এ ভাবেই আলমারি ভেঙে লুঠ। রবিবার। — নিজস্ব চিত্র
হায়দরাবাদে ছেলের কাছে গিয়েছিলেন বৃদ্ধ দম্পতি। সেখানে বসেই শুক্রবার খবর পান, কলকাতায় তাঁদের বাড়ি থেকে দুষ্কৃতীরা লুঠ করে নিয়ে গিয়েছে টাকা, গয়না এবং আরও বহু সামগ্রী। ওই দম্পতি, হরিশঙ্কর পাল ও মায়া পাল শনিবার সকালের উড়ানে শহরে ফিরে দেখেন, সিঁথির কালীচরণ ঘোষ রোডে তাঁদের একতলা বাড়ি তছনছ। আতঙ্কিত হয়ে হরিশঙ্করবাবু ফোন করেন হায়দরাবাদ আইআইটি-র অধ্যাপক, তাঁদের ছেলে তন্ময়কে। তন্ময়বাবুও তড়িঘড়ি রবিবার সকালের উড়ানে কলকাতায় পৌঁছন। পাল পরিবারের অভিযোগ, আলমারি ভেঙে গয়না, টাকা-সহ লক্ষাধিক টাকার সামগ্রী লুঠ করে চম্পট দিয়েছে দুষ্কৃতীরা।
সিঁথি থানা থেকে হরিশঙ্করবাবুর বাড়ির দূরত্ব দু’কিলোমিটার। স্বভাবতই এই ঘটনায় এলাকার পুলিশি নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তন্ময়বাবুর কথায়, ‘‘বাবা-মা’র অনুপস্থিতিতে বাড়িতে যে ভাবে তাণ্ডব চালানো হয়েছে, তাতে বাবা-মা’কে বাড়িতে একা রাখতেই ভয় হচ্ছে।’’ মায়াদেবী বলেন, ‘‘আমরা এখানে কুড়ি বছরেরও বেশি সময় ধরে রয়েছি। আগে কখনও এমন ঘটেনি।’’
অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার হরিশঙ্করবাবু এ দিন জানান, স্ত্রীকে নিয়ে গত ২৯ এপ্রিল তিনি হায়দরাবাদ যান। বাড়িতে রেখে গিয়েছিলেন এক কেয়ারটেকারকে। গত শুক্রবার দুপুরে কেয়ারটেকারই তাঁকে ফোন করে চুরির কথা জানান। হরিশঙ্করবাবু জানিয়েছেন, এই অবস্থায় বাড়ি ফেলে রাখতে চাননি তাঁরা। তাই, শনিবারের উড়ানেই ফিরে আসেন। ফিরে ওই অবস্থা দেখে ছেলেকে সব জানান। পুলিশ জেনেছে, কেয়ারটেকার সুজয় নাথ মাঝে বাড়ি গিয়েছিলেন। তখন বাড়ি অরক্ষিতই ছিল। শুক্রবার সকালে সুজয় ফিরে বাড়ির সদর দরজার তালা খুলে ওই দৃশ্য দেখে হায়দরাবাদে ফোন করেন।
রবিবার দুপুরে পাল দম্পতির বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, বাথরুমের জানলা ভাঙা। বাড়ি লণ্ডভণ্ড। তিনটি ঘরেই আলমারির তালা ভাঙা। একটি ঘরে আলমারি মেঝের উপর ফেলে দিয়ে ভারী কিছু লোহার সামগ্রী দিয়ে ভাঙা হয়েছে। দুষ্কৃতীরা আলমারি ভেঙে কয়েক ভরি গয়না ছাড়া ঠাকুরের গয়নাও নিয়ে গিয়েছে বলে পাল দম্পতির অভিযোগ।
জানা গিয়েছে, বাড়ির প্রতিটি ঘরে আলাদা তালা লাগানো ছিল। পুলিশের অনুমান, বাথরুমের জানলা দিয়ে চোরেরা ঢুকে এক এক করে তিনটি ঘরের দরজারই তালা ভাঙে। এর পরে যে ভাবে তারা ভারী কিছু সামগ্রী দিয়ে প্রতিটি ঘরের আলমারি ভেঙেছে, তাতে মনে হচ্ছে ওই ‘অপারেশন’ করতে বেশ কিছুক্ষণ সময় লেগেছে তাদের।
প্রশ্ন উঠেছে, সে ক্ষেত্রে সুজয় কেন আলমারি ভাঙার শব্দ পেলেন না? রবিবার রাত পর্যন্ত সুজয়কে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি পুলিশ। তিনি এক দিনের জন্য বাড়ি গিয়েছিলেন না কয়েক দিনের জন্য, সে বিষয়েও নিশ্চিত নন তদন্তকারীরা। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, যারা চুরি করতে এসেছিল, তারা কয়েক দিন ধরে ঘটনাপ্রবাহের উপরে নজর রেখেছিল। এমনকী, কেয়ারটেকার সুজয়ের সঙ্গে দুষ্কৃতীদের কোনও যোগাযোগ ছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে বলে পুলিশের তরফে এ দিন জানা হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয়দের অভিযোগ, রাতে পুলিশের কড়া নজরদারি ও টহল থাকলে এই ধরনের অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটার কথা নয়। যদিও পুলিশের তরফে দাবি করা হয়েছে, এলাকায় নিয়মিত টহলদারি চলে। ডিসি (উত্তর) শুভঙ্কর সিংহ সরকার বলেন, ‘‘তদন্ত চলছে। এখন এর থেকে বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy