Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Society

করোনা-গুজবে প্রৌঢ়ার দেহ বাইরে পড়ে আট ঘণ্টা

সোমবার এমনই অমানবিক ঘটনার সাক্ষী থাকল বালি।

অমানবিক: আবাসনের গেটের সামনে পড়ে প্রৌঢ়ার দেহ (চিহ্নিত)। নিজস্ব চিত্র

অমানবিক: আবাসনের গেটের সামনে পড়ে প্রৌঢ়ার দেহ (চিহ্নিত)। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০২০ ০৩:৩৭
Share: Save:

করোনায় আক্রান্ত হয়ে ছেলে হাসপাতালে ভর্তি। তাই আচমকা হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত মায়ের দেহ সৎকারে এগিয়ে এলেন না পড়শি বা আত্মীয়েরা। প্রায় আট ঘণ্টা আবাসনের গেটের সামনে ওই প্রৌঢ়ার দেহ পড়ে থাকার পরে খবর পৌঁছয় ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলরের কাছে। তিনি এসে দেহটি হাওড়া জেলা হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

সোমবার এমনই অমানবিক ঘটনার সাক্ষী থাকল বালি। অভিযোগ, ছেলের করোনা হওয়ায় মা-ও তাতে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন, এমন ধারণা থেকে ওই আচরণ করেছেন আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা। স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই প্রৌঢ়ার নাম রাজকুমারী জৈন (৫৫)। বালির ৫২ নম্বর ওয়ার্ডের বীরেশ্বর চ্যাটার্জি স্ট্রিটে একটি পাঁচতলা আবাসনে থাকতেন তিনি। রাজকুমারীদেবীর ছেলে রিকি দিন কয়েক আগে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রিকি করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় বাড়িতেই কোয়রান্টিনে ছিলেন রাজকুমারীদেবী, বাবা বিনোদকুমার এবং স্ত্রী অর্চনা। পরিবার সূত্রের খবর, থাইরয়েড-সহ বিভিন্ন সমস্যায় অনেক দিন ধরেই ভুগছিলেন ওই প্রৌঢ়া। রবিবার গভীর রাতে আচমকা তাঁর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।

বিনোদবাবু বলেন, ‘‘পরিচিত এক চিকিৎসককে ফোন করলে তিনি জানান, রোগীকে না-দেখে ওষুধ দেওয়া সম্ভব নয়। বহু কষ্টে অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করে স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু পথেই উনি মারা যান।’’ তিনি জানান, ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা জানান, সেখানে পৌঁছনোর অনেক আগেই মৃত্যু হয়েছে ওই প্রৌঢ়ার। তখন স্ত্রীর দেহ নিয়ে ফের বাড়ি ফিরে আসেন বিনোদবাবু।

আরও পড়ুন: বাসের টিকিট কি এ বার শুধুই স্মৃতি

কিন্তু তাঁর অভিযোগ, দেহটি আবাসনে ঢোকাতে গেলে বাধা দেন অন্য আবাসিকেরা। অগত্যা আবাসনে ঢোকার মূল গেটের সামনে রাস্তার এক ধারে রাজকুমারীদেবীর নিথর দেহ শুইয়ে রেখে বিছানার চাদর চাপা দিয়ে দেন পরিবারের লোকজন। সকাল সাড়ে ছ’টা থেকে সেখানেই পড়ে ছিল দেহটি।

আরও পড়ুন: বন্ধ ভাসমান বাজার, বিকল নৌকাই বাড়াচ্ছে ডেঙ্গির বি

বিনোদবাবু বলেন, ‘‘ডেথ সার্টিফিকেট না-পেলে তো দাহ করাও সম্ভব নয়। তাই কী করব বুঝতে পারছিলাম না।’’ বিনোদবাবুদের ফ্ল্যাটের উল্টোদিকেই থাকেন তাঁদের আত্মীয়েরা। অভিযোগ, দেহটি গেটের সামনে থাকায় যেমন ফ্ল্যাটের অন্য বাসিন্দারা কেউ আসেননি, তেমনই আসেননি রাজকুমারীদেবীদের আত্মীয়েরাও। শেষে বিষয়টি জানতে পেরে ওই ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর প্রবীর রায়চৌধুরী যোগাযোগ করেন পুলিশ ও পুরসভার সঙ্গে। দুপুর ২টো নাগাদ পুরসভার শববাহী গাড়ি করে হাওড়া জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয় প্রৌঢ়ার দেহ। প্রবীরবাবু বলেন, ‘‘অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা। মহিলার করোনা হয়েছে ভেবে কেউ এগিয়ে এলেন না। দেহটি হাওড়া জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। কী ভাবে শেষকৃত্য হবে, সেখান থেকেই তা ঠিক করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Society Coronavirus in Kolkata Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE