প্রতীকী ছবি।
শুরুটা হয়েছিল পাড়ায়। সেই দাবি ছড়িয়ে পড়েছে ওই পাড়াকে ঘিরে দক্ষিণ শহরতলির বিস্তীর্ণ এলাকায়। সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে দলে দলে যোগ দিচ্ছেন অভিভাবকেরাও। পরিস্থিতি এমনই যে, একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে আর ধরে রাখা যাচ্ছে না তাঁদের। মেটিয়াবুরুজ, গার্ডেনরিচ, মহেশতলার অভিভাবকেরা জানাচ্ছেন, স্কুল খোলার দাবিতে একজোট হয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা। তাতে ৩১০০ জন অভিভাবক স্বাক্ষর করেছেন।
সম্প্রতি মেটিয়াবুরুজের একটি পাড়ার অভিভাবকেরা স্কুল খোলার দাবিতে তৈরি করেছেন একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। মেটিয়াবুরুজ, গার্ডেনরিচ, মহেশতলা থেকেও একে একে অভিভাবক যোগ দিচ্ছিলেন সেই গ্রুপে। এখন সেটির সদস্য-সংখ্যা এতই বেড়ে গিয়েছে যে, একটি গ্রুপে সবাইকে রাখা যাচ্ছে না। কিন্তু ওই গ্রুপ এবং তার বাইরে থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে একসঙ্গে আওয়াজ উঠেছে।
করোনা-বিধি মেনে স্কুল খোলার দাবি সর্বত্র ধীরে ধীরে জোরালো হচ্ছে। সরব হচ্ছেন শিক্ষক এবং অভিভাবকেরাও। শনিবারই ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলের কাছে বেসরকারি স্কুলের পড়ুয়াদের অভিভাবকদের সংগঠন ‘ইউনাইটেড গার্ডিয়ান্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর উদ্যোগে সদস্যেরা এই দাবিতে মানববন্ধন করেন। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক সুপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “প্রায় একশো জন অভিভাবক মানববন্ধনে শামিল হয়েছিলেন। মেলা, যাত্রা, সার্কাস, জিম, পার্লার, বিয়েবাড়ি, ভোট সবই চলছে। শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই বন্ধ! অনলাইন পড়াশোনা কখনওই অফলাইনের বিকল্প হতে পারে না। পাড়ায় যদি শিক্ষালয় চালু হয়, তা হলে কোভিড-বিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে কোথায় অসুবিধা?”
একই মত ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সদস্য-অভিভাবকদের। এ জন্য তাঁরা স্কুল খোলা নিয়ে পাড়ার মানুষকে সচেতন করতে মাইকে প্রচার শুরু করেছিলেন। পাশাপাশি পোস্টার, ব্যানার বানিয়ে পাড়ায় ঘুরে অভিভাবকদের সই সংগ্রহও করেছেন। মেটিয়াবুরুজের বাসিন্দা সাহেব এ আলম জানান, দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ক্রমেই স্কুলছুটের সংখ্যা বাড়ছে। সাহেব বলেন, “আমাদের বটতলা এলাকার একটি স্কুলে ১৩০০ পড়ুয়া ছিল। তার মধ্যে অন্তত ৫০০ জনের পড়াশোনার সঙ্গে কোনও সম্পর্কই নেই। তাদের স্কুলছুটই বলা যায়। বহু অভিভাবক দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করেন। তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয় ছেলেমেয়েকে স্মার্টফোন কিনে দেওয়া।”
তাঁদের এই আন্দোলনের পাশে আছে ‘নো এনআরসি মুভমেন্ট’, মেটিয়াবুরুজ শাখা। ওই সংগঠনের উদ্যোগেও চলেছে পাড়ায় পাড়ায় অভিভাবকদের সচেতন করার প্রক্রিয়া। আর এক অভিভাবক সুজাউদ্দিন মোল্লা জানান, শুধু স্কুল নয়, তাঁরা চান, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই করোনা-বিধি মেনে খুলুক। সুজাউদ্দিন বলেন, “বলা হচ্ছে, গ্রামে স্কুলছুট বাড়ছে। কিন্তু কলকাতা শহরেও স্কুলছুটের সংখ্যা কিছু কম নয়। আমাদের এলাকায় এই সমস্যা বিশেষ করে রয়েছে। স্কুল খুললে ওদের পড়াশোনায় ফেরাতেই হবে। না হলে বড় সামাজিক ব্যাধি তৈরি হবে।”
গার্ডেনরিচের অভিভাবকদের অভিযোগ, যে সব পড়ুয়ার বাড়িতে স্মার্টফোন রয়েছে, সেখানেও অন্য সমস্যা বেড়েছে। ওই পড়ুয়াদের অনেকেই স্মার্টফোনে এত আসক্ত হয়ে পড়েছে যে, তারা পড়াশোনা করছে না। তাঁরা বলছেন, “বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় এতই আসক্ত হয়ে পড়েছে যে, প্রতিদিনের সাধারণ কাজগুলোও করছে না ছেলেমেয়েরা। এদের প্রতি সব সময়ে নজরদারিও চালানো যাচ্ছে না। কারণ, অভিভাবকদেরও তো কাজে বেরোতে হয়। স্কুল খুললে এই সব সমস্যা থাকত না।”
স্কুল কবে খোলা হবে? শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সম্প্রতি জানান, তাঁরাও স্কুল খোলার পক্ষে। তবে ধাপে ধাপে। বাচ্চাদের ক্ষতি না করে, কোভিড সংক্রমণ না বাড়িয়ে। যাতে স্কুল খুলেই আবার বন্ধ করতে না হয়। প্রতিষেধক প্রদান প্রক্রিয়া শেষ হলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই জানাবেন, কবে স্কুল খুলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy