Advertisement
E-Paper

‘কী কষ্ট পেয়েছে মেয়েটা, বুঝছি’

মায়ের আক্ষেপ, ‘‘শুধু দু’লক্ষ টাকা দিতে দেরি হওয়ায় আমার মেয়েটাকে খুনই করে দিল ওরা!’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:২০
পূজা দাস

পূজা দাস

২৬ জানুয়ারি রাতে শেষ বার ভাল ভাবে কথা হয়েছিল মেয়ের সঙ্গে। সে দিনও শ্বশুরবাড়িতে দেওয়ার জন্য দু’লক্ষ টাকা জোগাড় করে রাখতে বাবা-মাকে অনুরোধ করেছিলেন তিনি।

শনিবার রাতে মৃত্যু হয়েছে সেই মেয়ে, পূজা দাসের। ঘটনার চব্বিশ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও চার জনের মধ্যে এখনও দুই অভিযুক্ত অধরা। তা ঘিরে ক্ষোভে ফেটে পড়ে মৃতার মা নন্দিতা মাঝি সোমবার বলেন, ‘‘এখন বুঝতে পারছি শেষের ক’টা দিন কী নির্যাতন হয়েছে আমার মেয়ের উপরে।’’ এ দিন অবশ্য তাঁদের বিরুদ্ধেও মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে ভাঙচুরের অভিযোগ দায়ের হয়েছে সেই পরিবারের তরফে।

মায়ের মনে পড়ছে, ১০ জানুয়ারি, পূজার জন্মদিনে জামাইয়ের সঙ্গে কয়েক ঘণ্টার জন্য বাপের বাড়ি এসেছিলেন মেয়ে। সে দিনও শ্বশুরবাড়িতে ফেরার আগে একই কথা মনে করিয়েছিলেন বছর চব্বিশের সদ্য বিবাহিতা মেয়ে। মায়ের অভিযোগ, ‘‘২৬ জানুয়ারিও কথা বলার ফাঁকে দু’লক্ষ টাকার কথাটা মনে করিয়ে দিয়েছিল পূজা। তার পর থেকে ফোন করলেও ওর মোবাইল বেশির ভাগ সময়ে বেজে যেত। অনেক সময়ে ফোনটা কেটেও দিত। কখনও নিজে ফোন করলেও কথার মাঝেই ফোন কেটে দিত। সব কথা তো বলত না, বুঝতেও পারিনি। এখন বুঝছি, কত কষ্ট পেয়েছে মেয়েটা।’’

দশম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে ফোন কিনে দিয়েছিলেন বাবা-মা। তা নিয়েই শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিলেন মেয়ে। পূজার বাবার অভিযোগ, ‘‘মাত্র দু’মাস আগে বিয়ে হয়েছিল মেয়েটার। এর মধ্যেই সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল ওকে। মেয়ে আমাদের সঙ্গে স্বাভাবিক ভাবে কথা পর্যন্ত বলত না। মনে হয় টাকার জন্য শ্বশুরবাড়িতে ওকে নির্মম অত্যাচার করা হত।’’

এ দিন আলিপুর আদালতের সামনে কথা বলতে বলতে মাঝেমাঝেই জ্ঞান হারাচ্ছিলেন পূজার মা নন্দিতা। পরিজনেরা তাঁর চোখমুখে জল দিলে আবার একটু একটু করে কথা বলছিলেন। মায়ের আক্ষেপ, ‘‘শুধু দু’লক্ষ টাকা দিতে দেরি হওয়ায় আমার মেয়েটাকে খুনই করে দিল ওরা!’’

এ দিন দুপুরে পূজার স্বামী স্বপন দাস ও ননদাই তাপস চন্দ্রকে আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁদের ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। মৃতার পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে হরিদেবপুর থানার পুলিশ তাঁর স্বামী, ননদাই, ননদ ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে খুন, বধূ-নির্যাতন ও পণের দাবিতে বধূমৃত্যুর মামলা রুজু করেছে। কিন্তু মৃতার শাশুড়ি ও ননদ এখনও পলাতক। তাদের বিরুদ্ধেও অনেক অভিযোগ পূজার মা-বাবার। ওই দু’জন কেন এখনও ধরা পড়েনি, তা নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা।

পূজার শ্বশুরবাড়ির তরফে দাবি করা হয়েছে এটি আত্মহত্যা। তবে তা মানতে নারাজ পরিবার। পূজার মা এ দিন বলেন, ‘‘রবিবার সকালে হাসপাতালে যাওয়ার পরে জামাই আমাদের বলেছিল, রবিবার সকাল সাতটা নাগাদ স্নান করার পরে সাড়ে সাতটা নাগাদ জামাইয়ের অফিসঘরে ঢুকে পূজা গলায় দড়ি দেয়।’’ তাঁর অভিযোগ, জামাই তথ্য ঢাকতে সব কিছু লুকোচ্ছে। পূজাকে রাতেই খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে সন্দেহ তাঁদের। মৃতার মা এ দিন বলেন, ‘‘আমার মেয়েকে যারা খুন করেছে, তাদের কঠোর শাস্তি হোক, এটাই আমি চাই।’’ সেই দাবির প্রেক্ষিতে লালবাজারের এক কর্তার আশ্বাস, ‘‘পলাতক শাশুড়ি ও ননদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’

Crime Mysterious Death Bride Dowry Puja Das পূজা দাস
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy