বেলগাছিয়া ভাগাড়-বিপর্যয়ের পরিপ্রেক্ষিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অব্যবস্থার জন্য হাওড়া পুরসভার উপরে জরিমানা ধার্য করার নির্দেশ দিল জাতীয় পরিবেশ আদালত। পুরসভার দায়বদ্ধতা সম্পর্কে অসন্তোষ প্রকাশ করে আদালত রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে জরিমানার বিষয়টি দেখতে বলেছে। সেই সঙ্গে পর্ষদকে বলা হয়েছে, ধারাবাহিক ভাবে নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য তার হিসাব করে পরিবেশগত ক্ষতির আর্থিক মূল্য নির্ধারণ করতে। আগামী দু’মাসের মধ্যে পর্ষদকে এ ব্যাপারে ‘কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট’ দিতে হবে।
এখানেই শেষ নয়। ১৮ অগস্ট মামলার পরবর্তী শুনানিতে হাওড়ার পুর কমিশনারকে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকতে বলেছে জাতীয় পরিবেশ আদালত। তাদের নির্দেশের পরিসর থেকে বাদ পড়েনি রাজ্য নগরোন্নয়ন ও পুর বিষয়ক দফতরও। হাওড়া পুর এলাকায় কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিধি পালনে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে দফতরের তরফে, তা হলফনামা দিয়ে জানাতে বলা হয়েছে।
তবে যে ভাবে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতার কারণে হাওড়া পুরসভাকে বিঁধেছে আদালত, সেটাই নির্দেশের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক বলে মনে করছেন অনেকে। আদালত বলেছে, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিতে যে সমস্ত নিয়মের উল্লেখ রয়েছে, সেগুলি পালনের ব্যাপারে হাওড়া পুরসভার তরফে নির্দিষ্ট উত্তর মেলেনি। আদালতের পর্যবেক্ষণ, পুরসভার তরফে দেওয়া হলফনামায় না আছে নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনের ব্যাখ্যা, না আছে গৃহীত পদক্ষেপের বিবরণ। বরং, যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, তা অস্পষ্ট এবং গুরুত্বহীন। পরিবেশ আদালতের মন্তব্য, এমন গুরুতর পরিস্থিতিতে এমন উত্তর অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
প্রসঙ্গত, বেলগাছিয়া ভাগাড়-বিপর্যয়ের পরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গাফিলতি নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, ভাগাড়ের বহন ক্ষমতা যে বহু আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে, তা আগেই একাধিক রিপোর্টে উঠে এসেছে। তার পরেও প্রশাসন সক্রিয় হয়নি। ফলে, বিষয়টি শুধু পরিবেশগত নয়, এর সঙ্গে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকির দিকটিও ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
এই প্রেক্ষিতে জাতীয় পরিবেশ আদালত মামলাটি গ্রহণ করে এবং রাজ্য সরকারের পরিবেশ ও বন দফতর, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, হাওড়ার জেলাশাসক, হাওড়া পুরসভা এবং কেএমডিএ-কে নোটিস পাঠায়। কী ভাবে এই পরিস্থিতি হল এবং এর মোকাবিলায় সব পক্ষ কী পদক্ষেপ করেছে, তা জানতে চেয়েছিল আদালত। হাওড়া পুরসভাকে একটি ‘অ্যাকশন টেকন রিপোর্ট’ও জমা দিতে বলে তারা। কিন্তু পুরসভার জমা দেওয়া সেই রিপোর্ট দেখে চূড়ান্ত অসন্তোষ প্রকাশ করেছে আদালত।
মামলার আবেদনকারী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘দীর্ঘ বছর ধরে বেলগাছিয়া ভাগাড়ের অব্যবস্থা নিয়ে বলে আসা হচ্ছিল। তার পরেও প্রশাসনের টনক নড়েনি। এত সংবেদনশীল বিষয়ে প্রশাসন কী ভাবে এতটা উদাসীন থাকতে পারে, তা অকল্পনীয়।’’
হাওড়া পুরসভার আইনজীবী অমৃতা পাণ্ডে অবশ্য জানাচ্ছেন, কোনও নিয়ম লঙ্ঘন হয়নি। বিপর্যয়ের পরে হলফনামাও জমা দেওয়া হয়েছিল পুরসভার তরফে। অমৃতার কথায়, ‘‘এ বারের নির্দেশ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)