এক রুট, একই গন্তব্য! তার মধ্যেই একে অপরকে টেক্কা দিতে নিত্য বেপরোয়া দৌড় বাসচালকদের। যার জেরে পরপর দু’দিন দু’টি বড় দুর্ঘটনার সাক্ষী রইল শহর। বৃহস্পতিবার সকালে বাঘা যতীনে দু’টি বাসের রেষারেষির মাঝে দুর্ঘটনায় পড়ে একটি হাত বাদ গেল এক বৃদ্ধের। ঠিক এর আগের সন্ধ্যা, বুধবারেই অন্য একটি বাসের বেপরোয়া গতির জেরে গোলপার্কে রাস্তায় ছিটকে পড়ে প্রাণ হারান এক কলেজপড়ুয়া তরুণী।
পুলিশ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সকালে ৪৫ নম্বর রুটের দু’টি বাসের রেষারেষিতে পড়ে গুরুতর জখম হন সুভাষচন্দ্র বসু নামে ইতিহাসের এক প্রাক্তন অধ্যাপক। তাঁর বাঁ হাত থেঁতলে যায়। বাইপাসের ধারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে এ দিন সন্ধ্যার অস্ত্রোপচারে তাঁর ওই হাত বাদ দিতে হয়েছে। পুলিশ একটি বাসের চালককে আটক করতে পারলেও অন্যটির চালক পলাতক।
পুলিশ জানায়, এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ রাজা সুবোধচন্দ্র মল্লিক রোড ধরে রাস্তা পেরোচ্ছিলেন সুভাষবাবু। ওই পথেই ৪৫ নম্বর রুটের বাস দু’টি রেষারেষি করতে করতে আসছিল। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি বাস সুভাষবাবুকে ধাক্কা মারে। রাস্তায় পড়ে গেলে পাশের ৪৫ নম্বর রুটেরই অন্য বাসটি সুভাষবাবুর বাঁ হাতের উপর দিয়ে চলে যায়। গুরুতর জখম সুভাষবাবুকে স্থানীয়েরাই বাঘা যতীন
হাসপাতালে ভর্তি করান। পুলিশ জানায়, স্ত্রী কণিকা এবং মেয়ে সুকন্যাকে নিয়ে বাঘা যতীনের অচেনা পার্ক এলাকায় থাকেন সুভাষবাবু। সুকন্যা জানান, যাদবপুরে যাবেন বলে এ দিন সকালে বেরোন তিনি। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বাঘা যতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফোন যায়। হাসপাতালে গিয়ে সুকন্যারা দেখেন, সুভাষবাবুর বাঁ হাত থেঁতলে গিয়েছে। হাতের অবশিষ্ট অংশ কেটে শরীর থেকে ঝুলছে। এর পরে পরিজনেরা তাঁকে ই এম বাইপাসের একটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন।
ঠিক একই পরিস্থিতিতে বুধবার রাতে ১বি রুটের একটি বাস থেকে নামতে গিয়ে পড়ে মৃত্যু হয়েছে সুস্মিতা ঘোষ (২১) নামে এক তরুণীর। অভিযোগ, যাত্রী নামতে না নামতেই বেপরোয়া চালক বাস চালিয়ে দেন। গোলপার্কের কাছে এই তরুণী বাসের পাদানি থেকে রাস্তায় ছিটকে পড়েন। পুলিশ জানায়, প্রথমে সুস্মিতাকে ঢাকুরিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে রাতে পরিজনেরা অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরিত করতে গেলে পথেই মৃত্যু হয় তরুণীর। বাস-সহ চালককে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশের দাবি। পুলিশ জানিয়েছে, তরুণীর বাড়ি সার্ভে পার্ক থানা এলাকায়। তিনি নেতাজিনগর কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া ছিলেন।
বারবার এই ধরনের ঘটনা ঘটলেও বাসের রেষারেষি থামানো যাচ্ছে না কেন, প্রশ্ন তুলেছে দুই দুর্ঘটনাগ্রস্তের পরিবারই। সুভাষবাবুর মেয়ে সুকন্যার কথায়, ‘‘কী
করে এমন ঘটল, বুঝতে পারছি না। বাবা তো কখনও তাড়াহুড়ো করেন না।’’ এলাকাটি কলকাতা পুলিশের গড়িয়া ট্র্যাফিক গার্ডের অন্তর্গত। সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিককে বারবার ফোন করা হলেও কথা বলতে চাননি। ডিসি ট্র্যাফিক সন্তোষ পাণ্ডে যদিও বলেন, ‘‘এই সব ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু হয়। এই ধরনের দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে এখন আমরা অনেক তৎপর। অনেকটাই কড়া পদক্ষেপ করা হয়।’’
তবু বেপরোয়া বাস চালানো থামানো যায় না কেন? সে প্রশ্নের অবশ্য কোনও উত্তর মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy