Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Specially Abled

Differently Abled: ছেলেকে স্কুলে ফেরাতে সলমনের ছবির খোঁজ

যে কোনও বিশেষ চাহিদাসম্পন্নের জন্যই এটা বড় সমস্যা। হঠাৎ করে কোনও বড় ধরনের পরিবর্তনের সঙ্গে ওদের মানিয়ে নিতে সময় লাগে।

প্রশিক্ষণ: দীর্ঘ বিরতির পরে স্কুল খুললে যাতে অসুবিধা না হয়, তার জন্য বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছেলে বৈদূর্যকে তৈরি করছেন মা সুমিত্রা পাল বক্সি।

প্রশিক্ষণ: দীর্ঘ বিরতির পরে স্কুল খুললে যাতে অসুবিধা না হয়, তার জন্য বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছেলে বৈদূর্যকে তৈরি করছেন মা সুমিত্রা পাল বক্সি। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

সুমিত্রা পাল বক্সি
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২১ ০৭:১০
Share: Save:

হাতের কাছে ক্যালেন্ডার আর ঘড়ি রেখে কাজ করছি এখন। কবে স্কুল খুলবে, তা না জানলেও ক্যালেন্ডারে একের পর এক তারিখ দেখিয়ে ছেলেকে বলে চলেছি, ওই তারিখ থেকেই আমাদের স্কুল। ঘড়ি ধরে বলছি, ক’টায় বাড়ি থেকে স্কুলের জন্য বেরোতে হবে, ক’টায় বাড়ি ফেরা। কারণ, এ ভাবে ‘স্টোরি টেলিং’ না চালালে ছেলেকে স্কুলে ফেরানোই হয়তো মুশকিল হবে। তবে যতটা ভেবেছিলাম, এখনও এ কাজে ছেলের তরফে তেমন কোনও বাধা আসেনি। বরং স্কুল নিয়ে ওকে উৎসাহীই মনে হল। স্কুলের জন্য বেরোনোর দিনটা না আসা পর্যন্ত বলতে পারছি না, ঠিক কী হবে!

যে কোনও বিশেষ চাহিদাসম্পন্নের জন্যই এটা বড় সমস্যা। হঠাৎ করে কোনও বড় ধরনের পরিবর্তনের সঙ্গে ওদের মানিয়ে নিতে সময় লাগে। এই সময়টায় অভিভাবকদের সাহায্য না পেলে ওদের পক্ষে মানিয়ে নেওয়া আরও কঠিন হয়। গত দু’ছরে যা যা ছেলেকে শিখিয়েছিলাম, তার অধিকাংশই ভুলতে বসেছে। যেমন, সিনেমা হলে গিয়ে অন্ধকারে এক জায়গায় বসে সিনেমা দেখাটা আমাদের জন্য স্বাভাবিক হলেও বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের সেটাই আলাদা করে সময় নিয়ে শেখাতে হয়। এই স্বাভাবিক শিক্ষাগুলো যাতে ওরা আরও ভুলে না যায়, সেই জন্যই স্কুলে যাওয়া প্রয়োজন।

আমার ছেলে, ১১ বছরের বৈদূর্য বাঙুরের একটি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। অন্য শিশুদের সঙ্গেই ওই স্কুলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদেরও পড়াশোনার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় শ্রেণিতে পরীক্ষা দেওয়ার পরে ওর জীবন থেকে স্কুল
জিনিসটাই মুছে গিয়েছে। এই হঠাৎ করে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে প্রথম দিকে যথেষ্ট নাজেহাল হতে হয়েছে। বাড়ির দরজা-জানলায় ‘স্টে হোম’ লেখা লোগো সাঁটতে হয়েছে। কারণ, বৈদূর্য লোগো ভাল চেনে। একটি বাড়ির ছবি দিয়ে ওই লোগো
আমিই বানিয়েছিলাম। তা সত্ত্বেও বাইরে বেরোনোর জন্য অস্থির হয়ে উঠেছিল ও। ছাদে নিয়ে গিয়ে দিনের পর দিন ফাঁকা শহরের ছবি দেখিয়ে বোঝাতে হয়েছে, এখন বাইরে বেরোনো বারণ। আগে ছেলের অন্যতম উৎসাহের জায়গা ছিল সাঁতার। করোনায় তা-ও বন্ধ হয়ে যায়। লকডাউনে এক বার খুব বৃষ্টির পরে ছাদে জল জমে গিয়েছিল। ছাদের দরজা খোলা থাকার সুযোগে সেই জলে নেমেই সাঁতার কাটার চেষ্টা করে বৈদূর্য। কোনওমতে ওকে উদ্ধার করি আমরা।

তবে এই সময়ে খুব উপকার করেছে সলমন খানের ছবি। বৈদূর্য সলমনের ভক্ত। এক বার কাগজে ছবি ছাপা হল, সলমন লকডাউনে নিজের বাড়িতেই রয়েছেন। সেই দেখে ছেলেও বাড়িতে থাকতে রাজি হয়ে গেল! আবার এক বার কাগজে সলমনের মাস্ক পরা ছবি বেরোল। অটিজ়ম থাকায় যাকে মাস্ক পরানোই যেত না, সে-ও রাতারাতি মাস্ক পরতে শুরু করে দিল! এখন স্কুলে যাওয়া নিয়ে সলমনের এমন কোনও ছবি পেয়ে গেলেই কেল্লা ফতে! ওই এক ছবিতেই সব কাজ হয়ে যাবে।

লেখিকা

(বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন বালক বৈদূর্য পাল বক্সির মা)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Specially Abled School Reopening
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE