Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সব্জির দাম কমাতে দরাদরির নিদান মন্ত্রীর

মন্ত্রী নিদান দিয়েছেন, ক্রেতারা একটু তৎপর হয়ে ও দরাদরি করে সব্জি কিনুন। ন্যায্য দাম দিয়েই তাঁরা যেন বাজার করেন! কিন্তু ন্যায্য দাম কী, সে সম্পর্কে সরকারের তরফে কোনও দিশা নেই।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

দেবাশিস দাস
শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৪৩
Share: Save:

মন্ত্রী নিদান দিয়েছেন, ক্রেতারা একটু তৎপর হয়ে ও দরাদরি করে সব্জি কিনুন। ন্যায্য দাম দিয়েই তাঁরা যেন বাজার করেন! কিন্তু ন্যায্য দাম কী, সে সম্পর্কে সরকারের তরফে কোনও দিশা নেই। শহরের কোনও বাজারে ন্যায্য মূল্যের কোনও তালিকা টাঙাতে পারেনি সরকার। সরকারি তরফে শুধু জানানো হয়েছে, শীঘ্রই তালিকা টাঙানো হবে। এর ফাঁকে রোজই বাড়ছে সব্জির দর। মন্ত্রীর পরামর্শে দরাদরি করতে গিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে অশান্তি তৈরি হওয়ার আশঙ্কাও থেকে যাচ্ছে। এক দিকে, বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যাচ্ছে, চন্দ্রমুখী আলুর দর ৩০ টাকা প্রতি কেজিও উঠেছে। অন্য দিকে মন্ত্রী জানাচ্ছেন, কৃষি বিপণন দফতরের আধিকারিকেরা সোমবার কলকাতার কয়েকটি বাজারে চন্দ্রমুখী আলু ২৮ টাকা প্রতি কেজি দরে বিক্রি হতে দেখেছেন। দিশাহীন এই পরিস্থিতিতে প্রবল বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

সকাল থেকে বাজারে বাজারে ঘুরছেন সরকারি অফিসারেরা। বিভিন্ন তল্লাটে নাকি ‘সুফল বাংলা’-র গাড়িতে গাড়িতে ন্যায্য মূল্যে সব্জিও বিক্রি করা হচ্ছে। অথচ, সোমবার যাদবপুর, বাগুইআটির মতো কিছু বাজারে চন্দ্রমুখী আলুর কেজি প্রতি দাম ৩০ টাকাও উঠেছে।

রাজ্যের কৃষি বিপণনমন্ত্রী তপন দাশগুপ্তর বক্তব্য, ‘‘চন্দ্রমুখী আলুর দাম কখনও কেজি প্রতি ৩০ টাকা হতে পারে না। কেউ অন্যায্য দাম চাইলে ক্রেতারা যেন না দেন।’’ তাঁর নিদান, ‘‘ক্রেতারাও একটু দরাদরি করুন। তাতে টনক নড়বে তাঁদের, যাঁরা সব্জির দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন।’’ সমস্যা হল, ক্রেতাদের ‘অন্যায্য দাম’ না দিয়ে সব্জি কিনতে মন্ত্রী বারণ করলেও ন্যায্য দাম কত, সেটা বলতে পারেননি।

মন্ত্রী বলেন, ‘‘শীঘ্রই ক্রেতাদের ন্যায্য মূল্য জানিয়ে দেওয়া হবে।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘দরাদরি বলতে আমি ক্রেতাদের সচেতন হওয়ার কথা বলেছি।’’ তিনি জানান, শহরের বিভিন্ন জায়গায় ‘সুফল বাংলা’-র ৩০টি গাড়ি রোজ ঘুরছে। সেখানে সরকার নির্ধারিত মূল্যে আনাজপাতি বিক্রি করা হচ্ছে। তপনবাবু বলেন, ‘‘বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে যাতে কোনও বিভ্রান্তি, অশান্তি না হয় সেই জন্য আমাদের দফতরের আধিকারিকেরা নজরদারি করেন।’’ কিন্তু বাস্তবে এই নজরদারি দেখা যায় না বলে ক্রেতাদের অনেকেরই অভিযোগ।

সব্জির মূল্যবৃদ্ধির পিছনে মন্ত্রী নিজেও ফড়েদের কারসাজির কথা অস্বীকার করতে পারেননি। তবে তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এমনও বলেননি তিনি।

একটা সময়ে বাজারে গিয়ে কোনও কিছু কিনতে দরাদরি করাটাই ছিল রেওয়াজ। বিশেষ করে মাছ, সব্জি ও ফলের বাজারে। তবে ইদানীং দরাদরি করার ব্যাপারটা আর ততটা দেখা যায় না। যাঁর সামর্থ্য আছে, দামে পোষালে তিনি কেনেন। যাঁর দামে পোষায় না, তিনি কেনেন না।

সোমবার বাগুইআটি থেকে বেহালা, বিভিন্ন বাজারে চন্দ্রমুখী আলু ৩০ টাকা ও জ্যোতি আলু ২৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। সাধারণত খুচরো বাজারে জ্যোতি আলুর সঙ্গে চন্দ্রমুখী আলুর দামের ফারাক কেজিতে থাকে দু’-তিন টাকা থাকে। কিন্তু সেই জায়গায় ফারাক পৌঁছে গিয়েছে ৬ টাকায়!

যাদবপুরের সব্জি ব্যবসায়ী দিলীপ সাহা এ দিন বলেন, ‘‘পাইকারি বাজার থেকে আমরা বস্তা হিসেবে আলু কিনি। এক বস্তায় থাকে পঞ্চাশ কেজি। গত এক সপ্তাহ যাবৎ পাইকারি বাজার থেকে এক বস্তা জ্যোতি আলু ৯০০ টাকা দিয়ে কিনলে চন্দ্রমুখী কিনতে হচ্ছে ১২০০ থেকে থেকে ১২৫০ টাকায়।’’ অর্থাৎ পাইকারি বাজারেই চন্দ্রমুখী আলুর দাম কেজিতে দাঁড়াচ্ছে ২৫ টাকা। বাগুইআটির বাসিন্দা মলয় বড়াল বলেন, ‘‘সোমবার সকালে বাজারে গিয়ে এক কিলো কেজি জ্যোতি আলু ২৪ টাকা এবং এক কেজি চন্দ্রমুখী আলু ৩০ টাকায় কিনেছি।’’

মলয়বাবু চল্লিশ টাকা দিয়ে কিনেছেন মাঝারি সাইজের ফুলকপি। অন্যান্য আনাজের দাম কমারও লক্ষণ নেই। টোম্যাটোর কেজি ৫০ টাকা, দেশি বরবটির দাম কোনও কোনও বাজারে এ দিন ছিল ৭০, এমনকী ৮০ টাকাও। বাঁধাকপি ৫০ টাকা এবং বেগুন-ঢ্যাঁড়শ-পটল ৬০ টাকা। কুমড়ো, চিচিঙ্গে, মুলোর দামও কেজি প্রতি ছিল ৪০ টাকা।

বিভিন্ন বাজারের সব্জি বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, লক্ষ্মীপুজোর পর যেখানে সব্জির দাম কিছুটা কমার কথা, সেখানে দাম হঠাৎই বেড়ে গিয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, দিন পনেরো আগেও যে সব সব্জি পাইকারি বাজারে ১০০ টাকা পাল্লা (পাঁচ কেজি) বিক্রি হয়েছিল, দু’-এক দিন আগে তা বিক্রি হয় ১৮০ থেকে ২০০ টাকা দরে। অথচ এমন নয় যে, সম্প্রতি বৃষ্টি বা অন্য কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফলন মার খেয়েছে।

অধিকাংশ সব্জি বিক্রেতারা দাম বৃদ্ধির জন্য দায়ী করছেন ফড়েদের। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘পাইকারি বাজার থেকে চড়া দামে কিনলে আমাদেরও খুচরো বাজারে বিক্রির ক্ষেত্রে কিছু করার থাকে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Vegetables price reduce minister
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE