Advertisement
E-Paper

নিমেষে ছাই তিলে তিলে সাজানো বিয়ের আয়োজন

এ দিন খবর পেয়ে বড়বাজার থেকে দমকলের একটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে এসে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। পরে দমকলের আরও ১৯টি ইঞ্জিন প্রায় দু’ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

মেহবুব কাদের চৌধুরী ও সুমন বল্লভ

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৮ ০১:৪১
লেলিহান: আর্মেনিয়ান ঘাটের কাছে রাসায়নিকের কারখানায় আগুন । ছবি: সুমন বল্লভ

লেলিহান: আর্মেনিয়ান ঘাটের কাছে রাসায়নিকের কারখানায় আগুন । ছবি: সুমন বল্লভ

একসঙ্গে দুই মেয়ের বিয়ে দেবেন বলে কষ্ট করে টাকা জমিয়েছিলেন ময়নাবিবি। আজ, শুক্রবার হওয়ার কথা গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। রবিবার ছিল বিয়ে। তার তিন দিন আগে, বৃহস্পতিবার আগুনের গ্রাসে চলে গেল সব প্রস্তুতি।

পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন দুপুর বারোটা নাগাদ আর্মেনিয়ান ঘাটের পাশে চক্ররেলের লাইন লাগোয়া গুদামে প্রথমে আগুন লাগে। ওই গুদামে প্রচুর রাসায়নিক ভর্তি ড্রাম মজুত থাকায় একের পর এক বিস্ফোরণ হতে থাকে। গঙ্গার পাশে হাওয়ার জেরে আগুন নিমেষে ছড়াতে থাকে। গুদামের ভয়াল আগুন কিছুক্ষণেই পাশের ঝুপড়িতেও ছড়ায়। সেই ঝুপড়িরই একটি ঘরে চলছিল সেই বিয়ের প্রস্তুতি।

স্বামী মারা গিয়েছেন বছর কয়েক আগে। আর্মেনিয়ান ঘাটের এই ঝুপড়িতেই যমজ মেয়ে কল্পনা ও জ্যোৎস্নাকে নিয়ে ময়নার সংসার। স্থানীয় দুই যুবকের সঙ্গে তাঁদের বিয়ে ঠিক করেছিলেন মাস খানেক আগে। কাগজ কুড়িয়ে উপার্জনের টাকা থেকে দুই মেয়ের জন্য শখ করে দু’টি সোনার আংটি ও দু’জে়াড়া কানের দুল কিনে রেখেছিলেন। তিলে তিলে জমিয়েছিলেন ৭০ হাজার টাকাও।

এ দিন খবর পেয়ে বড়বাজার থেকে দমকলের একটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে এসে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। পরে দমকলের আরও ১৯টি ইঞ্জিন প্রায় দু’ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ দিনের আগুনের জেরে চক্ররেলের লাইন লাগেয়া প্রায় ৩০টি ঝুপড়ি পুড়ে যায়। আগুনের ফলে স্ট্র্যান্ড রোডে দীর্ঘক্ষণ যানজট হয়। দুপুর বারোটার পরে বিকেল পর্যন্ত চক্ররেল পরিষেবা বন্ধ থাকে। এ দিন দুপুরে লাগা সেই আগুন যতক্ষণে নিভল, তখন তিরিশটি ঝুপড়ি ঘরের সঙ্গেই ছাই হয়ে গিয়েছে সে সব। অতি যত্নে গোছানো সে সব জিনিস চোখের সামনেই একটু একটু করে পুড়ে যেতে দেখেছেন ময়নাবিবি ও তাঁর মেয়েরা। বিয়ে আপাতত স্থগিত। পরেও যে কী ভাবে বিয়ে দেবেন, ভেবেই কূল পাচ্ছেন না মা।

প্রাণভয়ে: চোখের সামনে জ্বলে যাচ্ছে বাড়িঘর। আগুন থেকে বাঁচতে অসহায় দৌড়। বৃহস্পতিবার, আর্মেনিয়ান ঘাটে। ছবি: সুমন বল্লভ

পোড়া কাঠামোর দিকে শূন্য দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে তখন কল্পনা ও জ্যোৎস্না। প্রথমে আর্তনাদ, পরে কান্নায় ভেঙে পড়েন ময়না। ময়নাবিবির কথায়, ‘‘গরিবের সংসার। কাগজ কুড়িয়ে একটু একটু করে টাকা জমিয়েছিলাম। এক দিনে সব শেষ হয়ে গেল। যে বাক্সেটাকা-গয়না ছিল, সেটা একেবারেই পুড়ে গিয়েছে। জানি না আবার কবে সব আয়োজন করতে পারব।’’ সে সময়ে বাড়িতে কেউ ছিলেন না। দুই বোনের আফশোস, তখন থাকলে হয়তো কিছু বাঁচানো যেত। কিন্তু খবর পেয়ে আসতে আসতেই সব শেষ।

আরও পড়ুন: কালিন্দী বাজারে আবার আগুন, সন্দেহ ষড়যন্ত্রের

মাথার ছাদটা উড়ে যাওয়ায় আবার কবে মেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থা করতে পারবেন, তা নিয়েই সংশয়ে এখন মা ময়না। সন্ধ্যায় আমের্নিয়ান ঘাটের ধারে বসে বড় মেয়ে জ্যোত্স্নার হবু স্বামী রাজু শেখের মা রাণু বেগম জানান, পুড়ে গিয়েছে তাঁদেরও ঘর। বিয়ের জন্য রাখা টাকা, শাড়ির অবশিষ্ট নেই কিছুই। তবে যে করেই হোক, ছেলের বিয়ে দেবেনই মা। ময়নাবিবির ছোট মেয়ে কল্পনার হবু শ্বশুরমশাই রবিউল শেখও গলা মেলালেন তাতে। তিনি বললেন, ‘‘আমাদেরও ঘর পুড়ে গিয়েছে। জিনিসপত্র আরও কিছুই নেই। তাই বলে কি বিয়ে আটকাবে নাকি! কটা দিন পিছিয়ে দেওয়া হল আপাতত।’’

যাঁদের ঘর পুড়ে গিয়েছে, তাঁদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থায় ব্যস্ত ছিলেন স্থানীয় কাউন্সিলর সন্তোষ পাঠক। এ দিন সন্ধ্যায় সেই কাজের ফাঁকেই তিনি আশ্বাস দেন, এই বিপর্যয়ের জন্য যাতে মেয়েদের বিয়ে আটকে না যায়, সে দিকে খেয়াল রাখবেন তিনি।

fire Armenian Ferry Ghat Marriage Chemical Godown
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy