পুরুষ এডিস মশা
দু’মাসেই ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৯। তা সত্ত্বেও মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, কলকাতায় ডেঙ্গির প্রকোপ তেমন কিছু নয়। আর আজ, মঙ্গলবার কলকাতা, সল্টলেক এবং হাওড়া শহরের ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে সে কথা জানাবে কলকাতার পুর প্রশাসন। কারণ তাদের মতে, কলকাতায় এ বছর (জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত) ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১১২। কোনও মৃত্যুর ঘটনা নেই।
যদিও শহরে ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া রোগ প্রতিরোধে জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা নিয়ে সন্তুষ্ট নয় পুর স্বাস্থ্য দফতর। মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার দিল্লিতে এক বৈঠকে হাজির ছিলেন। কলকাতা-সহ লাগোয়া শহর জুড়ে ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে তিনি জানান, এ কাজে জনপ্রতিনিধিদের সহয়োগিতা খুব জরুরি। তাঁর কথায়, ‘‘আলো লাগানো, রাস্তা সারাইয়ে যত আগ্রহ দেখান কাউন্সিলরেরা, তেমনটা মশাবাহী রোগ নিবারণের ক্ষেত্রে হলে আরও সুবিধা হবে।’’ অর্থাৎ, শহরে ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া নিবারণে সব কাউন্সিলরদের পূর্ণ সহায়তা যে মেলে না, তা আকার-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন খোদ মেয়র পারিষদ।
তার উদাহরণ দিয়েছেন স্বাস্থ্য দফতরেরই এক আধিকারিক। তিনি জানান, ফেব্রয়ারি মাসে উত্তম মঞ্চে একটি কর্মশালা হয়েছিল। ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া নিবারণে কী করা প্রয়োজন, তা নিয়ে আলোচনা হয় সেখানে। পুরসভার ১৪৪ জন কাউন্সিলরকেই সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু হাজির ছিলেন মাত্র ২০ শতাংশ জনপ্রতিনিধি। ওই কর্মশালার পরে প্রতি বরোতেও একটি করে শিবির করছে স্বাস্থ্য দফতর। সেখানেও কাউন্সিলরের হাজিরা নিয়ে চিন্তিত পুর স্বাস্থ্য দফতর। সম্প্রতি কলকাতার ১৩ এবং ১৪ নম্বর বরোতে অনুষ্ঠিত ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া শিবিরে কাউন্সিলরের হাজিরা ছিল যথাক্রমে এক জন এবং দু’জন। এক বরো চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘জনপ্রতিনিধিরাই জনস্বাস্থ্য নিয়ে ততটা সচেতন নন বলে সমস্যা বাড়ছে।’’
এ দিকে, জানুয়ারি থেকে ৭ মাসের নিরিখে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যাটা আগের তুলনায় অনেক কম বলেই মনে করছেন মেয়র। তবে রোগের প্রকোপ কম বলে বিষয়টি হালকা ভাবে নিতে নারাজ পুরসভা। মেয়র জানান, আজ মঙ্গলবার থেকে মশাবাহী রোগ নির্ণয়ে স্বাস্থ্য শিবির করা হচ্ছে। আগামী কয়েক দিনে শহরের ১৬টি বরোতেই শিবির খুলে যাবে। পাশাপাশি, প্রতিটি বরোতে একটি করে রক্তের প্লেটলেট পরীক্ষার মেশিন বসবে। ১৫ দিনে তা চালু হয়ে যাবে। এতে প্লেটলেটের পরিমাণ জানা সহজ হবে। সবই বিনা খরচে করা হবে বলে জানান মেয়র। গত বিধানসবা ভোটের আগে মশাবাহী রোগ দমনে কমিটি গড়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মেয়র জানান, দু’মাস অন্তর সেই কমিটির রিপোর্ট আসে। তবে মশাবাহী রোগ সংক্রমণে শহর লাগোয়া পুরসভাগুলির ভূমিকায় সন্তুষ্ট নন তিনি। বলেন, ‘‘সল্টলেক, দমদম, সোনারপুর-সহ লাগোয়া পুরসভাগুলিকে আরও সতর্ক হতে হবে। ওদের জন্য কলকাতাও ভুগছে।’’
২০১২ সালে কলকাতায় ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী। পুর প্রশাসনকে ডেকে তার কারণ জানতে চান মমতা। সে দিনই পুর কর্তাদের জানিয়ে দিয়েছিলেন, মশাবাহী রোগ নিয়ন্ত্রণে বছরে মাত্র দু’-তিন মাস কাজ করলে ফল হবে না। মশাবাহী রোগ দমনে বছরভর কাজ করতে হবে। মশার বংশবৃদ্ধি রুখতে আলাদা টিম করে অভিযান চালাতে হবে। সেই নির্দেশ মতোই কাজ চালিয়ে গত কয়েক বছর মশাবাহী রোগ দমনে সাফল্য পেয়েছে কলকাতা। পুরসভা সূত্রের খবর, গত বছর সেই সংখ্যাটা ছিল ৮০০-র কাছাকাছি।
স্বাস্থ্য দফতরের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত কলকাতায় যে সংখ্যক ডেঙ্গি রোগী মিলেছে, তার বেশির ভাগটাই টালিগঞ্জে ১০ নম্বর বরো এলাকায়। ১১ এবং ১২ নম্বর বরোতেও কিছু ডেঙ্গির সংক্রমণ রয়েছে। অতীনবাবু বলেন, ‘‘এই সব বরোয় প্রচুর খালি জমি থাকায় সেখানে জল জমার আধিক্য বেশি। তাই ওই বরোগুলিতে বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে। জঞ্জাল অপসারণ দফতরকে ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে।’’
ডেঙ্গি প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন পুরকর্তৃপক্ষ? স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ত্রিস্তরীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে একটি দল আছে, তারা ওয়ার্ডে কাজ করে। এর পরে রয়েছে বরোর একটি দল। তারা সমগ্র বরোতে নজর রাখে এবং ভেক্টর কন্ট্রোলের কাজ করে। ওয়ার্ড এবং বরো ছাড়াও ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া রোধে পুরসভার কেন্দ্রীয় স্তরে একটি ‘র্যাপিড অ্যাকশন টিম’ আছে। তারা ডেঙ্গি আক্রান্তের বাড়ি গিয়ে নিয়মিত মশা দমনে রাসায়নিক প্রয়োগ করে। এরই মধ্যে কলকাতার দু’টি মেডিক্যাল কলেজে অভিযানে ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়াবাহী মশার লার্ভা মিলেছে। ওই আধিকারিক জানান, আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজেও ডেঙ্গি আক্রান্তের খবর পেয়ে সেখানে মশা দমনে নেমেছিল তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy