ধাক্কা এসে লাগে গাছের গায়ে। ফলে ঝড়ের প্রভাব হয় দ্বিগুণ। এলোপাথাড়ি ভাবে গাছের গায়ে ধাক্কা মারে প্রবল গতিবেগের বাতাস। বিষয়টি পুর প্রশাসনকে নজরে রাখতে বলেছেন ওই বিজ্ঞানী। সেই সঙ্গে গাছের ডাল ছাঁটার বিষয়টিও আরও বৈজ্ঞানিক ভাবে করা উচিত বলে মনে করছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘ডালপালা ছাঁটার সময়ে কোনটা কাটতে হবে, কোনটা রাখতে হবে, তা নিয়ম মেনে করা হয় না। গাছের গঠনগত ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়।’’ এ ব্যাপারে পুরকর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

কলকাতা পুরসভার উদ্ভিদবিদ অভীক মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘কৃষ্ণচূড়া, কদম জাতীয় গাছের শাখা দ্রুত বেরোয় বলে আগে তা লাগানো হত। ওই ধরনের গাছ লম্বা হত অনেকটা, তুলনায় শিকড় কম। তাই ঝড়ে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি।’’

তিনি জানান, এখন শহরে জারুল, বকুল, আম, কাঁঠাল জাতীয় গাছ লাগানোর উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। তা শিকড় অনেকটাই গভীরে যাওয়ায় গাছকে শক্ত করে ধরে রাখতে পারে। আবাসনের ধাক্কায় ফুটপাত ছোট হয়ে যাওয়াও গাছের পক্ষে বিপদের কারণ বলে মনে করেন তিনি।

Weather Storm Tree Cyclone Aila
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy