ঘটনাস্থলে পুলিশ। সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।
স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে সর্বত্রই নিরাপত্তা নিয়ে তৎপরতা দেখাচ্ছিল পুলিশ। তা সত্ত্বেও শেষ রক্ষা হল না। রক্তপাত ঘটলই। দমদমের একটি বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণে মৃত্যু হল এক দুষ্কৃতীর। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম বলাই দে (২৮)।
শুক্রবার গভীর রাতে দমদমের মতিলাল কলোনিতে ওই ঘটনা ঘটে। সেখানকার ২ নম্বর কলোনির একটি দোতলা বাড়ির একতলায় গোপনে বোমা তৈরি হচ্ছিল। আচমকাই বিস্ফোরণ হয়। ঘরের ভিতরে বলাই ও সুদীপ দেব নামে দুই দুষ্কৃতী বোমা তৈরি করছিল। বিস্ফোরণে তারা গুরুতর আহত হয়। পুলিশ তাদের আরজিকর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে বলাই মারা যায়। সুদীপকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে দুটি মোবাইল ফোন, ছ’টি তাজা বোমা আটক করে পুলিশ। যে বাড়িতে বিস্ফোরণ হয়েছে তার মালিক মানিকদাস বৈদ্য এবং তাঁর দুই ছেলে মাধব ও সহদেবকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে যে দোতলা বাড়িটিতে বিস্ফোরণ হয় সেটি এক সপ্তাহ আগে ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। বাড়ির মালিক মানিকলালবাবু এলাকার বিজেপি-র সক্রিয় কর্মী। দু’বার তিনি ওই এলাকা থেকে বিজেপি-র টিকিটে পুর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেছিলেন। তাঁর দুই ছেলে নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত।
বিস্ফোরণের পরে মতিলাল কলোনি এলাকায় পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। স্থানীয় মানুষ জানান, ওই ঘটনার পরে এলাকায় বম্ব স্কোয়াড এসে ওই বাড়ি থেকে তাজা বোমাগুলি আটক করে।
কমিশনার নীরজকুমার সিংহ জানান, বলাই ও সুদীপ দু’জনেই মূলত হাবড়া-অশোকনগর এলাকার দুষ্কৃতী। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ঘোলা থানাতেও একটি মামলায় বলাইকে পুলিশ খুঁজছিল। তাদের মূল ব্যবসা ছিল এলাকায় তোলাবাজি, লোকজনকে ভয় দেখানো। পুলিশ জানায়, বলাই আগেও গ্রেফতার হয়েছিল। সম্প্রতি সে জামিনে ছাড়া পায়। এলাকার ব্যবসায়ীরাই ছিল বলাইয়ের নিশানা। সে হামেশাই হাবড়া-অশোকনগরের ব্যবসায়ীদের কাছে টাকা চেয়ে চমকাত। কেউ টাকা দিতে অস্বীকার করলে তার দোকান কিংবা গুদামের সামনে বোমাবাজি করাটা ছিল বলাই ও তার দলবলের কাছে খুব মামুলি বিষয়। তাই বলাইয়ের মৃত্যুতে হাবড়া-অশোকনগর এলাকার ব্যবসায়ীরা স্বস্তি পেয়েছেন বলে দাবি পুলিশকর্তাদের একাংশের। ওই এলাকার ব্যবসায়ীদেরও অভিমত সে রকমই।
ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘‘সুদীপকে জেরা করে জানা গিয়েছে, বোমাগুলি তারা নিজেদের এলাকাতেই পাচারের জন্য তৈরি করছিল। কিন্তু সেগুলি ফেটে গিয়ে বিস্ফোরণ হয়েছে।’’
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সর্বত্র নিরাপত্তা আঁটোসাঁটো করা হলেও কেন এই ঘটনা এড়ানো গেল না? কেন পুলিশ টের পেল না ওই জায়গায় দুষ্কৃতীরা বোমা বাঁধার জন্য আশ্রয় নিয়েছে?
কমিশনার বলেন, ‘‘৪৪ লক্ষ বাসিন্দা বসবাস করেন ব্যারাকপুর কমিশনারেট এলাকায়। তাই বাড়ি বাড়ি পুলিশ পাঠানো সম্ভব নয়। ঘটনাটি ঘটেছে একটি বাড়ির ভিতরে। সেখানে ওই দুষ্কৃতীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে বাড়ির মালিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের কাজে কোনও গাফিলতি হয়নি।’’
এ দিকে এই বিস্ফোরণের ঘটনাকে ঘিরে এলাকায় রাজনৈতিক তরজাও শুরু হয়ে গিয়েছে। দমদমের তৃণমূল নেতা তথা দমদম পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান বরুণ নট্টের দাবি, বাইরে থেকে দুষ্কৃতী এনে বিজেপি চেষ্টা করছে তৃণমূলকে আক্রমণ করার। বরুণবাবু বলেন, ‘‘স্থানীয় মানুষ আমাদের জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলে আরও দু-তিন জন ছিল। তারা পালিয়েছে। যাঁর বাড়িতে ওই ঘটনা ঘটেছে তিনি ওই এলাকার বিজেপি-র সক্রিয় সদস্য।’’ দুষ্কৃতীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে ধৃত বাড়ির মালিক মানিকদাস বৈদ্য যে বিজেপি-র সক্রিয় সদস্য তা স্বীকার করেছেন দলের উত্তর ২৪ পরগনার নেতারাই। বিজেপি-র জাতীয় পরিষদের সদস্য অশোক সরকার বলেন, ‘‘আইন আইনের পথে চলবে। তৃণমূল বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করতে চাইছে। মানিকবাবু বাড়ি ভাড়া দিয়েছিলেন। ভাড়াটে রাতের অন্ধকারে কী করছে তা ওঁর পক্ষে বোঝা সম্ভব নয় বলেই আমরা মনে করি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy