Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
noise pollution

সরকারি মেলায় শব্দবিধি লঙ্ঘিত হয়েছে কি না, বিতর্ক

পরিবেশকর্মীদের প্রশ্ন, সরকারই যদি নিয়ম লঙ্ঘন করে, তা হলে সাধারণ মানুষকে নিয়ম পালনের কথা বলার নৈতিক অধিকার তাদের রয়েছে কি?

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:৫১
Share: Save:

যে সমস্ত শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে শব্দবিধি ভঙ্গ হতে পারে। এমনটা আগেই জানা গিয়েছিল। কিন্তু সব কিছু ফুৎকারে উড়িয়ে বিধাননগরে রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর আয়োজিত ‘স্বয়ংসিদ্ধা মেলা’-য় লাউডস্পিকার এবং মাইকের উৎপাত চলল বলে অভিযোগ উঠেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশকর্মীদের প্রশ্ন, সরকারই যদি নিয়ম লঙ্ঘন করে, তা হলে সাধারণ মানুষকে নিয়ম পালনের কথা বলার নৈতিক অধিকার তাদের রয়েছে কি? কারণ, খোলা জায়গায় মাইক্রোফোন, লাউডস্পিকার-সহ যে কোনও শব্দযন্ত্রে সাউন্ড লিমিটর লাগানোর যে নির্দেশিকা রয়েছে জাতীয় পরিবেশ আদালত এবং রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের, তা অগ্রাহ্য করেই মাইক বাজানো হয়েছে বলে অভিযোগ।

যদিও পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অধীনস্থ ‘স্টেট আর্বান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি’ (সুডা)-র তরফে জানানো হয়েছে, মেলায় শব্দবিধি লঙ্ঘনের প্রশ্নই নেই। নিয়ম মেনেই মাইক বাজানো হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, মেলায় অনুষ্ঠানের কারণে যে চোঙা লাগানো ছিল, তা-ও খুলে ফেলা হয়েছে। সংস্থার এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘খবরটি প্রকাশ্যে
আসার পরেই আমরা শব্দবিধি পালন করেছি। মেলার উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আমাদের কথাও হয়েছে। তারা বলেছে, শব্দবিধি মানা হচ্ছে কি না, তা সরেজমিনে দেখে যেতে
পারে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বা অন্য কোনও সংস্থা।’’ সুডা-র আরও প্রশ্ন, এই মেলা নিয়েই কেন এত কথা হচ্ছে? অন্য সব সরকারি মেলায় কি এই নিয়ম পালন করা হয়? যার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশকর্মীরা জানাচ্ছেন, অন্য জায়গায় নিয়ম লঙ্ঘন হচ্ছে বলেই কি এখানেও নিয়ম লঙ্ঘনের ছাড়পত্র পাওয়া যায়?

ওয়েস্ট বেঙ্গল ইলেকট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রি ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড-এর (ওয়েবেল) আবার দাবি, তাদের কাছ থেকে গত এক মাসে কোনও সাউন্ড লিমিটর নেয়নি সরকারি কোনও সংস্থা। অথচ, জাতীয় পরিবেশ আদালত শব্দযন্ত্রে সাউন্ড লিমিটর লাগানোর রূপরেখা তৈরির জন্য যৌথ ভাবে দায়িত্ব দিয়েছিল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং ওয়েবেলকে। এ বিষয়ে জানতে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান, সদস্য-সচিবকে একাধিক বার ফোন এবং মেসেজ করা হলেও তাঁরা উত্তর দেননি। যার পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষুব্ধ পরিবেশকর্মীরা। তাঁদের বক্তব্য, প্রচারসর্বস্ব এই যুগে সরকারি-বেসরকারি সব সংস্থাই নিজেদের অস্তিত্ব জাহিরের জন্য উচ্চগ্রামে মাইক বাজায়। কিন্তু তার নিয়ন্ত্রক সংস্থা (রেগুলেটরি অথরিটি) হিসেবে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে যে পদক্ষেপ করার প্রয়োজন ছিল, সেটা তারা করে না। ফলে এই শব্দতাণ্ডব চলতেই থাকে।

শব্দদূষণ নিয়ে দীর্ঘ বছর কাজ করা পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর সাধারণ সম্পাদক নব দত্ত জানাচ্ছেন, শব্দদূষণ রোধে ব্যর্থ হওয়ার জন্য পর্ষদের চেয়ারম্যানের অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত। কারণ, শুধু শব্দদূষণ নয়, পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে যে কোনও পদক্ষেপ করতেই তিনি পুরোপুরি ব্যর্থ। নববাবুর কথায়, ‘‘রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের স্বতন্ত্র স্বর থাকা উচিত। তারাই যদি প্রতি পদে সরকারি রক্তচক্ষুর সামনে পড়ার আশঙ্কা করে, তা হলে পরিবেশের স্বার্থ কী ভাবে রক্ষিত হবে?’’

পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত আবার জানাচ্ছেন, সরকার আসলে জাহির করতে চায় যে, তারা কী কী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। তাই নিয়ম না মেনেই মাইক বাজানো হচ্ছে। সুভাষবাবুর কথায়, ‘‘প্রচারের তাগিদেই মাইকের এই আস্ফালন। জাতীয় পরিবেশ আদালত, নিজেদেরই জারি করা নির্দেশিকা-লঙ্ঘন, কোনও কিছুতেই তাই কোনও পরোয়া নেই!’’ যদিও পর্ষদের তরফে পরে দাবি করা হয় যে, মাইক নির্ধারিত মাত্রায় যাতে চালানো হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য মেলায় প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

noise pollution Government Programme
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE