Advertisement
E-Paper

অন্তঃসত্ত্বা বধূকে বাঁচাতে গিয়ে মৃত্যু শাশুড়ির

অন্তঃসত্ত্বা পুত্রবধূকে নিজের ভাসুর ও তাঁর ছেলেদের হাতে মার খেতে দেখে বাধা দিতে গিয়েছিলেন শাশুড়ি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৪৯
ক্ষোভ: রেহানা বেগমের (ইনসেটে) বাড়ির সামনে ভিড় জমিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। শনিবার রাতে। নিজস্ব চিত্র

ক্ষোভ: রেহানা বেগমের (ইনসেটে) বাড়ির সামনে ভিড় জমিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। শনিবার রাতে। নিজস্ব চিত্র

অন্তঃসত্ত্বা পুত্রবধূকে নিজের ভাসুর ও তাঁর ছেলেদের হাতে মার খেতে দেখে বাধা দিতে গিয়েছিলেন শাশুড়ি। অভিযোগ, ওই প্রৌঢ়ার হাত মুচড়ে পাঁচতলা বাড়ির সিঁড়ি থেকে নীচে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয়। গত ২ ফেব্রুয়ারি রাতের ওই ঘটনার পরে ছ’সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা সেই বধূ এবং তাঁর শাশুড়িকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। বধূর গর্ভপাত হয়ে গিয়েছে বলে তাঁর পরিবারের দাবি। দ্রুত অস্ত্রোপচারের পরেও বাঁচানো যায়নি শাশুড়ি রেহানা বেগমকে (৫০)। শুক্রবার দুপুরে হাসপাতালেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

এই ঘটনায় শনিবার তিলজলা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে রেহানার পরিবার। যার ভিত্তিতে তদন্তে নেমে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন রেহানার ভাসুর মহম্মদ কাজিম এবং তাঁর দুই ছেলে, মহম্মদ মুবারক ও মহম্মদ আমানত। তাঁদের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানো, প্রসূতিকে জোর করে গর্ভপাত করানো এবং মারাত্মক অস্ত্র দিয়ে হামলা-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। এ দিনই ধৃতদের আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

পুলিশ জানায়, তিলজলার জি জে খান রোডে একটি বহুতলের পাঁচতলায় রেহানা ও কাজিমদের ফ্ল্যাট। পাশাপাশি ইএম বাইপাসের কাছে পঞ্চান্নগ্রামেও তাঁদের একটি বাড়ি রয়েছে। গত ২ ফেব্রুয়ারি রাতে সেখানে কাজিমের এক ছেলে মদ্যপান করছিলেন বলে অভিযোগ। তা দেখতে পেয়ে তিলজলার বাড়িতে ফিরে কাজিমকে সে কথা জানান রেহানার স্বামী গুলাম ওমর। কাজিম তাঁর ছেলেদের ডেকে আনেন। গুলাম মিথ্যে বলছেন দাবি করে বচসা শুরু হয় দু’পক্ষের মধ্যে। সেই সময়েই গুলামকে ধরে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। বাবাকে মার খেতে দেখে বাধা দিতে যান গুলামের পুত্র মহম্মদ ইমরান ও তাঁর স্ত্রী তানাজ ইকবাল। তাঁদের মারধরের পাশাপাশি তানাজের পেটে লাথি মারা হয় বলে অভিযোগ। শনিবার ইমরান দাবি করেন, ‘‘তানাজ ছয় সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা। ওকে পেটে লাথি মেরে ফেলে দেওয়া হয়। যার ফলে তানাজের রক্তপাত শুরু হয়। রক্ত দেখে মা বাধা দিতে গেলে তাঁকেও হাত মুচড়ে সিঁড়ি দিয়ে নীচে ফেলে দেয় ওরা।’’ সেই সঙ্গে তাঁর আরও দাবি, ‘‘ওই রাতেই তানাজ আর মাকে তিলজলার একটি হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। তার পরেই পুলিশ আসে। যে হেতু নিজেদের মধ্যে ঝামেলা, তাই অভিযোগ করলে পুলিশ আমাদেরও ধরে নিয়ে যেতে পারে ভেবে বাবা বিষয়টি মিটিয়ে নেন।’’

পরের দিন, অর্থাৎ রবিবার সকাল থেকে রেহানার অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে বলে দাবি ইমরানের। সে দিনই মহিলার মাথায় অস্ত্রোপচার করতে হয়। তার পরে ওই হাসপাতালেই সঙ্কটজনক অবস্থায় ভর্তি ছিলেন রেহানা। শুক্রবার দুপুরে খবর আসে, তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এর পরেই থানায় নতুন করে অভিযোগ করেন ইমরানেরা।

ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্তেরা পলাতক ছিলেন বলে পুলিশের দাবি। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে এ দিন দুপুরে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে তাঁদের গ্রেফতার করে তিলজলা থানার পুলিশ। ওই থানার এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘বিহারের দ্বারভাঙায় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন অভিযুক্তেরা। ধরা পড়ে গিয়েছেন। রেহানার দেহের ময়না-তদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে।’’ ময়না-তদন্তের পরে রেহানার দেহ তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। শনিবার রাতে তাঁর বাড়ির সামনে ভিড় জমান এলাকার বহু মহিলা। তাঁরা দোষীদের কড়া শাস্তির দাবি জানাতে থাকেন। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। পরে মায়ের অন্ত্যেষ্টির সময়ে ইমরানকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমার মাকে খুন করা হয়েছে। আমার বাচ্চাটাকেও ওরা মেরেছে। কড়া শাস্তি চাই।’’

Violence Crime Death Pregnant Woman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy