Advertisement
E-Paper

স্যানিটারি প্যাডের যন্ত্র স্কুলে স্কুলে

স্কুল শিক্ষা দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, কোনও কুসংস্কারকে দূরে সরাতে গেলে স্কুল স্তর থেকে তা শুরু করা জরুরি। তাই একদম তৃণমূল স্তর থেকে সচেতনতার পাঠ দেওয়া শুরু হচ্ছে।

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৭ ০১:৪৪

ঋতুকালীন সংক্রমণের জেরে প্রাণ গিয়েছিল এক ছাত্রীর। সেই ঘটনা অহরহ যন্ত্রণা দিত স্কুলের প্রধান শিক্ষককে। তাই পরে স্কুলেই স্যানিটারি ন্যাপকিনের ভেন্ডিং মেশিন বসানোর ব্যবস্থা করেছিলেন কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের সেই শিক্ষক। একটা বিচ্ছিন্ন নজির হিসেবেই থেকে গিয়েছিল ওই স্কুল। এ বার কলকাতার বিভিন্ন স্কুলে সেই ব্যবস্থা চালু করতে উদ্যোগী হল সর্বশিক্ষা মিশন।

শহরে সরকারি, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কো-এড ও এবং বালিকা বিদ্যালয়ের সংখ্যা আড়াইশোর বেশি। বিকাশ ভবন সূত্রে খবর, সেই সব স্কুলের ছাত্রীদের ঋতুচক্র সম্পর্কে সচেতন করা এবং সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করার পাঠ দেওয়া শুরু হচ্ছে। স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, এর পাশাপাশি শহরের স্কুলগুলিতে স্যানিটারি ন্যাপকিনের ভেন্ডিং মেশিন-ও বসানো হবে। প্রতিটি স্কুলেই ছাত্রীদের সচেতন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে।

ওই সংস্থার তরফে সোমনাথ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘শহরে প্রচলিত শিক্ষার প্রসার ঘটলেও অনেকেই এই বিষয়টিতে কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। এমন কী খাস কলকাতা শহরেও একাধিক পরিবারে মহিলাদের ঋতুচক্রের সময়ে অস্পৃশ্য করে রাখা হয়। মানুষের সঙ্গে মেলামেশার ওপরেও বিধি নিষেধ থাকে। কিশোরী বয়সে ঋতুচক্র শুরু হওয়ার পরে অনেকেই ভয়ে গুটিয়ে যায়। কলকাতাতেও বহু পরিবারে স্যানিটারি ন্যাপকিনের পরিবর্তে কাপড়ের ব্যবহার চালু রয়েছে।’’

স্কুল শিক্ষা দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, কোনও কুসংস্কারকে দূরে সরাতে গেলে স্কুল স্তর থেকে তা শুরু করা জরুরি। তাই একদম তৃণমূল স্তর থেকে সচেতনতার পাঠ দেওয়া শুরু হচ্ছে। প্রথমেই কয়েক জন সদস্যের একটি দল গঠন করে স্কুল পরিদর্শন শুরু হবে। তার পরে দফায় দফায় চলবে সচেতনতামূলক কর্মশালা। বসবে স্যানিটারি ন্যাপকিনের ভেন্ডিং মেশিন-ও। দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘বহু ক্ষেত্রেই প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে পরিবার। স্কুল থেকে কুসংস্কার দূর করার শিক্ষা পেলেও পরিবারের জন্য সেই বেড়াজাল ছিঁড়তে পারেন না কিশোরীরা। তাই প্রয়োজনে ওই সংস্থা ছাত্রীদের বাড়ি গিয়েও সচেতন করার কাজ করতে পারে।’’

সামাজিক কুসংস্কার কী ভাবে সংক্রমণ বয়ে আনছে? ওই সংস্থার এক কর্তা জানান, স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্রয়োজনীয়তা গ্রামের বহু পরিবার তো বটেই, এমন কী শহরেও অনেকে বুঝতে চান না। তাই অনেক পরিবারেই মেয়েদের কাপড় ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। সেগুলি কোনও ভাবে ধুয়ে অন্ধকার জায়গায় রেখে ফের ব্যবহার করা হয়। কাপড় ব্যবহার করলেও তা ভালো করে পরিষ্কার করে রোদে শুকোতে হয়। কিন্তু লোকলজ্জার ভয়ে অন্ধকার ঘরে ওই কাপড় রেখে দেয় অনেক কিশোরীই। ফলে সংক্রমণের আশঙ্কা ক্রমে বাড়তে থাকে। স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, কৈশোরের এই সংক্রমণ পরবর্তী সময়ে বড় সমস্যা ডেকে আনতে পারে।

ছাত্রীদের মাধ্যমে গোটা সমাজে এই প্রচার করার উদ্দেশ্য রয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা দফতরের কর্তারা। এই কারণে স্যানিটরি ন্যাপকিনের ভেন্ডিং মেশিনও বসানো হচ্ছে। ওই কর্তার বক্তব্য, ‘‘শহর থেকে আইএসসি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে এক ছাত্রী। মাধ্যমিকেও প্রথম এক ছাত্রী। কিন্তু সেই মেয়েদেরই স্বাভাবিক একটি বিষয় নিয়ে এখনও ছুৎমার্গ রয়ে গিয়েছে। এটা দুঃখের।’’

সম্প্রতি স্যানিটারি ন্যাপকিনের ভেন্ডিং মেশিন বসেছে রাজ্য মহিলা কমিশনের দফতরে। কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। এ ভাবে সচেতনতা আরও বাড়লে আমরা সকলেই খুশি হব।’’

Sanitary Napkin Machine Sanitary Napkin Vending Machines স্যানিটারি ন্যাপকিনের ভেন্ডিং মেশিন School
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy