Advertisement
E-Paper

ছাত্রীকে তৃণমূল করতে চাপ! মেডিক্যালে ডিন বদল, কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ চার অধ্যাপককে

অপসারণ করা হয়েছে ডিন মানব নন্দীকে। তাঁর জায়গায় ওই পদে নিয়োগ করা হয়েছে অধ্যাপক অরূপ চক্রবর্তীকে। আন্দোলনকারীদের দাবি, কলেজ কাউন্সিলের বৈঠকে মানব মেনে নিয়েছেন নিজের ‘ভুল’-এর কথা।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২৪ ১৯:৪১

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

আরজি কর-কাণ্ডের আবহে এ বার নতুন অভিযোগে শোরগোল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। সেখানকার এক ডাক্তারি ছাত্রীর দাবি, রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য তাঁকে ‘চাপ’ দেওয়া হয়েছিল। তাঁর অভিযোগের আঙুল মেডিক্যাল কলেজেরই চার অধ্যাপকের দিকে। ওই তরুণীর আরও অভিযোগ, অভিযুক্ত চার অধ্যাপককে ‘আড়াল’ করার চেষ্টা করেছেন খোদ ডিন। ছাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে সরানো হয়েছে মেডিক্যাল কলেজের ডিনকে। সেই সঙ্গে কর্তৃপক্ষ যত ক্ষণ না পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তত ক্ষণ ওই চার চিকিৎসককে পঠনপাঠন বা পড়ুয়া সংক্রান্ত কাজ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে বলে দাবি পড়ুয়াদের একাংশের।

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে চাপ, হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন সেখানকার পড়ুয়া এবং প্রাক্তন পড়ুয়াদের একাংশ। তাঁর বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছেন হাসপাতালের প্রাক্তন অতিরিক্ত সুপার আখতার আলিও। এ বার অভিযোগ উঠল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজেও।

সমস্যার সূত্রপাত গত জুন মাসে। অভিযোগ, এক ডাক্তারি ছাত্রীকে হুমকি দেন কলেজেরই চার অধ্যাপক। ওই ছাত্রীর দাবি, তাঁকে বলা হয়েছিল কলেজে ‘সুস্থ ভাবে’ থাকতে হলে তৃণমূল করতে হবে। না-করলে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হবে। এমনকি, তাঁকে পরীক্ষায় অকৃতকার্য করানো (সাপ্লি)-র হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ওই ছাত্রীর আরও দাবি, তাঁকে বলা হয়েছিল তৃণমূল করলে তিনি সুবিধা পাবেন। আন্দোলনকারী তথা ইন্টার্ন চিকিৎসক প্রভাত পাটোয়ারি দাবি করেছেন, অভিযোগকারী ছাত্রী হস্টেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস)। হস্টেলে থাকার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হচ্ছিল তাঁর। সেই সমস্যার কথা তিনি হস্টেলের সুপারকে জানাতে গিয়েছিলেন। তখনই ওই অধ্যাপিকা (সুপার) তাঁকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য ‘চাপ’ দিতে থাকেন। ওই ছাত্রী রাজি না-হওয়ায় তাঁকে অন্য এক অধ্যাপকের কাছে পাঠিয়ে দেন হস্টেলের সুপার। অভিযোগকারীর দাবি, ওই অধ্যাপকও হুমকি দেন। তাঁকে লিখিত ভাবে ক্ষমা চাইতেও বলেন তিনি। প্রভাতের দাবি, ছাত্রীর বাবা একটি সরকারি হাসপাতালের কর্মী। তাঁকেও হুমকি দেওয়া হয়। মেয়ে অভিযোগ তুলে না নিলে তাঁকে বদলি করে দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন অভিযুক্তেরা।

এর পরেই বিষয়টি জানিয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষকে লিখিত ভাবে অভিযোগ করেন ডাক্তারির ওই ছাত্রী। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে কমিটি গঠন করেছিলেন অধ্যক্ষ। পড়ুয়াদের দাবি, সেই কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছে শুক্রবার। সেই রিপোর্টে চার অধ্যাপক, যাঁদের বিরুদ্ধে ছাত্রী অভিযোগ করেছিলেন, তাঁদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। সেই রিপোর্ট নিয়ে কলেজ কাউন্সিলের বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, রিপোর্টের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। কর্তৃপক্ষ যত দিন অভিযুক্ত চার অধ্যাপককে শাস্তি না দিচ্ছেন, তত দিন তাঁদের পঠনপাঠন সংক্রান্ত কাজ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। অপসারণ করা হয়েছে ডিন মানব নন্দীকে। তাঁর জায়গায় ওই পদে নিয়োগ করা হয়েছে অধ্যাপক অরূপ চক্রবর্তীকে।

কেন ডিনকে অপসারণ? প্রভাত জানিয়েছেন, ওই ছাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে চার অধ্যাপকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। সেই সময় কলেজ কাউন্সিল জানিয়েছিল, যত দিন তদন্ত চলছে, তত দিন অভিযুক্ত চার জনকে কোনও প্রশাসনিক পদে রাখা যাবে না। পড়ুয়াদের একাংশের অভিযোগ, সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ওই চার জনকে প্রশাসনিক পদ থেকে সরিয়ে অন্য পদে নিয়োগ করেছিলেন তৎকালীন ডিন। শুক্রবার নতুন ছাত্রছাত্রীদের মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়া যখন চলছিল, সেই সময়েও সক্রিয় ছিলেন এক অভিযুক্ত। এ সব নিয়ে কলেজ কাউন্সিলে অভিযোগ করেন পড়ুয়াদের একাংশ। প্রভাতের দাবি, কলেজ কাউন্সিলের বৈঠকে মানব মেনে নিয়েছেন নিজের ‘ভুল’-এর কথা। তিনি জানিয়েছেন, অভিযুক্ত চার জনকে যাতে প্রশাসনিক পদে নিয়োগ করা হয়, সে জন্য তাঁর উপরেও ‘চাপ’ ছিল। এর পরেই শনিবারের বৈঠকে কলেজ কাউন্সিল ডিনের পদ থেকে মানবকে সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

Calcutta Medical College Hospital RG Kar Medical College and Hospital Incident TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy