E-Paper

প্রশাসনিক গাফিলতি, কুকুরের আশ্রয়ই বা কোথায়

কলকাতার পশুপ্রেমী থেকে পশু চিকিৎসকদের বড় অংশই প্রশাসনিক গাফিলতির দিকে আঙুল তুলছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:৩০
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

নির্বীজকরণ ও প্রতিষেধক প্রদানের কাজে দীর্ঘদিনের প্রশাসনিক গাফিলতি ঢাকতেই কি যেন তেন প্রকারে পথকুকুরদের সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করা হচ্ছে? সেই কারণেই কি কুকুরের কামড় ঠেকানোর সহজ সমাধান হিসাবে তাদের এলাকাছাড়া করার নিদান দেওয়া হচ্ছে? বাড়তে থাকা জলাতঙ্কের উদাহরণ দিয়ে দিল্লি এবং সংলগ্ন এলাকার সে সব জায়গায় বেশি জনসমাগম হয়, সেই এলাকা থেকে পথকুকুর সরিয়ে ফেলার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে বহু দিনের এই প্রশ্ন নতুন করে উঠতে শুরু করেছে। দেশের শীর্ষ আদালতের এই অবস্থান অবৈজ্ঞানিক বলেও মত অনেকের। আদালতের এই নির্দেশ ‘অ্যানিম্যাল বার্থ কন্ট্রোল রুল, ২০২৩’-এর পরিপন্থী বলেও দাবি তাঁদের। সেই সঙ্গেই তাঁদের প্রশ্ন, কুকুরের কামড়ের বিপদ এড়াতে পর্যাপ্ত সংখ্যায় নির্বীজকরণ ও প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে না কেন? কেন কুকুর কামড়াচ্ছে, সেই ভাবনাই বা নেই কেন?

কলকাতার পশুপ্রেমী থেকে পশু চিকিৎসকদের বড় অংশই প্রশাসনিক গাফিলতির দিকে আঙুল তুলছেন। তাঁদের দাবি, যথাযথ নির্বীজকরণ হচ্ছে না, উল্টে এলাকাছাড়া করে এমন অবস্থা তৈরি করা হচ্ছে, যাতে কামড়াচ্ছে পথকুকুর। তাঁদের দাবি, পথকুকুরেরা বছরের পর বছর ধরে এই সমাজের অঙ্গ। তারা ভালই জানে, রাস্তায় কাউকে কামড়ালে মারের মুখে পড়বে। তার পরেও পথকুকুর কামড়ায় তার পরিস্থিতির চাপে। নির্বীজকরণের জন্য প্রশাসনের গাড়ি কোনও পথকুকুরকে নিয়ে যাওয়ার পরে বহু সময়েই আর আগের জায়গায় ফিরিয়ে দেয় না। এমন জায়গায় তাকে ছাড়া হয়, যেখানে সে বেমানান। অন্যদের সঙ্গে লড়াইয়ের মধ্যে সে তখন মানুষকেও কামড়াতে পারে। ফলে বুঝতে হবে, এলাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। পথকুকুরকে তার এলাকাছাড়া করা সমস্যার সমাধান নয়। পশু চিকিৎসক তমাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘নির্বীজকরণের পরে একটি কুকুর যন্ত্রণার মধ্যে থাকে। এলাকাছাড়া হওয়ায় ‘ট্রমা’ আরও বাড়ে। অন্যদের সঙ্গে লড়াই করে তখন খাবার পাওয়াও
কঠিন হয়। এই প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পথকুকুর কামড়ায়।’’

এই পরিপ্রেক্ষিতেই উঠে আসছে প্রশাসনিক গাফিলতির দিক। যথাসময়ে কাজ না করার অভিযোগ উঠছে প্রশাসনিক কর্তাদের বিরুদ্ধে। কলকাতার ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি কিছু মাত্র আলাদা নয় বলে দাবি। বছরের পর বছর সরকারি টাকা এসে হয় পড়ে থাকছে, নয়তো ব্যবহার না করতে পারার কারণে ফিরে যাচ্ছে!

জানা যাচ্ছে, কলকাতায় এই মুহূর্তে দেড় লক্ষেরও বেশি পথকুকুর রয়েছে। অথচ, এ শহরে সরকারি ডগ পাউন্ড রয়েছে মাত্র দু’টি। তাতে সব মিলিয়ে ৩০০টি কুকুর রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। যে সংখ্যায় প্রতিদিন কাজ হচ্ছে, তাতে দেড় লক্ষ কুকুরের নির্বীজকরণ ও প্রতিষেধক দিয়ে যথাযথ বন্দোবস্ত করতেই ১০ বছরের বেশি সময় পেরিয়ে যেতে পারে বলে পুরসভার কর্মীদেরই দাবি। রাজ্যের রাজধানী শহর কলকাতারই যদি এই পরিস্থিতি হয়, তা হলে আশপাশের অন্য পুরসভা এলাকাগুলির অবস্থা কী?

দীর্ঘদিন পুরসভার ডগ পাউন্ডের কাজের সঙ্গে যুক্তেরা জানাচ্ছেন, ২০০১ সালে ‘অ্যানিম্যাল বার্থ কন্ট্রোল, অ্যান্টি রেবিস প্রোগ্রাম’ নিয়ে কলকাতা পুরসভা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে কুকুরের নির্বীজকরণ করা ও প্রতিষেধক প্রদানের কাজ দেয়। ঠিক হয়, কুকুরপিছু নির্বীজকরণের জন্য কিছু টাকা দেবে কলকাতা পুরসভা, বাকি টাকা দেবে অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার বোর্ড অব ইন্ডিয়া। কিন্তু অভিযোগ, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দেওয়া হিসাবে প্রচুর গরমিল ধরা পড়ায় টাকা আটকে যায়। তৃণমূলের পুরবোর্ড ক্ষমতায় এসে সমস্তটা ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করে। ‘সোসাইটি ফর স্ট্রে কেনাইন বার্থ কন্ট্রোল, কলকাতা’ (এসএসসিবিসি-কে) নামে একটি সোসাইটিও তৈরি করা হয়। সরকারি তহবিল থেকে টাকা দেওয়া হয় পথকুকুর নির্বীজকরণের জন্য। কিন্তু টাকা ফুরিয়ে যাওয়ায় সেই প্রকল্পও ধাক্কা খায়। ২০১৭ সালে রাজ্য সরকারের প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দফতর থেকে প্রায় ৭৬ লক্ষ টাকা ধার্য হয়। তবে শর্ত দেওয়া হয়, এক বছরের মধ্যে ৭২০০টি কুকুরের নির্বীজকরণ করাতে হবে। এক পুর অফিসার বলেন, ‘‘ ৭৬ লক্ষের অর্ধেক টাকাও খরচ করা যায়নি। আসল কাজ আটকে যায় নেতাদের ফোনে তুলে আনা কুকুরের চাপে।’’ ২০২২ সালে রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনায় আরও ১৪ লক্ষ টাকা পাওয়া গিয়েছিল পথকুকুরের প্রতিষেধক দেওয়ার জন্য। ধরে নেওয়া হয়েছিল, কলকাতায় ৮৪ হাজার পথকুকুর রয়েছে। পুরকর্মীদের দাবি, চার লক্ষ টাকা খরচ করতে পারল পুরসভা। বাকি টাকা ব্যবহারই করা গেল না পরিকাঠামোর অভাবে।

এমন পরিস্থিতির দায় তবে কার? প্রশ্ন উঠছে। সঙ্গে বাড়ছে ক্ষোভও।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

KMC Supreme Court of India

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy