খাস কলকাতা শহরে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল এক স্কুলপড়ুয়ার। সেই মৃত্যু-রহস্য নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন তার মা। ১১ বছর আগের সেই ঘটনার আজও নিষ্পত্তি হয়নি। শহরের নামী স্কুলে পড়তে গিয়ে কী ভাবে শিশুটির মৃত্যু হল, সেই মৃত্যুতে দায় কার, তা জানা যায়নি আজও। কবে মামলার নিষ্পত্তি হবে, তারও নিশ্চয়তা নেই। আলিপুর কোর্ট সূত্রের খবর, গত কয়েক বছরে ক্রমশ জটিল থেকে জটিলতর আবর্তে জড়িয়ে পড়েছে মামলা। কোনও নির্দেশ জারি হওয়ার কথা থাকলেও তা ‘অজানা’ কারণে থমকে আছে। প্রসঙ্গত, কোর্টে মামলার দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে বার বারই কথা উঠেছে। বকেয়া মামলার পাহাড় জমে আছে নিম্ন আদালতগুলিতে। আইনজীবীদের একাংশই বলছেন, মামলার দীর্ঘসূত্রতা কেমন হতে পারে, তার উপযুক্ত উদাহরণ এই মামলাটি।
২০১৪ সালের ৮ মে মৃত্যু হয়েছিল শহরের একটি নামী স্কুলের প্রথম শ্রেণির পড়ুয়া রাজন্য সরকারের। তার মা রুচিরা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, সে দিন সকাল ৭টা নাগাদ তিনি ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দিয়েছিলেন। সকাল সওয়া ১০টা নাগাদ খবর পান, ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি সেই নার্সিংহোমে পৌঁছে জানতে পারেন, ছেলে মারা গিয়েছে। এর পরেই ওই স্কুলের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে মামলা করেন রুচিরা। যদিও সেই তদন্ত নিয়ে গোড়া থেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। অভিযোগ, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ যথাযথ ছিল না, ময়না তদন্তের রিপোর্টে অস্পষ্টতা ছিল। এ সব কথা কোর্টেও জানিয়েছিলেন রুচিরার আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা।
পুলিশ জানিয়েছিল, রাজন্যের শরীরে কোনও বিষক্রিয়া মেলেনি, মৃত্যুর পিছনে কোনও অপরাধও মেলেনি। সংশ্লিষ্ট স্কুলও দাবি করেছিল যে, তাদের কোনও গাফিলতি নেই। বরং রাজন্যের কোনও অসুখ ছিল কিনা, সেই প্রশ্নও তুলেছিল স্কুল। রুচিরা অবশ্য পাল্টা দাবি করেছেন, স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগে ডাক্তারি পরীক্ষায় রাজন্যের কোনও অসুখ ধরা পড়েনি। বরং স্কুলের অধ্যক্ষ এবং এক জন শিক্ষিকার নামে নির্দিষ্ট ভাবে গাফিলতির অভিযোগ করেছিলেন তিনি। সূত্রের খবর, ওই শিক্ষিকার নামের বানানে কিছু ত্রুটি ছিল। উপরন্তু, তিনি বর্তমানে ভিন্ রাজ্যে থাকেন। তার জেরে মামলায় জটিলতা বেড়েছে। কোর্টের খবর, ওই শিক্ষিকা সংক্রান্ত একটি নির্দেশ বেরোনোর কথা ছিল। কিন্তু দিনের পর দিন কেটে গেলেও আলিপুর কোর্ট থেকে সেই নির্দেশ স্বাক্ষরিত হয়ে বেরোয়নি।
রুচিরা বলছেন, ‘‘আমার সন্তানের মৃত্যুর দায় কার, শুধু সেটুকুই জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আজও জানতে পারলাম না!’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)