ম্যালেরিয়ার রক্ত পরীক্ষা ছাড়া আর কিছু হয় না— ক্লিনিকের গা থেকে এই তকমা ঝেড়ে ফেলতে আংশিক সফল হলেও সচেতনতার প্রচারে এখনও পিছিয়েই রয়েছে কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ। তাই যে সব রোগে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়িয়ে তোলাটাই পুরসভার সবচেয়ে বড় কর্তব্য হওয়া উচিত, সেখানেই মুখ থুবড়ে পড়েছে তারা।
কিছু দিন আগের জাপানি এনসেফ্যালাইটিস বা হালের সোয়াইন ফ্লু-র সময়ে কলকাতা পুরসভার ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা হয়েছে বিস্তর। কেন এমন জরুরি স্বাস্থ্য সমস্যায় পুরসভা সাধারণ মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করবে না, তা নিয়ে অনেকেই সোচ্চার হয়েছেন। পুর-স্বাস্থ্যকর্তারা এর কোনও সদুত্তরও দিতে পারেননি। তবে তাঁদের দাবি, স্বাস্থ্য ক্লিনিকগুলিকে আগের তুলনায় অনেকটাই স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলতে সফল হয়েছেন তাঁরা।
কেমন স্বয়ংসম্পূর্ণ? পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের উপদেষ্টা তপন মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এখন পুরসভার ৫০টি স্বাস্থ্য ক্লিনিকে ডায়াবেটিসের জন্য রক্ত পরীক্ষা হয়। ওষুধও দেওয়া হয়। যেহেতু দেশ জুড়ে ডায়াবেটিস ক্রমশ মহামারীর আকার নিচ্ছে, সেই কারণেই এই রোগের চিকিৎসাও পুর-ক্লিনিকে করা হচ্ছে। এ ছাড়া ১৬টি ক্লিনিকে জলাতঙ্কের প্রতিষেধক দেওয়ার ব্যবস্থাও হয়েছে।’’
সরকারি ভাবে কলকাতায় পাস্তুর ইনস্টিটিউট ও শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে জলাতঙ্কের প্রতিষেধক দেওয়া হয়। কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই প্রতিষেধকের সরবরাহ নিয়ে অভিযোগ ওঠে। পুরসভার ক্লিনিকে এই প্রতিষেধকের ব্যবস্থা হওয়ায় সাধারণ মানুষ অনেকটাই উপকৃত হবেন বলে দাবি পুরকর্তাদের। তপনবাবু বলেন, ‘‘প্রত্যেক বরো-তে একটি করে এবং ১০ নম্বর বরোর এলাকা অনেকটাই বেশি হওয়ায় সেখানে দু’টি ক্লিনিক থেকে ওই টিকা সরবরাহ হয়। কিন্তু টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও এলাকার ভাগ নেই। যে কোনও জায়গার মানুষ যে কোনও এলাকা থেকেই টিকা নিতে পারবেন।’’
১৪১টি ওয়ার্ডের প্রত্যেকটিতেই একটি করে স্বাস্থ্য ক্লিনিক রয়েছে। সেখানে এক জন করে ডাক্তার, চার জন করে মাল্টিপারপাস হেল্থ অ্যাসিস্ট্যান্ট, এক জন হেল্থ সুপারভাইজার থাকার কথা। এ ছাড়া থাকেন কয়েক জন ফিল্ড ওয়ার্কার এবং মহিলা স্বাস্থ্যকর্মী। কিন্তু বাস্তব ছবিটা হল, বেশ কিছু ক্লিনিকেই ডাক্তার পাওয়া যায় না। হেল্থ সুপারভাইজার পাওয়া যায় না বহু জায়গাতেই। নিয়ম অনুযায়ী সকাল আটটা থেকে দুপুর দুটো পর্যন্ত ক্লিনিক খোলা থাকার কথা, কিন্তু বেলা ১টা বাজতে না বাজতেই ক্লিনিকে তালা ঝুলেছে, এমন অভিজ্ঞতাও অনেকেরই। জ্বর ছাড়া অন্য সাধারণ অসুস্থতার সমস্যা নিয়ে গেলে গুরুত্ব দেওয়া হয় না, এমন অভিযোগও ওঠে।
কিন্তু পুরসভা যদি স্বাস্থ্য ক্লিনিক খুলেই থাকে, তা হলে যে কোনও রোগীকে পরিষেবা দেওয়াটাই তো তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্রই রোগীকে চিকিৎসা না দিয়ে ফিরিয়ে দিতে পারে না। পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্তার কথায়, ‘‘সরকারি হাসপাতালের আউটডোরের সঙ্গে পুরসভার স্বাস্থ্য ক্লিনিককে গুলিয়ে ফেললে হবে না। শুধুমাত্র জনস্বাস্থ্যের বিষয়গুলি নিয়েই পুরসভা কাজ করে। তাই ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গির ক্ষেত্রে তারা যতটা তৎপর, অন্য ক্ষেত্রে ঠিক ততটা তৎপরতা দেখা যাবে না। যে রোগগুলি দ্রুত নির্ণয় এবং চিকিৎসা না হলে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার ভয় রয়েছে, সে সব ক্ষেত্রে দ্রুত তৎপর হতেই হয়। যেমন ডেঙ্গির ক্ষেত্রে রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ এলে কখন রোগী এসে সেটি নেবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করি না। ফোন করে তৎক্ষণাৎ রোগীকে তা জানিয়ে দেওয়া হয়।’’
মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য পুরসভার প্রাথমিক দায়িত্ব নয়, ওটা রাজ্যের কাজ। তা সত্ত্বেও সোয়াইন ফ্লু সম্পর্কে আমরা যথেষ্ট প্রচার চালিয়েছি। আগে পুরসভার ক্লিনিকে কার্যত কোনও পরিষেবাই পাওয়া যেত না। এখন আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। শুধু ক্লিনিক নয়, অপারেশন থিয়েটার-সহ একটি মাতৃসদনও তৈরি হয়েছে।’’
কিন্তু তা-ও বহু ক্লিনিকে কেন এখনও ডাক্তার মেলে না? কেন স্বাস্থ্যকর্মীদের ভরসাতেই যেতে হয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে? মেয়র বলেন, ‘‘গোটা রাজ্যেই এখন ডাক্তারের আকাল। পুরসভা তো রাজ্যের বাইরে নয়। অনেক সময়ে যে ডাক্তারদের আমরা নিয়োগ করি, তাঁরা বাড়তি সুবিধার জন্য সরকারি হাসপাতাল বা অন্যত্র যান। এটা আমাদের হাতে নেই। পুরসভা তো মেডিক্যাল কলেজ খুলতে পারবে না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy