Advertisement
০৬ মে ২০২৪
ভবানীপুর

প্রৌঢ়া-মৃত্যুর জট কাটল না তিন দিনেও

ভবানীপুরের বকুলবাগান রোডের বাড়ি থেকে প্রৌঢ়া সুনন্দা গঙ্গোপাধ্যায়ের দেহ উদ্ধারের পরে তিন দিন কেটে গেলেও রহস্যের জট কাটাতে পারল না পুলিশ। ধোঁয়াশা কাটাতে বুধবার ওই বাড়িতে গিয়ে ঘটনার পুনর্গঠনের চেষ্টা করেন তদন্তকারীরা। ছিলেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরাও।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৬ ০০:৩১
Share: Save:

ভবানীপুরের বকুলবাগান রোডের বাড়ি থেকে প্রৌঢ়া সুনন্দা গঙ্গোপাধ্যায়ের দেহ উদ্ধারের পরে তিন দিন কেটে গেলেও রহস্যের জট কাটাতে পারল না পুলিশ। ধোঁয়াশা কাটাতে বুধবার ওই বাড়িতে গিয়ে ঘটনার পুনর্গঠনের চেষ্টা করেন তদন্তকারীরা। ছিলেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরাও। তবে এক দিনে কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ায় আজ, বৃহস্পতিবার ফের সেখানে যাবেন পুলিশ ও ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। সুনন্দাদেবীর চেহারার মাপের একটি পুতুল তৈরি করে তাঁরা ঘটনার পুনর্গঠনের চেষ্টা করবেন। মৃত অবস্থায় তাঁকে যে ভাবে নালার মধ্যে পাওয়া গিয়েছিল, সেই ভাবে তাঁরা বিভিন্ন জায়গা থেকে পুতুলটি সেখানে ফেলবেন। এই মৃত্যু খুন না দুর্ঘটনা, এ ভাবেই খতিয়ে দেখবেন তদন্তকারীরা।

যদিও সোমবার সকালে সুনন্দাদেবীর দেহ উদ্ধারের পরে ওই রাতেই পুলিশ খুনের মামলা রুজু করেছে। কারণ, ঘটনার পরে বিষয়টিকে খুন বলে জানিয়ে এর পিছনে প্রোমোটার চক্রের হাত থাকার সন্দেহ প্রকাশ করেন প্রতিবেশী ও স্থানীয়দের একাংশ।

তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, রবিবার সকাল ন’টা নাগাদ শেষ বারের মতো সুনন্দাদেবীকে জীবিত অবস্থায় দেখা যায়। ওই দিন সকালে তাঁর কাছে আসেন এক পথশিশুর মা। তাঁর সঙ্গে চা খান সুনন্দাদেবী। এর পরে দরজা বন্ধ করে তিনি চলে যান বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন ওই মহিলা। তদন্তকারীরা জেনেছেন, ওই মহিলার আগে এক কাঠমিস্ত্রিকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন সুনন্দাদেবী। কিছু আসবাবপত্র তৈরির মাপজোক করার জন্য তাঁকে ডেকে পাঠানো হয় বলে দাবি ওই কাঠমিস্ত্রির।

এ ছাড়া, ওই বাড়িতে মাঝেমধ্যে যাতায়াত করা কয়েক জন ভবঘুরের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জেনেছে, রবিবার সকাল থেকে দরজা ভেজানো ছিল। বেলার দিকে সুনন্দাদেবীর বাড়ির বারান্দায় আশ্রয় পাওয়া এক বালক তাঁকে ডাকাডাকি করলেও কোনও সাড়া পায়নি। সোমবার সকালেও একই অবস্থা দেখে সে বাড়ির ভিতরে ঢুকে নালায় সুনন্দাদেবীকে পড়ে থাকতে দেখে। তার চিৎকারে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা।

পুলিশ জানায়, বুধবার দুপুরে ডিসি (দক্ষিণ) মুরলিধর শর্মার নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে যায় তদন্তকারীদের একটি দল। যেখান থেকে ওই বৃদ্ধার দেহ উদ্ধার হয়েছিল, সেই নালার মধ্যে বিভিন্ন দিক থেকে তদন্তকারী দলের সদস্যেরা ঢোকার চেষ্টা করেন। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘ওই বৃদ্ধার মৃত্যু নিয়ে আমরা ধোঁয়াশায়। মৃত্যুর সম্ভাব্য সমস্ত দিক দেখার জন্যই এ সব করা হয়েছে। বৃদ্ধা নিজে নালায় পড়ে গিয়েছেন, নাকি কেউ তাঁকে জোর করে ভিতরে ঢুকিয়ে খুন করেছে, তা জানার চেষ্টা চলছে।’’

২০০৮ সালে শরৎ বসু রো়ডে বহুতল থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছিল এক মহিলার। সেই তদন্তেও বহুতল থেকে থেকে বালিশ ফেলে ঘটনাটি বোঝার চেষ্টা করেছিলেন তদন্তকারীরা। ওই মহিলা আত্মহত্যা করেছিলেন।

সুনন্দাদেবীর ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, তাঁর মাথার ডান দিকে ও ডান হাতে ক্ষত রয়েছে। বুধবার ঘটনাস্থল ফের ঘুরে দেখার পরে তদন্তকারীরা জানান, ওই নালায় জোর করে কাউকে ঢোকাতে গেলে শরীরের বিভিন্ন অংশে আঁচড়ের দাগ থাকার কথা। যা সুনন্দাদেবীর দেহে ছিল না বলেই দাবি করেছে পুলিশ।

তবে তদন্তকারীদের একাংশের অনুমান, ওই নালা থেকে কিছু তুলতে গিয়ে সম্ভবত পড়ে যান সুনন্দাদেবী। তাতেই অল্প জলে চোখমুখ ডুবে শ্বাস আটকে মৃত্যু হয় তাঁর। মঙ্গলবার প্রথম ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা মৃতদেহের ছবি এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্ট চেয়েছেন তদন্তকারীদের কাছে। তা পেলেই তাঁরা নিজেদের মত জানাবেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।

পুলিশ জানায়, এই মৃত্যুর বিষয়ে ধোঁয়াশা কাটাতে তিন দিনে প্রায় ১৬ জনকে জেরা করেছেন তদন্তকারীরা। যার মধ্যে রয়েছেন, ওই এলাকার এক প্রোমোটার, প্রৌঢ়ার স্বামী ও আরও কয়েক জন। ওই বাড়িতে পথশিশুদের জন্য একটি স্কুল চালাতেন সুনন্দাদেবী। সেই স্কুলের বেশ কয়েকজনের নিয়মিত যাতায়ত ছিল তাঁর কাছে। তাঁদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্তকারীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Police Bhawanipure
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE