Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Birds

সরোবরে ফিরছে বহু পাখি, বাজির ভয়ে কি পালাবে

সরোবর কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, এখনও পর্যন্ত সরোবর চত্বরে নথিভুক্ত হয়েছে ১১৬টি প্রজাতির পাখি।

একঝাঁক: রবীন্দ্র সরোবরে সোনাজঙ্ঘার দল।

একঝাঁক: রবীন্দ্র সরোবরে সোনাজঙ্ঘার দল।

কৌশিক ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২০ ০৩:০৫
Share: Save:

বছর চারেক আগে রবীন্দ্র সরোবরে বাসা বেঁধেছিল বেশ কিছু পাখি। তার মধ্যে বেশি ছিল পেন্টেড স্টর্ক বা সোনাজঙ্ঘা। কিন্তু সে বার কালীপুজো এবং ছটপুজোর পরেই ওরা চলে গিয়েছিল। এর পর থেকে আর সরোবরে দেখা যায়নি ওদের। সরোবরের ক্রমবর্ধমান দূষণই এর মূল কারণ বলে মনে করেন পরিবেশকর্মীরা।

তবে আশার কথা যে চলতি বছরে ওরা ফের ফিরতে শুরু করেছে। গত সপ্তাহে সরোবরের ন’টি জায়গায় ওদের বাসা বাঁধতে দেখা গিয়েছে বলে সরোবর সূত্রের খবর। কিন্তু ছটপুজো হলে বা দীপাবলির বাজির শব্দে তারা ফের চলে যাবে, এমনই আশঙ্কা করছেন পরিবেশকর্মীরা।

চলতি বছরে রবীন্দ্র সরোবরে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আসতে দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছে রাজ্য বন দফতর। রাজ্যের মুখ্য বনপাল (কনজ়ারভেশন অ্যান্ড এক্সটেনশন) রাজু দাস বলেন, “বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যৌথ ভাবে রাজ্য বন দফতর যে সমীক্ষা করেছে তাতে দেখা গিয়েছে, রবীন্দ্র সরোবর-সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় চলতি বছর পরিযায়ী পাখির সংখ্যা বেড়েছে। দীর্ঘ লকডাউনে দেশ জুড়ে গাড়ি কম চলা ও কলকারখানা বন্ধ থাকা পরিবেশ ও শব্দদূষণ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ।”

আরও পড়ুন: দরজায় তালা, ঘরে জীবন্ত দগ্ধ প্রৌঢ়া​

আরও পড়ুন: হাসপাতাল জানে ‘নিখোঁজ’, সন্ধান ওয়ার্ডেই​

‘বার্ড ওয়াচার্স সোসাইটি’-র সম্পাদক সুজন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সোনাজঙ্ঘা পরিযায়ী নয় ঠিকই, তবে রবীন্দ্র সরোবরে সচরাচর ওরা বাসা বাঁধে না। ২০১৬ সালে শীতের শুরুর দিকে এদের বাসা বাঁধতে দেখা গিয়েছিল। ছট এবং কালীপুজোর পরে সেই যে ওরা সরোবর ছেড়েছিল, আর এ মুখো হয়নি। অনেক দিন পরে আবার সোনাজঙ্ঘার দেখা মিলেছে।”

পক্ষীপ্রেমী সুদীপ ঘোষ বলছেন, “এ বছর সরোবরে দেখা গিয়েছে রাশিয়া থেকে আসা টাইগা ফ্লাইক্যাচার।” সুজনবাবু জানান, এর পাশাপাশি আরও কিছু পরিযায়ী পাখি রবীন্দ্র সরোবরে আসছে। যার মধ্যে রয়েছে হিমালয় অঞ্চলের গ্রে-ব্যাকড শ্রাইক, রাশিয়ার পেরেগ্রিন ফ্যালকন, মায়ানমার ও তার সংলগ্ন অঞ্চলের হুডেড পিটা, লাদাখের কমন টার্ন ও হিমালয়ের লার্জ হক কুক্কু।

সরোবর কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, এখনও পর্যন্ত সরোবর চত্বরে নথিভুক্ত হয়েছে ১১৬টি প্রজাতির পাখি। তার মধ্যে ৪১টি প্রজাতিকে সারা বছরই সরোবরে দেখা যায়। পরিবেশকর্মী সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কালীপুজোর বাজি তো আছেই। সেই সঙ্গে সরোবর চত্বরে ছটপুজো হলে তার বাজি ও যজ্ঞের ধোঁয়ায় বেশির ভাগ পাখিই ভয়ে পালিয়ে যায়। এ বার কী হবে জানি না।”

জুলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী রাধেশ্যাম মৃধা বলছেন, “পরিযায়ী পাখিরা মূলত জুলাই থেকে আসতে শুরু করে। তবে পরিবেশ দূষিত বুঝলে, ওরা দিক পরিবর্তন করে ফেলে। এই দূষণ বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী, যারা আগে রবীন্দ্র সরোবরে আসত তারা আর আসে না। এ বার লকডাউনে পরিবেশ দূষণ কমে যাওয়ায় আবার পরিযায়ী পাখিরা আসতে শুরু করেছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE