যমুনাবালা সিংহ
দেখেই বোঝা যায়, গলায় সমস্যা আছে। স্বরও ভাঙা। পরনে কালো পাড়, ঘিয়ে শাড়ি। চোখে ফুটে ওঠা অসহায়তা ঢাকা পড়েনি চশমায়। ডাকঘরে অচেনা লোকের কাছে জোড়হাতে, ভাঙা গলায় বৃদ্ধার আর্জি, ‘‘একটু বলে দিন না, যাতে পুরো টাকাটা পেয়ে যাই। খুব দরকার। অপারেশন হবে। গলায় ক্যানসার।’’
বৌবাজারের সত্তরোর্ধ্ব যমুনাবালা সিংহের গলার ক্যানসার ধরা পড়ে বছরখানেক আগে। দু’বার অস্ত্রোপচার হয়েছে। নিয়মিত চলছে কেমো। কিন্তু ভাল নেই তিনি। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, আর এক বার অস্ত্রোপচার করা জরুরি। আর সেটা আগামী সপ্তাহেই। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন বৌবাজারের কাছে, শশিভূষণ দে স্ট্রিটের শাঁখারিটোলা ডাকঘরে তাঁর সঞ্চয় ৬৪ হাজার টাকা হাতে পাওয়া।
কিন্তু নোট বাতিলের জেরে সেই টাকা হাতে পাওয়ার জো নেই যমুনাদেবীর। বললেন, ‘‘গত বুধবার এক ঘণ্টারও বেশি অপেক্ষা করে পোস্ট অফিস থেকে ফিরে গিয়েছি। টাকাই ছিল না পোস্ট অফিসে।’’ তাই মঙ্গলবার দুই মেয়েকে নিয়ে আবার আসা। নিরাশ হতে হল এ দিনও।
ডাকঘর জানায়, সর্বাধিক ২৪ হাজার টাকার বেশি নগদ দেওয়া যাবে না। আবার এই টাকা নগদে নিলে বাকি ৪০ হাজার টাকা ড্রাফটে দেওয়া যাবে না। সেটা দু’সপ্তাহে দু’খেপে নগদেই তুলতে হবে।
‘‘এটা কী ভাবে সম্ভব? আগামী সপ্তাহেই মায়ের অপারেশন। অনেক নগদ টাকা দরকার। মায়ের তো আর ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড নেই,’’ বললেন যমুনাদেবীর মেয়ে সুতপা ঘোষ। শেষমেশ ডাকঘর থেকে পুরো ৬৪ হাজার টাকারই ড্রাফট নিতে বাধ্য হন তাঁরা। সুতপাদেবী বললেন, ‘‘ড্রাফট জমা দিতে ব্যাঙ্কে যাওয়া এবং সেটা ভাঙানো মানে আরও ঝক্কি আর হেনস্থা। মায়ের অসুস্থতার কথা বলে ব্যাঙ্ককে অনুরোধ করব। দরকার হলে মাকে যে-হাসপাতালে ভর্তি করানো হবে, তাদের নামে ব্যাঙ্ক ড্রাফট করিয়ে নেব। যদি তাঁরা নেন।’’
শাঁখারিটোলা ডাকঘরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘নিয়মের গেরোয় আমরা নিরুপায়। যমুনাদেবী ক্যানসারের রোগী হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে এক বার নগদে ২৪ হাজার টাকার বেশি দেওয়া যাবে না। তাই আমরা পুরো টাকা ড্রাফটে দিয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy