Advertisement
E-Paper

বেলুড় মঠকে নিয়ে সিমেন্ট সংস্থার বিজ্ঞাপন, জানেই না রামকৃষ্ণ মিশন, অনুমতি ছাড়াই ‘নাম’ দিয়ে বিপণন

রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রধান দফতর বেলুড় মঠ তীর্থের সমান। এই ধর্মীয় সংগঠনের উপরে অনেক মানুষের ভরসা। সেই ভরসাকে ‘ব্যবহার’ করেই সিমেন্ট সংস্থার বিজ্ঞাপন। তা-ও অনুমতি ছাড়াই।

পিনাকপাণি ঘোষ

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪ ১৫:৫৩
সেই বিজ্ঞাপন ও বেলুড় মঠ।

সেই বিজ্ঞাপন ও বেলুড় মঠ। — নিজস্ব চিত্র।

হাওড়া থেকে কলকাতায় ঢোকার মুখেই মস্ত হোর্ডিং। তাতে লেখা ‘হাওড়ার বেলুড় মঠ আর সিমেন্টে কনক্রিটো নামটাই যথেষ্ট’। বিজ্ঞাপনী ভাষায় এটা স্পষ্ট যে, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রধান দফতর সম্পর্কে ভক্তদের যে ভরসা ও বিশ্বাস, তাকেই সিমেন্ট প্রস্তুতকারী সংস্থার ‘ইউএসপি’ (ইউনিক সেলিং পয়েন্ট) হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে।

কিন্তু এই বিজ্ঞাপন কি রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অনুমতি বা অনুমোদন নিয়ে প্রচার করা হয়েছে? প্রশ্নের জবাবে মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ মহারাজ মঙ্গলবার বললেন, ‘‘এমন কোনও অনুমতি কোনও সংস্থাকেই দেওয়া হয়নি। কারও সঙ্গে কোনও কথাও হয়নি।’’ এখানেই না থেমে প্রবীণ সন্ন্যাসী বলেন, ‘‘এটা ভক্তদের বিশ্বাসকে আঘাত করতেই পারে। আমরা ওই ছবি পেলেই পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাব।’’ সংশ্লিষ্ট সিমেন্ট প্রস্তুতকারী সংস্থার এক কর্তা অবশ্য এমন বক্তব্যকে পাত্তাই দিতে চাননি। পরে অবশ্য অন্য এক কর্তা জানান, অভিযোগ উঠলে হোর্ডিংটি তাঁরা সরিয়ে নেবেন।

হাওড়া ব্রিজ থেকে ব্রেবোর্ন রোড ফ্লাইওভারে ওঠার পরেই বাঁ হাতে চোখে পড়ে বিজ্ঞাপনী হোর্ডিংটি। যেখান থেকে মহাত্মা গান্ধী রোড শুরু হচ্ছে, তারই উপরে রয়েছে সেটি। সংস্থার দু’টি হোর্ডিংয়ের নীচেরটিতে ব্যবহার করা হয়েছে বেলুড় মঠের নাম। সেটি দেখার পরেই বেলুড় মঠের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। স্বামী সুবীরানন্দ বলেন, ‘‘আমরা কোনও রকম বিজ্ঞাপন করি না। অথচ আমাদের নাম ব্যবহার করেই বিজ্ঞাপন করা হয়েছে শুনে অবাক লাগছে! কাউকে কখনওই এই ধরনের অনুমতি দেওয়া হয় না। এ ক্ষেত্রেও অনুমতি দেওয়ার কোনও প্রশ্ন নেই।’’ সুবীরানন্দ একই সঙ্গে জানান, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা মঠের তরফে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে চান।

এর পরে আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে কনক্রিটো সিমেন্ট উৎপাদন সংস্থার ‘নুভোকো ভিস্তাস কর্পোরেশন লিমিটেড’-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সংস্থার মুম্বই দফতর জানায়, ‘ম্যানেজার মার্কেটিং’ নবীন খানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। সেই মতো যোগাযোগ করার পরে নবীন বলেন, ‘‘বিষয়টা আমার জানা নেই। তবে বিজ্ঞাপনের জন্য কেউ পুলিশের কাছে যেতে চাইলে যাক! আমাদের কোনও সমস্যা নেই।’’ তবে কিছু পরে ওই সংস্থার ব্র্যান্ড ম্যানেজার অয়ন ভট্টাচার্য নিজেই আনন্দবাজার অনলাইনে যোগাযোগ করেন। অয়ন বলেন, ‘‘যদি এটা নিয়ে কারও কোনও অভিযোগ থাকে বা বেলুড় মঠ কর্তৃপক্ষের কোনও আপত্তি থাকে, তবে ওই হোর্ডিং আমরা সরিয়ে নেব।’’

প্রসঙ্গত, বহু বছর আগে এ ভাবেই একটি হাওয়াই চপ্পল প্রস্তুতকারী সংস্থা তাদের বিজ্ঞাপনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ব্যবহার করেছিল। কারণ, মমতা তখন নীল-সাদা হাওয়াই চপ্পল পরতেন। সে ক্ষেত্রেও মমতার অনুমতি নেওয়া হয়নি বলেই জানা গিয়েছিল। বিষয়টি গোচরে আসায় মমতা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন। পুলিশেও বিষয়টি জানানো হয়েছিল। তার পরে বিজ্ঞাপনটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। সাধারণত, কোনও খ্যাতনামী কোনও বিশেষ পণ্যের সঙ্গে জড়িত থাকেন চুক্তির ভিত্তিতে। সে ক্ষেত্রে তাঁদের অনমতি এবং অনুমোদন লিখিত ভাবেই নেওয়া হয় সংস্থার তরফে। কিন্তু এ ভাবে কোনও প্রতিষ্ঠানকে ‘ব্যবহার’ করে ভরসা এবং বিশ্বাসের বিপণন করার ঘটনা সাম্প্রতিক কালে বিরল। তা-ও আবার বেলুড় মঠের মতো একটি প্রতিষ্ঠানকে।

Belur Math Cement Concreto Cement Advertisement
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy