Advertisement
E-Paper

নজর ছিল না শব্দদানবে, বর্ষশেষে তাই ভুগল শহর

নতুন বছর শুরু হল কি না, সেটা বোঝার জন্য শনিবার মাঝরাতে ঘড়ি দেখার দরকার ছিল না। চকলেট বোমা আর শেল ফাটার বিকট আওয়াজ শুনেই বোঝা যাচ্ছিল, ২০১৭ চলে এসেছে।

সুরবেক বিশ্বাস, অভীক বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:১৪
ডিজে বাজিয়ে উদ্দাম নাচ। রবিবার, বারাসতে। — সুদীপ ঘোষ

ডিজে বাজিয়ে উদ্দাম নাচ। রবিবার, বারাসতে। — সুদীপ ঘোষ

নতুন বছর শুরু হল কি না, সেটা বোঝার জন্য শনিবার মাঝরাতে ঘড়ি দেখার দরকার ছিল না। চকলেট বোমা আর শেল ফাটার বিকট আওয়াজ শুনেই বোঝা যাচ্ছিল, ২০১৭ চলে এসেছে। এমন শব্দবাজির তাণ্ডব বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু এলাকায় নয়, মোটের উপরে সিঁথি থেকে সোনারপুর— প্রায় সর্বত্রই ছিল। নতুন বছরকে শব্দ দিয়ে স্বাগত জানাতে হবে— এমনই মনোভাব ছিল শহর ও লাগোয়া এলাকার বহু মানুষের।

প্রকাশ্যে সলতেতে আগুন দিয়ে চকলেট বোমা ছোড়া হয়েছে, চলন্ত গাড়ির নীচেও শব্দবাজি ফেটেছে। একই সঙ্গে চলেছে ডিজে-র তাণ্ডব, মাইকের উপদ্রব রাত ১২টার পরেও। বড় রাস্তা আটকে ডিজে বাজিয়ে নাচানাচিতে বহু জায়গায় গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে।

আর তার পরে লালবাজারের উপলব্ধি, শুধু কালীপুজো-দীপাবলি-ছটপুজো নয়, প্রাক নববর্ষ রাতেও শব্দাসুরকে দমন করার কথা এ বার আগে থেকে ভাবতে হবে। কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষকর্তার কথায়, ‘‘আমাদের কাজের পরিধি ক্রমশ বাড়ছে। এ বার ৩১ ডিসেম্বর রাতে শব্দদূষণ ঠেকানোর ব্যবস্থাও আগে থেকে করতে হবে।’’

এমনিতে বর্ষশেষের রাতে পুলিশ মূলত বেপরোয়া গাড়ি ও মোটরসাইকেল চালানো, মত্ত অবস্থায় গাড়ি ও মোটরবাইক চালানো এবং অশ্লীল আচরণ ও মাতলামি রোখায় অগ্রাধিকার দেয়। শব্দদূষণ প্রতিরোধে কার্যত গুরুত্বই দেওয়া হয় না। লালবাজারের দেওয়া তথ্যও একই ইঙ্গিত করছে।

শনিবার রাতে অভব্য আচরণ, হেলমেটহীন অবস্থায় মোটরবাইক চালানো ও চড়া, বেপরোয়া ভাবে গাড়ি ও মোট বাইক চালানোর অভিযোগে ধরপাকড় হয়েছে যথেষ্ট। কিন্তু শব্দবাজি ফাটানোর অভিযোগে কেউ গ্রেফতার হয়নি, শব্দবাজি আটকও হয়নি।

আসলে পুলিশের এ দিকটায় নজরই ছিল না। পুলিশের একটা বড় অংশ জানেন, শব্দবাজি নিয়ে মাথা ঘামাতে হয় শুধু কালীপুজো-দেওয়ালি, বড়জোর ছটপুজোর সময়ে। আবার শব্দবাজির বিরুদ্ধে কালীপুজো ছাড়া অন্য সময়ে প্রচারও হয় না। সাধারণ মানুষের অনেকেই সংশয়ে থাকেন, অভিযোগ জানালে পুলিশের সাহায্য আদৌ মিলবে কি না। শনিবার লালবাজার কন্ট্রোল
রুম শব্দবাজি নিয়ে খান তিনেক অভিযোগ পেয়েছে।

অথচ এ বার কালীপুজোর মুখে, পরিবেশমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় শেষ মুহূর্তে শব্দবাজির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ায় পুলিশ নড়েচড়ে বসেছিল, কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছিল শব্দদৈত্যকে। এক শ্রেণির মানুষ শব্দবাজি ব্যবহার থেকে পিছু হটেননি ঠিকই, কিন্তু আশপাশ দেখে, পাড়ায় পুলিশের অনুপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরেই তাঁরা পটকা ফাটিয়েছেন। তাঁদেরই অনেকের
কাছে কালীপুজোর সময়ে ব্যবহার
করতে না পারা বোমা-পটকা থেকে গিয়েছিল। শনিবার রাতে সে সবের সদ্ব্যবহার হয়েছে পুরো মাত্রায়। কালীপুজোর মতো পুলিশি টহলদারি ছিল না বলে।

পরিবেশকর্মী নব দত্ত বলেন, ‘‘শব্দবাজি রোখার কাজটা এখন কোনও মরসুমি ব্যাপার নয়। এটা বছরভর চালিয়ে যেতে হবে।’’ তবে পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য আইন আধিকারিক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘অতীতে পুলিশ ৩১ ডিসেম্বর রাতে শব্দবাজি আটক করেছে, লোকজনকে গ্রেফতার করেছে। এখন হঠাৎ এই নিষ্ক্রিয়তা কেন? তখন তো রাত ১০টার পরে হওয়া জলসা পুলিশই বন্ধ করে দিয়েছে, মাইক বাজেয়াপ্ত করেছে।’’ শনিবার রাতে লালবাজার কন্ট্রোল রুমে মাইক ও ডিজে নিয়ে ২৫টি অভিযোগ যায় বিভিন্ন তল্লাট থেকে। কোথাও কেউ ধরা পড়েনি।

Sound Pollution Kolkata Year End Celebration
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy