প্রতীকী চিত্র।
অতিমারি পরিস্থিতিতে অন্যান্য আদালতের শুনানি জরুরি ভিত্তিতে চালু থাকলেও রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা আদালতগুলির শুনানি গত দেড় বছর ধরে পুরোপুরি বন্ধ। এর ফলে বিপাকে পড়েছেন কয়েক হাজার উপভোক্তা। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা মিলিয়ে জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের ২৪টি বেঞ্চ এবং রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের পাঁচটি বেঞ্চ রয়েছে। ক্রেতা সুরক্ষা দফতর সূত্রের খবর, গত দেড় বছর শুনানি বন্ধ থাকায় ঝুলে রয়েছে প্রায় ২০ হাজার মামলা।
এই পরিস্থিতিতে অবিলম্বে আদালতের বেঞ্চগুলি চালু করতে ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের রাজ্য কমিশনের সভাপতিকে চিঠি দিয়েছে ক্রেতা সুরক্ষা আদালত বার অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের সভাপতি হিরণ্ময় ব্রহ্মচারী বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে গত দেড় বছর শুনানি বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষকে ভীষণ হয়রানি পোহাতে হচ্ছে। অবিলম্বে বেঞ্চগুলি চালু করতে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা কমিশনের সভাপতিকে চিঠি লিখেছি।’’ কলকাতা হাই কোর্ট এবং ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের আইনজীবী রঘুনাথ চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট, হাই কোর্ট এবং নিম্ন আদালতে প্রচুর মামলা জমে থাকায় জরুরি ভিত্তিতে শুনানি চলছে। রাজ্য সরকারের উচিত, নিয়ম মেনে অবিলম্বে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বেঞ্চগুলি চালু করা।’’
ক্রেতা সুরক্ষা দফতর সূত্রের খবর, কলকাতায় মির্জা গালিব স্ট্রিটে তাদের সদর দফতরে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের তিনটি বেঞ্চ রয়েছে। এ ছাড়া আসানসোল ও শিলিগুড়িতে রয়েছে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের একটি করে বেঞ্চ। পাশাপাশি, বিভিন্ন জেলায় রয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বেঞ্চ। এমন বেঞ্চের সংখ্যা ২৪। দফতর সূত্রের খবর, রাজ্য সরকারের বিধিনিষেধ মেনে এখনও সরকারি অফিসে ২৫ শতাংশের বেশি কর্মী-হাজিরার অনুমতি নেই। আর এই নিয়মের ফাঁসেই আটকে রয়েছে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের শুনানি। দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘কলকাতায় রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের তিনটি বেঞ্চ ২৫ শতাংশ কর্মী নিয়ে চালানো অসম্ভব। জরুরি ভিত্তিতে আদালত চালাতে গেলে নিয়ম বদলাতেই হবে।’’ আইনজীবী এক্রামুল বারির প্রশ্ন, ‘‘অন্য সমস্ত আদালত যখন চলছে, তখন ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের শুনানি বন্ধ থাকবে কেন? বেঞ্চগুলি যাতে জরুরি ভিত্তিতে চালু করা যায়, সে বিষয়টি রাজ্য সরকারের দেখা উচিত।’’ দফতরের সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বেঞ্চগুলি যাতে চালু করা যায়, সে বিষয়ে খতিয়ে দেখব।’’
গত দেড় বছর যাবতীয় শুনানি বন্ধ থাকায় হয়রান হচ্ছেন উপভোক্তারা। এমনই এক জন, দক্ষিণ কলকাতার গাঙ্গুলিবাগানের বাসিন্দা রুবি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘২০১৬ সালে ২১ লক্ষ টাকা দিয়ে বেলঘরিয়ায় ফ্ল্যাট কিনেছিলাম। ছ’মাস সেখানে থাকার পরে কমপ্লিশন সার্টিফিকেট (সিসি) বার বার চাইতে থাকায় প্রোমোটার মারধর করে বার করে দেয়। সুবিচারের আশায় রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করি। কিন্তু দীর্ঘদিন শুনানি বন্ধ থাকায় বিচার পাচ্ছি না। বাধ্য হয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকতে হচ্ছে।’’ ফ্ল্যাট কিনে একই ভাবে প্রতারণার শিকার, ট্যাংরার বাসিন্দা পিঙ্কি দাস অধিকারীর অভিযোগ, ‘‘তপসিয়ায় ২০১৭ সালে ৯ লক্ষ টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট বুক করেছিলাম। ছ’মাস পরে রেজিস্ট্রেশনের সময়ে বাকি টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, নানা অজুহাতে প্রোমোটার সেই ফ্ল্যাট হস্তান্তর করেনি। বাধ্য হয়ে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে যাই। কিন্তু দেড় বছর আদালত বন্ধ থাকায় চরম ভুগছি। আদালত চালু থাকলে এত দিনে হয়তো বিহিত হত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy