Advertisement
E-Paper

কেউ খোঁজ রাখেনি, পায়ে পচন উদ্ধার হওয়া সেই তরুণীর

গত ২ অক্টোবর চতুর্থীর দিন সুরুচি সঙ্ঘের পুজো উদ্বোধন করে চেতলার দিকে যাওয়ার পথে দুর্গাপুর সেতুর কাছে হঠাৎ গাড়ি থেকে নেমে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৯ ০১:৪৫
অসহায়: হাসপাতালের বারান্দায় শুয়ে শুভ্রা দাস। নিজস্ব চিত্র

অসহায়: হাসপাতালের বারান্দায় শুয়ে শুভ্রা দাস। নিজস্ব চিত্র

বাঁ পা এতটাই ফুলে রয়েছে যে, সেই পায়ের নীচে রাখা পাশবালিশটাও ছোট লাগছে। পচন ধরে পায়ের সংক্রমণ কোমর পর্যন্ত পৌঁছে এমন আকার নিয়েছে, নড়াচড়া করার অবস্থাটুকুও নেই। এসএসকেএম হাসপাতালের ভিক্টোরিয়া ওয়ার্ডের বারান্দার শয্যায় শোয়া শুভ্রা দাস ওই অবস্থাতেই বললেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মায়ের মতো আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। ওঁর লোকদের বলেছিলেন, আমার সব চিকিৎসা যেন ঠিক মতো হয়। কেমন চিকিৎসা হয়েছে, আমায় দেখলেই বোঝা যাচ্ছে। পা-টা রাখা যাবে কি না, সেটাই বুঝতে পারছি না।’’

গত ২ অক্টোবর চতুর্থীর দিন সুরুচি সঙ্ঘের পুজো উদ্বোধন করে চেতলার দিকে যাওয়ার পথে দুর্গাপুর সেতুর কাছে হঠাৎ গাড়ি থেকে নেমে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাওড়া বালিটিকুরির বাসিন্দা বছর চব্বিশের শুভ্রা জানান, সেখানেই বাড়ি ফেরার বাসে উঠতে গিয়ে পড়ে যান তিনি। কোমর এবং পায়ে চোট লাগে। মুখ্যমন্ত্রীই তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। সঙ্গী কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে সব রকমের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন। শুভ্রাকে দ্রুত হুমায়ুন কবীর সরণির বি পি পোদ্দার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। যদিও তরুণীর অভিযোগ, ‘‘ওই হাসপাতাল আমায় সে ভাবে দেখেইনি। স্রেফ একটা ইঞ্জেকশন আর কিছু এক্স-রে করে ওই দিনই ছেড়ে দেয়। বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যও আমার পরিবার অ্যাম্বুল্যান্স পায়নি। আমার বয়স্ক বাবা কোনওমতে একটি ট্যাক্সি ডেকে আনেন।’’

ওই দিন বাড়ি ফেরার পর থেকেই শুভ্রার পায়ে এবং কোমরে অসম্ভব যন্ত্রণার শুরু বলে দাবি তাঁর বাবা, পেশায় বস্ত্র কারখানার কর্মী গোপাল দাসের। তিনি বলেন, ‘‘বাড়ি ফেরার পরে ওর মা সন্ধ্যা দেখে, মেয়ের পায়ে রক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে। বি পি পোদ্দার হাসপাতাল মেয়েকে সে ভাবে দেখেইনি। বাইরের ডাক্তারকে দেখাতে বলে দিয়েছিল। আমরা স্থানীয় এক ডাক্তারকে দেখাচ্ছিলাম। পুজোর মধ্যে আর কোথায় নিয়ে যাব?’’

মুখ্যমন্ত্রী যাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠালেন, তিনি কেমন আছেন দেখতে সম্প্রতি ওই তরুণীর বাড়িতে যান হাওড়ার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা প্রাক্তন মেয়র পারিষদ বিভাস হাজরা। তিনি এ দিন বললেন, ‘‘গিয়ে দেখি, মেয়েটির পায়ে পচন ধরছে। আমাদেরই অ্যাম্বুল্যান্সে রবিবার ওকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করাই।’’

এসএসকেএমের সুপার রঘুনাথ মিশ্র জানান, ওই তরুণীর বাঁ পায়ে মূলত চোট রয়েছে। ভর্তির সময়ে তাঁর হিমোগ্লোবিন অনেক কম ছিল। সোমবার এক ইউনিট রক্ত দেওয়ার পরে এ দিন তাঁকে আরও এক ইউনিট রক্ত দেওয়া হয়েছে। রঘুনাথবাবুর কথায়, ‘‘মেয়েটির শারীরিক পরীক্ষা চলছে। অবস্থা বুঝে দ্রুত অস্ত্রোপচার করা হবে।’’ কাল, বৃহস্পতিবার শুভ্রার অস্ত্রোপচারের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবারের লোকজন।

তরুণীর চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ অবশ্য মানতে নারাজ বি পি পোদ্দার হাসপাতালের ডিরেক্টর সুপ্রিয় চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘সম্ভাব্য যা যা করার, সবই করা হয়েছিল। শুধু মেয়েটির বাড়ির লোক নন, পুলিশ এবং যে পুজো কমিটির উদ্বোধনের পরে এই ঘটনা সেখানকার কর্মকর্তারাও এসেছিলেন। তখন তো কারও থেকে কোনও অভিযোগ শুনিনি। পুলিশকে বরং রোগীর বাড়ির লোক জানিয়েছিলেন, তাঁরা
আমাদের চিকিৎসায় খুশি।’’ সুপ্রিয়বাবুর আরও দাবি, ‘‘প্রায় ১৫ দিন পরে এখন মেয়েটার হঠাৎ কী হল, সেটা কে দেখবে?’’

এসএসকেএম হাসপাতালে শোয়া শুভ্রাও বলছিলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধার করার পরেই শেষ। বিভাসবাবু (হাওড়ার কাউন্সিলর) ছাড়া গত ১৩ দিন সত্যিই কেউ আমাদের খোঁজ নিতে আসেননি!’’

SSKM Subhra Das Mamata Banerjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy