কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের উদ্যোগে এক নতুন প্রকল্পের সূচনা হয়েছে পরিবহণ পরিষেবায়, যার মূল উদ্দেশ্য শহর এবং শহরতলীতে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো। এই প্রকল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে গাড়ি চালানোর সময় ‘ব্লাইন্ড স্পট’-এর সমস্যা। সাধারণত দেখা যায়, চালকেরা যখন গাড়ি চালান, তখন গাড়ির একদম সামনে বা বাঁ দিক থেকে কেউ চলে এলে, চালকের পক্ষে আসনে বসে সেই ব্যক্তি বা বস্তুকে দেখা সম্ভব হয় না। সে ক্ষেত্রে বাস চালকদের নির্ভর করতে হয় কন্ডাক্টরদের ইশারার উপর। প্রচলিত লুকিং গ্লাসেও গাড়ির সামনের দৃশ্য দেখা যায় না। এই সমস্যার সমাধানে এখন বাসের কেবিনের বাঁ দিকে একটি বিশেষ আয়না বসানো হচ্ছে। এই আয়নার মাধ্যমে চালক সামনের এবং বাঁ দিকের ‘ব্লাইন্ড স্পট’ সহজেই দেখতে পাবেন, ফলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা অনেকটাই কমবে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে বেসরকারি বাস মালিকদের সংগঠনগুলির অনুরোধ, এই আয়নাগুলি যেন দ্রুত প্রতিটি বাস ও মিনিবাসে সরবরাহ করা হয়। পাশাপাশি যদি এখনও কোনও বাসে এই আয়না লাগানো না থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট গাড়িচালকের বিরুদ্ধে যেন পুলিশ কোনও অভিযোগ দায়ের না করেন। তাঁদের আরও বক্তব্য, দুর্ঘটনা রোধে শুধু প্রযুক্তিগত উন্নতি নয়, চালক ও পথচারীদের প্রতিদিন সচেতন করার ব্যবস্থাও নিতে হবে। তাঁদের প্রতিশ্রুতি, এই উদ্যোগ সফল করতে বাস-মালিক ও চালক মহল সর্বতোভাবে সহযোগিতা করবে।
পরিবহণ দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘পথ দুর্ঘটনা রোধ করতে পরিবহণ সব সময় নিত্যনতুন পদ্ধতি অনুসন্ধান করে থাকে। এ ক্ষেত্রে কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ বাস সংগঠনগুলি এবং পরিবহণ দফতরের শীর্ষ আধিকারিকেরা বসে এই ‘ব্লাইন্ড স্পট’-কে চালকদের নজরে আনতে বিশেষভাবে উদ্যোগী হয়েছে। আমরা আশা করছি এর ফলে শহরে দুর্ঘটনা অনেকটাই কমে যাবে।’’
তবে, হাওড়া স্টেশন এলাকায় পুলিশ কর্তৃক বাসের লুকিং গ্লাস, সাইড লাইট বা অন্যান্য যন্ত্রাংশ ভাঙচুরের ঘটনাও বন্ধ হওয়া জরুরি। নতুন আয়নাগুলি যেন কোনক্রমেই ভাঙা না হয়, এই বিষয়ে কলকাতা ও হাওড়া নগরপাল এবং ডিসি ট্রাফিক হস্তক্ষেপের দাবি জানানো হয়েছে বেসরকারি বাস মালিকদের তরফে। বহু ক্ষেত্রে দেখা যায় সিভিক ট্রাফিক পুলিশের তরফে বাস-মিনিবাসের গায়ে অহেতুক লাঠির আঘাত করা হয়। সে ক্ষেত্রে বাসগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাই এই বিষয়গুলিও পুলিশ প্রশাসনকে মাথায় রাখতে বলেছেন বেসরকারি পরিবহণ সংগঠনগুলি। সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিসেসের নেতা টিটু সাহা বলেন, ‘‘রাজ্য পরিবহণ দপ্তর এবং ট্রাফিক পুলিশের তরফ থেকে আমাদের কাছে নতুন প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতা চাওয়া হয়। সব ক্ষেত্রেই বাসমালিকেরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন, কিন্তু যে ভাবে ট্রাফিক পুলিশ বাসগুলির উপর কথায় কথায় জরিমানার ভার চাপিয়ে দিচ্ছে, তাতে বেসরকারি পরিবহণ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই আমরা চাইব, আমরা যেমন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছি, তেমনি জরিমানার বিষয়টি লাঘব করে আমাদের সঙ্গে পাল্টা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিক প্রশাসন।’’