Advertisement
E-Paper

হাঙ্গামা সামলাতে পুলিশের নতুন অস্ত্র মুভি ক্যামেরা

লাঠি-ঢাল-বন্দুক তো থাকছেই। ঘটনাস্থলে যেতে পুলিশ এ বার সঙ্গে নেবে মুভি ক্যামেরা এবং সরাসরি ছবি সম্প্রচার করার প্রযুক্তিও। পুরোদস্তুর নিউজ চ্যানেলের ক্যামেরাম্যানদের কায়দায়। খুব বেশি দেরি নেই। মাসখানেকের মধ্যে নগর কলকাতার বিভিন্ন ঘটনাস্থলে এ ভাবেই নতুন ভূমিকায় দেখা যাবে উর্দিধারীদের। লালবাজার তাঁদের পোশাকি নাম দিয়েছে ‘সংবাদ সংগ্রাহক’!

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৪ ০২:১৬
অঙ্কন: সুমিত্র বসাক

অঙ্কন: সুমিত্র বসাক

লাঠি-ঢাল-বন্দুক তো থাকছেই। ঘটনাস্থলে যেতে পুলিশ এ বার সঙ্গে নেবে মুভি ক্যামেরা এবং সরাসরি ছবি সম্প্রচার করার প্রযুক্তিও। পুরোদস্তুর নিউজ চ্যানেলের ক্যামেরাম্যানদের কায়দায়। খুব বেশি দেরি নেই। মাসখানেকের মধ্যে নগর কলকাতার বিভিন্ন ঘটনাস্থলে এ ভাবেই নতুন ভূমিকায় দেখা যাবে উর্দিধারীদের। লালবাজার তাঁদের পোশাকি নাম দিয়েছে ‘সংবাদ সংগ্রাহক’!

পুলিশ কি তা হলে নিজস্ব কোনও টেলিভিশন চ্যানেল চালু করছে? এবং সেই জন্যই এত তোড়জোড়! সেই জন্যই এই ক্যামেরাম্যান-সংবাদ সংগ্রাহকদের মাধ্যমে থাকবে কোনও ঘটনার ছবি সরাসরি সম্প্রচারেরও ব্যবস্থাও!

লালবাজারের কর্তারা কিন্তু জানাচ্ছেন, ব্যাপারটা মোটেই তা নয়। তাঁদের বক্তব্য, এমন আয়োজনের উদ্দেশ্য পুলিশি ব্যবস্থাকেই আরও জোরদার করা। অশান্তি ও গণ্ডগোল যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণ করা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা। কিন্তু কী ভাবে?

কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, বহু ক্ষেত্রেই অশান্তি ও গণ্ডগোল হলে দেখা যায়, ঘটনাস্থলে উপস্থিত অফিসার ও কর্মীদের হাত থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে। কোনও ভুল সিদ্ধান্ত বা সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগার ফলে অথবা ঘটনাস্থলে থাকা অফিসারেরা কোনও কারণে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ার ফলে এমন অবস্থা তৈরি হয় বলে কর্তাদের অভিমত। এক শীর্ষ অফিসার জানান, লালবাজার বা অন্য কোনও জায়গায় বসে ঊর্ধ্বতন অফিসারেরা পুলিশের নিজস্ব বেতার যন্ত্র ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সময়ে সময়ে পরিস্থিতির খোঁজখবর নিলেও তা নিতান্তই পরের মুখে ঝাল খাওয়া। কারণ, সে-ক্ষেত্রে ঘটনাস্থলে উপস্থিত অফিসারদের মুখ থেকে শুনে মনে মনে একটা ছবি তৈরি করে সেই অনুযায়ী আবার প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে হয়। এমন অনেক পরিস্থিতিতে নির্দেশ দেওয়ার ক্ষেত্রেই ভুলত্রুটি হয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়।

ঘটনার ছবি সরাসরি সম্প্রচার করলে সেটা এড়ানো যাবে বলে মনে করছে লালবাজার। কর্তাদের বক্তব্য, কোনও নির্দিষ্ট জায়গায় ঠিক কী ঘটছে, কত জন পুলিশকর্মী মোতায়েন আছেন, ঘটনাস্থলের কোথায় কোথায় তাঁরা আছেন, উত্তেজিত জনতা কোন কোন প্রান্তে জড়ো হয়েছে, তাদের মেজাজের উগ্রতার মাত্রা কতটা এই সব কিছুরই ‘লাইভ’ ছবি লালবাজারে বসে দেখে এবং পরিস্থিতি অনুধাবন করে প্রয়োজনীয় নির্দেশ পাঠাতে পারবেন পুলিশ কমিশনার এবং অন্য শীর্ষ অফিসারেরা। যে-পুলিশকর্মী ছবি তুলবেন, দরকার মতো তাঁকেও বাঁয়ে-ডাইনে, সামনে-পিছনে ক্যামেরা ঘোরানোর নির্দেশ দেবে লালবাজার।

মহানগরের বিভিন্ন জায়গায় এখন প্রায় ৫০০টি ক্লোজ্ড সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি চালায় পুলিশ। ওই সব ক্যামেরা ছড়িয়ে রয়েছে কলকাতার গোটা পঞ্চাশ গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে। তবে পুলিশকর্তাদের বক্তব্য, কলকাতার সব রাস্তার মোড়ে সিসি ক্যামেরা এখনও নেই। তা ছাড়া বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা গলিরাস্তাতেও ঘটে। আবাসিক এলাকায় খুন বা ডাকাতির ক্ষেত্রেও অনেক সময় এই ধরনের সরাসরি সম্প্রচার জরুরি বলে মনে করছেন শীর্ষ কর্তারা।

কলকাতা পুলিশের এই ধরনের দলের নাম হবে ‘সেলুলার মোবাইল নিউজ গ্যাদারিং ইউনিট’। আপাতত চালু হবে মোট পাঁচটি। প্রতিটি ইউনিটের জন্য বরাদ্দ একটি গাড়ি, এক জন চালক ও দু’জন পুলিশকর্মী, যাঁদের এক জন ছবি তোলায় দক্ষ হবেন এবং অন্য জন জানবেন সম্প্রচার সংক্রান্ত প্রযুক্তির খুঁটিনাটি। সরাসরি সম্প্রচারের জন্য এখন আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আউটসাইড ব্রডকাস্টিং (ওবি) ভ্যানের মতো ঢাউস জিনিসের প্রয়োজন হয় না। তার বদলে এখন চলে এসেছে বহনে অনেক সহজ ‘ব্যাকপ্যাক ইউনিট’। যেখানে পিঠের ব্যাগের মধ্যেই সম্প্রচারের যাবতীয় প্রযুক্তি মজুত। পাঁচটি ব্যাকপ্যাক ইউনিটের জন্য এক কোটিরও বেশি টাকা খরচ হবে।

পুলিশকর্মীর ক্যামেরায় তোলা ছবি প্রথমে তাঁর পিঠের ওই ব্যাকপ্যাকে যাবে এবং পরে সেখান থেকে ফোর্থ জেনারেশন মোবাইল যোগাযোগ প্রযুক্তি বা ফোর জি প্রযুক্তির মাধ্যমে ১০ মেগাবাইট্স পার সেকেন্ড (এমবিপিএস) স্পিডে প্রথমে পৌঁছবে লালবাজারের কন্ট্রোল রুমে। সেখান থেকে লালবাজারের লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (ল্যান)-এর মাধ্যমে সেই ছবি পাঠানো হবে শীর্ষ অফিসারদের কম্পিউটারে।

লালবাজারের এক শীর্ষ অফিসার এই প্রসঙ্গে জানান, গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে গার্ডেনরিচের হরিমোহন ঘোষ কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের সময় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে যে-গণ্ডগোল হয়েছিল, তেমন পরিস্থিতি সামাল দিতে এই ধরনের ব্যবস্থা কার্যকর হতেই পারে। তাঁর কথায়, “বারবার মনে হয়েছে, এই ব্যবস্থা সেই গণ্ডগোলের সময় চালু থাকলে সাব-ইনস্পেক্টর তাপস চৌধুরীকে হয়তো গুলিতে প্রাণ দিতে হত না।”

surbek biswas lalbazar movie camera police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy