Advertisement
E-Paper

ভয়ে কাজেই এলেন না ঠিকা কর্মীরা, অভিযুক্ত শোভন-ঘনিষ্ঠ

সিন্ডিকেটের ভয়ে কাজেই এলেন না কর্মীরা। ফলে পরপর দু’দিন জোকা আইআইএমের এগ্জিকিউটিভ গেস্ট হাউজের অতিথিরা কোনও পরিষেবা পেলেন না। আন্তর্জাতিক মানের ওই অতিথি নিবাসের সাফাই ও নিরাপত্তার কাজে নিযুক্ত ৮১ জন ঠিকা কর্মীর কয়েক জন সোমবার আইআইএম চত্বরে ঢুকতে গিয়ে মূল ফটকে একদল বহিরাগতের হাতে প্রহৃত হন। ফলে ওই কর্মীরা আর কাজে যোগ দিতে পারেননি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৫৭

সিন্ডিকেটের ভয়ে কাজেই এলেন না কর্মীরা। ফলে পরপর দু’দিন জোকা আইআইএমের এগ্জিকিউটিভ গেস্ট হাউজের অতিথিরা কোনও পরিষেবা পেলেন না।

আন্তর্জাতিক মানের ওই অতিথি নিবাসের সাফাই ও নিরাপত্তার কাজে নিযুক্ত ৮১ জন ঠিকা কর্মীর কয়েক জন সোমবার আইআইএম চত্বরে ঢুকতে গিয়ে মূল ফটকে একদল বহিরাগতের হাতে প্রহৃত হন। ফলে ওই কর্মীরা আর কাজে যোগ দিতে পারেননি। মারধর যারা করেছে, সেই বহিরাগতরা তৃণমূল প্রভাবিত সিন্ডিকেটের লোক বলে অভিযোগ উঠেছে। যে সিন্ডিকেটের দাবি, কলকাতার বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে নিয়োগ করা ওই ঠিকাকর্মীদের সরিয়ে দিতে হবে। তাঁদের জায়গায় কাজ দিতে হবে স্থানীয় যুবকদের।

সোমবারের মারধরের ঘটনায় স্থানীয় তৃণমূল নেতা দেবব্রত চট্টোপাধ্যায়-সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে ঠাকুরপুকুর থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে। কলকাতা পুলিশের ডিসি (সাউথ-ওয়েস্ট) রশিদ মুনির খান বলেন, “ঠিকা কর্মীদের নিয়োগ করেছে যে সংস্থা, তারা আমাদের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে। কর্মীদের মারধর এবং আইআইএম ক্যাম্পাসে ঢুকতে বাধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে অভিযোগে।”

তিন কিলোমিটার দীর্ঘ আইআইএম ক্যাম্পাসে বেশ কয়েকটি হস্টেল ও অতিথি নিবাস থাকলেও ২০০৭ সালে এগ্জিকিউটিভ গেস্ট হাউসটি তৈরি হয়। চারতলা ওই অতিথি নিবাসে রয়েছে ১৮৭টি ঘর, ১৩টি স্যুইট, ডাইনিং হল এবং বেশ কয়েকটি ক্লাসরুম। প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য অতিথি নিবাস বা হস্টেলের মতো এই ভবনটিরও দেখভাল এবং দৈনন্দিন কাজকর্মের দায়িত্ব টেন্ডার ডেকে ‘আউটসোর্স’ করা হয়েছে।

ঠিকাদার সংস্থাটির দায়ের করা এফআইআরে বলা হয়েছে, সোমবার সকালে স্থানীয় কয়েক জন যুবক আইআইএমের মূল ফটকের সামনে জড়ো হয়। এগ্জিকিউটিভ গেস্ট হাউসের ঠিকা কর্মীরা ঢুকতে গেলে তাঁদের উপর চড়াও হয় ওই যুবকেরা। প্রথমে ধমক-ধামক, কটূক্তি, তার পর বলপ্রয়োগ করে ঠিকাকর্মীদের প্রবেশ আটকায় তারা। রীতিমতো মারধর করে তাঁদের বাসে তুলে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। ঠিকা কর্মীদের অভিযোগ, তাঁদের মারধরের ঘটনায় পিণ্টু মণ্ডল নামে স্থানীয় এক তৃণমূলকর্মী নেতৃত্ব দেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, দেবব্রতবাবুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ওই পিণ্টু মণ্ডল। এবং তার ইঙ্গিত মিলেছে দেবব্রতবাবুর কথাতেও।

বেহালার বাসিন্দা, পেশায় আইনজীবী দেবব্রত চট্টোপাধ্যায় আবার আইআইএমে চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত ঠিকা কর্মীদের ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট। তিনি এ দিন বলেন, “কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে পিণ্টু এবং ওই যুবকেরা জড়ো হয়নি। তারা চাকরির দাবিতে জড়ো হয়েছিল এবং সেই দাবি যুক্তিসঙ্গত।” দেবব্রতবাবুর দাবি, এগ্জিকিউটিভ গেস্ট হাউসের রক্ষণাবেক্ষণ, সাফাই, নিরাপত্তা ও দেখভালের কাজের বরাত পাওয়া হায়দরাবাদের ঠিকাদার সংস্থাটি কর্মী নিয়োগের জন্য দিল্লির সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল। অথচ লোক নিয়োগ করেছিল বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো জেলা থেকে। দেবব্রতবাবু বলেন, “এর পিছনে নিশ্চয়ই সংস্থাটির বিশেষ কোনও উদ্দেশ্য ছিল।”

বস্তুত, পিণ্টু ও তার লোকজনের হাতে গেস্ট হাউসের ঠিকা কর্মীরা যে প্রহৃত হয়েছেন, সে কথাই মানতে রাজি নন দেবব্রতবাবু। কিন্তু গোটা ঘটনাটি তো তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত বলে অভিযোগ উঠেছে? প্রশ্ন শুনে দেবব্রতবাবুর দাবি, তিনি এ সবের মধ্যেই নেই। এমনকী তাঁর বিরুদ্ধে যে পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, সে কথাও তিনি জানেন না। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, দেবব্রতবাবু যে ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট, সেই সংগঠনেরই যুগ্মসচিব মহম্মদ এরশাদ বলেছেন, “বহিরাগতরা কী ঝামেলা করেছে, তার সঙ্গে আমাদের কোনও যোগ নেই। পিন্টু মণ্ডলকে আমি চিনি না।”

স্থানীয় সূত্রের খবর, পিণ্টু এক সময়ে এলাকার সিপিএম কর্মী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। রাজ্যে পালাবদলের পর অনেকের মতো তিনিও তৃণমূলে নাম লেখান। এ দিন পিণ্টু বলেন, “যা ঝামেলা হয়েছিল, তা তো মিটে গিয়েছে। আমি আর কোনও কথা বলব না।’’

কলকাতার মেয়র ও তৃণমূলের অন্যতম প্রধান নেতা শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অনুগামী হিসেবে এলাকা ও তৃণমূলের অন্দরেই পরিচিত দেবব্রতবাবু। এ ব্যাপারে মেয়রকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “দেবু ওখানে ছিল না। ওর নামে কেন এফআইআর করা হল, জানি না।” শোভনবাবু জানান, যারা গণ্ডগোল করেছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। তাঁরা এর মধ্যে থাকবেন না।

এই পরিস্থিতিতে আইআইএম কর্তৃপক্ষের আশা, আজ, বুধবার থেকে এগ্জিকিউটিভ গেস্ট হাউসের কাজকর্ম স্বাভাবিক হবে। এ দিন আইআইএম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ওই ঠিকাদার সংস্থাটির এক শীর্ষ কর্তার দীর্ঘ বৈঠক হয়। সোমবারের গণ্ডগোলের খবর পেয়ে ওই কর্তা এ দিন দিল্লি থেকে তড়িঘড়ি কলকাতায় আসেন। সেখানে কর্তৃপক্ষকে ঠিকাদার সংস্থাটির তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়, বুধবার থেকে কর্মীরা গেস্ট হাউসে যাবেন এবং কাজকর্মও স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে।

ডিসি (সাউথ-ওয়েস্ট) জানান, সোমবার রাতেই ওই সংস্থার কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর ক্যাম্পাসের ভিতরে পুলিশি প্রহরার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। যদিও আইআইএম কর্তৃপক্ষের দাবি, ক্যাম্পাসের ভিতরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়নি। তাঁদের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা দিয়েই কাজ হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের এক কর্তার কথায়, ‘‘আমরা এর মধ্যে ঢুকছি না। এটা ঠিকাদারি সংস্থা ও বহিরাগতদের গণ্ডগোলের ঘটনা। আমরা শুধু চাই, অতিথিশালা পুরোদস্তুর চালু থাকুক।”

iim syndicate shovondeb kolkata news online kolkata news threatening syndicate issue
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy