Advertisement
০৬ মে ২০২৪

হাজত থেকেই শিশুকন্যাকে ফ্ল্যাটের চাবি

সাত মাসের শিশুকন্যার মায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। বাবা এবং ঠাকুরমা সেই মৃত্যুর মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে রয়েছেন জেল হেফাজতে।

আশ্রয়: রবিবার দাদু-দিদার সঙ্গে বাবার ফ্ল্যাটে গিয়ে ওঠে সেই শিশুকন্যা। নিজস্ব চিত্র

আশ্রয়: রবিবার দাদু-দিদার সঙ্গে বাবার ফ্ল্যাটে গিয়ে ওঠে সেই শিশুকন্যা। নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৩২
Share: Save:

সাত মাসের শিশুকন্যার মায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। বাবা এবং ঠাকুরমা সেই মৃত্যুর মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে রয়েছেন জেল হেফাজতে। অভিযোগ, বালতির জলে ডুবিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল একরত্তি শিশুকন্যাটিকেও। সেই ঘটনার পরে হাজতে বসেই পুলিশকে নিজের ফ্ল্যাটের চাবি মেয়ের জন্য দিয়ে দিতে বলেন ওই শিশুকন্যার বাবা। সেই মতো রবিবার, দুপুরে একরত্তি মেয়েকে নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে ওঠেন তার দাদু-দিদা। আপাতত তাঁরা সেখানেই থাকবেন। পুলিশ জানায়, শিশুটির বাবা তাঁদের বলেছেন, ‘‘মেয়েকে দিয়ে দিন। ভাল থাকুক। ওই ফ্ল্যাটে আমি আর যাব না!’’

গত ৩ ফেব্রুয়ারি মানিকতলার শ্রীকৃষ্ণ কলোনির শ্বশুরবাড়ির ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় অসীমা রায় (২৩) নামে এক তরুণীর মৃতদেহ। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, বালিশ চাপা দিয়ে মারা হয়েছে অসীমাকে। মৃতার বাপের বাড়ির লোকজন মানিকতলা থানায় অসীমার স্বামী বিশ্বজিৎ রায় এবং শাশুড়ি শ্যামলী রায়ের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, অসীমার মৃত্যুর খবর শুনে বিশ্বজিৎদের ফ্ল্যাটে ঢুকে তাঁরা দেখেন, তরুণীর মৃতদেহ খাটের উপরে পড়ে। তবে বিশ্বজিৎ এবং অসীমার সাত মাসের শিশুকন্যাকে তাঁরা দেখতে পাননি। এর পরে খোঁজাখুঁজিতে খাটের নীচের একটি বালতির মধ্যে থেকে উদ্ধার হয় ওই শিশুকন্যা। বালতির জলে ওই শিশুকন্যাকে ডুবিয়ে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ। এর পরে শিশুটিকে নিয়ে হাসপাতালে যান প্রতিবেশীরা। ভাঙচুর চালানো হয় বিশ্বজিৎদের ফ্ল্যাটে। পুলিশ বিশ্বজিৎ এবং শ্যামলীকে গ্রেফতার করে ফ্ল্যাটে তালা লাগিয়ে দেয়।

পুলিশ জানায়, চিকিৎসার পরে ওই শিশুকন্যাকে তার দিদা সন্ধ্যা প্রামাণিকের কাছে রাখা হয়। শ্রীকৃষ্ণ কলোনিতেই দাদু-দিদার সঙ্গে থাকছিল ওই শিশু। তার দাদু গৌতম প্রামাণিক ভ্যান চালান। বিশ্বজিৎদের মতো সরকারি ফ্ল্যাট তাঁরা পাননি। বস্তির এক ফালি ঝুপড়িতে তাঁদের বাস। এক দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ঝুপড়ির খাটে ঘুমোচ্ছে সাত মাসের শিশুটি। নীচে ভাত খেতে বসেছেন দাদু-দিদা। গৌতম বলেন, ‘‘আমরা নাতনিকে ভাল ভাবে মানুষ করতে চাই। প্রতিবেশীরা বলছেন, বিশ্বজিৎদের ওই ফ্ল্যাট তালাবন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। আমাদের দিলে একটু ভাল করে থাকতে পারি।’’ এর পরে প্রতিবেশীরাই গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা এবং তাঁর স্বামীকে নিয়ে মানিকতলা থানায় যান। পুলিশ তাঁদের জানায়, তদন্তের জন্য ওই ফ্ল্যাট থেকে ফরেন্সিকের নমুনা সংগ্রহ করা হয়ে গিয়েছে। ওই ঘর তাঁদের আর কাজে লাগছে না। তবে বিশ্বজিতের সম্মতি ছাড়া এ ভাবে ফ্ল্যাটের চাবি দিয়ে দেওয়া যায় না। এর পরে পুলিশ কথা বলে বিশ্বজিতের সঙ্গে। থানার তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘বিশ্বজিতকে বিষয়টি জানানোয় রাজি হয়ে গিয়েছে। চাবি তুলে দেওয়া হয়েছে বাচ্চাটার প্রতিবেশীদের হাতে।’’

শ্রীকৃষ্ণ কলোনির বস্তির বাসিন্দা বুবাই দাস নামে এক যুবক বলেন, ‘‘থানা থেকে ফিরে বৈঠক করে আমরা চাবিটা ওই শিশুর দিদাকে দিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। তবে ১৮ বছর হওয়ার পরেই ওই ঘরের মালিক হবে শিশুটি। তার আগে সে যদি নিজের ইচ্ছেয় বিয়ে করে, তা হলে ফ্ল্যাট পাবে না। সেই মতো কাগজপত্র তৈরি করানো হচ্ছে।’’

এ দিন দুপুরে বন্ধ ফ্ল্যাটের তালা খুলে নাতনিকে নিয়ে ঢোকেন দাদু-দিদা। প্রতিবেশীরা ভাঙচুর চালানোয় ফ্ল্যাটের ভিতরের অবস্থা লন্ডভন্ড। খাটের কাছে দাঁড়িয়ে কেঁদে ফেলেন শিশুকন্যার দিদা সন্ধ্যা। হাত দেখিয়ে বলেন, ‘‘এই খাটেই তো আমার মেয়েটা শুয়ে ছিল। এখানে থাকতে পারব তো?’’ শিশুর দাদু গৌতম স্ত্রীকে সান্ত্বনা দিয়ে নাতনিকে দেখিয়ে বলেন, ‘‘আমাদের তো এই মেয়ে রয়েছে। একেই আমরা বড় করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Murder Accused
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE