Advertisement
E-Paper

এত দেরিতে এসে কী করবে ফরেন্সিক, প্রশ্ন ক্ষুব্ধ জনতার

২৪ ঘণ্টারও বেশি পরে ফরেন্সিকের তৎপরতা দেখে প্রশ্ন উঠছে, এত দেরিতে শুরু করা এই পরীক্ষানিরীক্ষা তদন্তের ক্ষেত্রে কতটা কার্যকর হবে? আদৌ হবে কি?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:০৭
নাগেরবাজারের বিস্ফোরণস্থলে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। ছবি: সৌভিক দে

নাগেরবাজারের বিস্ফোরণস্থলে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। ছবি: সৌভিক দে

নাগেরবাজারের কাছে কাজিপাড়ায় বিস্ফোরণের ২৪ ঘণ্টারও বেশি পরে অকুস্থলে এসে ফিতে নিয়ে মাপামাপি শুরু করলেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা! ঘটনাস্থল তত ক্ষণে ধুয়েমুছে কার্যত সাফ। সেই সাফ জায়গা ঘিরে দিয়ে নমুনা নিলেন তাঁরা। বিস্ফোরণস্থল থেকে বোমার অভিঘাত কত দূরে পৌঁছেছিল, মাপলেন ফিতে দিয়ে।

২৪ ঘণ্টারও বেশি পরে ফরেন্সিকের তৎপরতা দেখে প্রশ্ন উঠছে, এত দেরিতে শুরু করা এই পরীক্ষানিরীক্ষা তদন্তের ক্ষেত্রে কতটা কার্যকর হবে? আদৌ হবে কি?

বুধবার বেলা ১২টা নাগাদ সিআইডি পৌঁছয় কাজিপ়়াড়ায়। আসেন সিআইডি-র বোমা বিশেষজ্ঞেরাও। একটু পরেই কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি (সিএফএসএল) থেকে আসেন এক দল প্রতিনিধি। মঙ্গলবার বিস্ফোরণের পরেই ঘটনাস্থল ধুয়েমুছে সাফ করে দিয়েছিল পুলিশ। এ দিন সিআই়ডি-র এক কর্তা প্রথমে বলেন, ‘‘আরে রাস্তা ধো দিয়া!’’ সিআইডি জানায়, বম্ব স্কোয়াড নমুনা সংগ্রহের আগে নেতা-মন্ত্রী থেকে অসংখ্য সাধারণ মানুষ ঘুড়ে বেড়িয়েছেন ঘটনাস্থলে। তাতে বেশ কিছু নমুনা নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন তদন্তকারীরা। সিআইডি-র বম্ব স্কোয়াড অকুস্থলে পৌঁছেছিল ঘটনার তিন ঘণ্টা পরে।

নমুনা নষ্ট হওয়ায় বিরক্তি প্রকাশ করেন ফরেন্সিক প্রতিনিধিরাও। ফরেন্সিক দলের এক সদস্যকে বলতে শোনা যায়, ‘‘সব ধুয়ে মুছে সাফ করে দিয়েছে কেন! আহতদের চটি, ছাতা, ফলের টুকরো, ভাঙা ধাতব অংশ কোথায় গেল?’’ উত্তরে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের কর্তারা জানান, কিছু গুরুত্বপূর্ণ নমুনা মঙ্গলবারেই নিয়ে গিয়েছে বম্ব স্কোয়াড। এই বক্তব্যে সন্তুষ্ট হননি ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা তুলোয় রাসায়নিক লাগিয়ে রাস্তা থেকে ঘষে ঘষে নমুনা সংগ্রহ করতে থাকেন। মাপামাপি করতে থাকেন ফিতে দিয়ে।

ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, আশপাশের আটটি জায়গায় ওই বোমার স্‌প্লিন্টার বিঁধেছিল। উল্টো দিকে একটি মাংসের দোকানের নীচেও আঘাতচিহ্ন মিলেছে। অন্য একটি দোকানের শাটারে তিনটি গর্ত দেখেছেন তদন্তকারীরা। একটি বেশ বড় মাপের গর্ত। তদন্তকারীরা মেপে দেখেছেন, ঘটনাস্থল থেকে বাঁ দিকের কোণ বরাবর তিনটি গর্তের দূরত্ব ২৭, ২৯ এবং ৩৪ ফুট। রাস্তার উল্টো দিকে ২১ এবং ২৫ ফুট দূরত্বে স্‌প্লিন্টারের চিহ্ন মিলেছে। একটি দোকানের শাটারের ভিতর দিয়ে স্‌প্লিন্টার ঢুকে একটি শো-কেসের কাচ ভেঙে দেয়। ভাঙা শো-কেসের কাচের নমুনা সংগ্রহ করেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। একটি বন্ধ ম্যানহোল খুলে সেখান থেকেও নমুনা সংগ্রহ করতে দেখা যায় তাঁদের। আশপাশের ক্ষতিগ্রস্ত ফ্ল্যাটে যান তাঁরা। কথা বলেন সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে। মঙ্গলবার বিস্ফোরণস্থল থেকে বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করে কামারডাঙা ফাঁড়িতে সেগুলো রেখেছিল পুলিশ। সন্ধ্যায় সেই ফাঁড়ি থেকেও নমুনা সংগ্রহ করেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা।

ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলে ফিতে দিয়ে যখন ফরেন্সিক দলের মাপজোক চলছিল, সেই সময় এলাকার বাসিন্দাদের একাংশকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। কিছু বাসিন্দার প্রশ্ন, এত পরে জায়গা ঘিরে পরীক্ষার কাজ শুরু করে কিছু লাভ হবে কি? সবই তো ধুয়েমুছে সাফ। তাঁদের মতে, একটা বাচ্চা মারা গেল। কয়েক জন গুরুতর আহত হলেন। এই ধরনের একটি গুরুতর ঘটনায় তদন্ত শুরু করতে যারা এত দেরি করে, তাদের তদন্তের উপরে আদৌ কতটা ভরসা করা যায়, সেই প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে।

Nagerbazar Blast Investigation Forensic Sample
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy