জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, আগামী তিন বছরের মধ্যে যক্ষ্মামুক্ত বাংলা গড়তে চায় রাজ্য প্রশাসন। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতাল কিংবা চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বার থেকে যক্ষ্মায় আক্রান্তদের তথ্য আসছে না বলেই পর্যবেক্ষণ স্বাস্থ্য আধিকারিকদের। সেই কারণে রোগীদের একাংশ সম্পর্কে পুরোপুরি অন্ধকারে থাকতে হচ্ছে সরকারকে। এ বার সেই গড়িমসিতেই রাশ টানতে চাইছে স্বাস্থ্য দফতর। তথ্য গোপনের অভিযোগে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল ও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের জারি করা নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৬৯ ও ২৭০ ধারায় মামলা দায়ের করা হবে। তাতে অভিযুক্তের আর্থিক জরিমানা ও কারাদণ্ড হতে পারে। স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, জীবনের পক্ষে বিপজ্জনক, এমন কোনও সংক্রামক রোগ ছড়ানোর ঝুঁকির কথা জেনেও বিষয়টি অবহেলা করার অভিযোগে ওই দুই ধারা কার্যকর করা যায়। এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘আইনের ধারা অনুযায়ী শাস্তির পাশাপাশি ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট আইনে সরকারি প্রকল্পে অসহযোগিতার অভিযোগে হাসপাতাল বা চিকিৎসা কেন্দ্রের লাইসেন্সও বাতিল হতে পারে। সকলকে বার বার বলা হয়েছিল, তথ্য ঠিক ভাবে স্বাস্থ্য দফতরকে জানাতে হবে। কিন্তু অনেকেই তা মানছেন না।’’ স্বাস্থ্যকর্তারা আরও জানাচ্ছেন, এত দিন যক্ষ্মা সম্পর্কে দফতরকে জানাতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু তা না মানলে কী শাস্তি হতে পারে, সেটা অনেকেই জানতেন না। তাই এ বারে সকলকে আইনের বিধান উল্লেখ করে সতর্ক করে দেওয়া হল।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ২০১৮ সাল থেকে দেশে যক্ষ্মা ‘নোটিফায়েবল ডিজ়িজ়’ বলে চিহ্নিত হয়েছে। অর্থাৎ, সেই রোগ যদি বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে বাডাক্তারের চেম্বারে চিহ্নিত হয়, তা হলেও তা সরকারকে জানানোর দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। বেসরকারি ক্ষেত্র থেকে যে তথ্য আসছে, তা ঠিকঠাক নয় বলেই মত স্বাস্থ্যকর্তাদের। জনস্বাস্থ্য বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘Ni-kshay পোর্টালের মাধ্যমে তথ্য জানানোর কথা বলা রয়েছে।প্রত্যেক রোগীর তথ্য জানানোর জন্য জাতীয় যক্ষ্মা দূরীকরণ প্রকল্পে ৫০০ টাকা ভাতা পাওয়ারও ব্যবস্থা রয়েছে।’’ স্বাস্থ্যকর্তারা আরও জানাচ্ছেন, প্রতিটি বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানকে এক জন স্থায়ী নোডাল অফিসার নিয়োগ করতে বলা হয়েছে। তিনি এবং ব্যক্তিগত চেম্বার করা চিকিৎসকেরা প্রতিনিয়ত জেলার যক্ষ্মা আধিকারিকদের সঙ্গেযোগাযোগ রাখবেন। এটাও বলা রয়েছে, রোগীর সেরে ওঠার তথ্য ওই পোর্টালে আপলোড করলে আরও ৫০০ টাকা ভাতা মিলবে। এক কর্তার কথায়, ‘‘যক্ষ্মা দূরীকরণে এগিয়ে আসতে বেসরকারি ক্ষেত্রকে উৎসাহ দিতে ভাতার ব্যবস্থা থাকলেও তা অনেকেই গুরুত্ব দিচ্ছিলেন না। তাই এ বার শাস্তির বিধান।’’