Advertisement
E-Paper

‘অভিযুক্ত’ তকমা নিয়েই শুনানির অপেক্ষায় বৃদ্ধ

মেরুদণ্ডে চোট পেয়ে নিম্নাঙ্গ অসাড় হয়ে গিয়েছে। হৃদ্‌যন্ত্র দুর্বল, শ্বাসনালী অবরুদ্ধ। বিছানাতেই মলমূত্র ত্যাগ করতে হয় ৮৬ বছরের আশুতোষ সেনাপতিকে।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২১ ০৬:২০
 হাওড়ার বাড়িতে আশুতোষ সেনাপতি।

হাওড়ার বাড়িতে আশুতোষ সেনাপতি। নিজস্ব চিত্র।

মেরুদণ্ডে চোট পেয়ে নিম্নাঙ্গ অসাড় হয়ে গিয়েছে। হৃদ্‌যন্ত্র দুর্বল, শ্বাসনালী অবরুদ্ধ। বিছানাতেই মলমূত্র ত্যাগ করতে হয় ৮৬ বছরের আশুতোষ সেনাপতিকে। কিন্তু কার্যত জীবনের অন্তিম লগ্নে এসেও তাঁর কপালে লেগে রয়েছে ‘অভিযুক্তের’ তকমা। সেই দাগ মোছাতে জেলা আদালত থেকে কলকাতা হাইকোর্ট— সর্বত্রই ঘুরেছেন তিনি। কিন্তু কোর্টে মামলার ভিড়ে তাঁর সেই মামলার শুনানি হয়নি দিনের পর দিন। মামলার ‘অপবাদ’ নিয়েই এক দিন পৃথিবী ছাড়তে হবে কি না, জানা নেই এই অশীতিপর মানুষটির।

হাওড়ার গঙ্গাধরপুরের বাসিন্দা আশুতোষবাবুর একমাত্র ছেলে সৌমিক ব্যাঙ্ককর্মী। ২০১৭ সালে তাঁর স্ত্রী (বর্তমানে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে) নিজের স্বামী ও শ্বশুরের বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি মামলা করেছিলেন। অভিযোগ ছিল, অশীতিপর শ্বশুর আশুতোষবাবুও তাঁর উপরে নির্যাতন চালান। সেই মামলার তদন্ত শুরু হয়। কিন্তু পাঁচলা থানা দু’বছরেও তদন্ত শেষ করতে না-পারায় সৌমিকবাবু আদালতে গিয়ে মামলা থেকে অব্যাহতি চান। সৌমিকবাবু জানান, পুলিশ চার্জশিট জমা দেবে বলে নিম্ন আদালতে জানিয়েছিল। ইতিমধ্যে ২০১৯ সালে দেওয়ানি আদালত সৌমিকবাবুর বিবাহবিচ্ছেদের রায় দেয়। দেওয়ানি মামলায় তাঁর স্ত্রী যে সব অভিযোগ করেছিলেন, তা-ও খারিজ হয়।

সৌমিকবাবু জানান, দেওয়ানি মামলার রায় নিয়ে তিনি জেলা আদালতের দ্বারস্থ হন। তাঁর যুক্তি ছিল, দেওয়ানি মামলায় যখন অভিযোগ খারিজ হয়েছে, তা হলে ফৌজদারি মামলাতেও অভিযোগ ধোপে টেঁকে না। জেলা আদালত জানায়, এই মামলার নিষ্পত্তি না-হওয়া পর্যন্ত নিম্ন আদালতে মামলায় স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে। কিন্তু সেখানেও সুরাহা না-হওয়ায় ২০২০ সালের শেষে কলকাতা হাইকোর্টে এফআইআর খারিজ করার মামলা দায়ের করেন তিনি। প্রায় চার মাস কাটতে চললেও এক বারের জন্যেও হাইকোর্টে সেই মামলার শুনানি হয়নি। বাবাকে ‘কালিমামুক্ত’ করতে প্রায়ই হাইকোর্টে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকেন সৌমিকবাবু। কিন্তু লাভ হয় না।

বাড়িতে মানুষ বলতে ছেলে এবং তাঁর শয্যাশায়ী বাবা। সৌমিকবাবু বলছেন, ‘‘আমার বাবা মৃত্যুপথযাত্রী। মারা যাওয়ার আগে তিনি অপরাধী কি না, সেটা জানা এক জন মানুষের অধিকার। কিন্তু আদালতে ঘুরে ঘুরেও তার সুরাহা হচ্ছে না।’’

রাজ্যের আদালতগুলিতে মামলা জমে থাকার ঘটনা নতুন কিছু নয়। ন্যাশনাল জুডিশিয়াল ডেটা গ্রিডের তথ্য বলছে, পশ্চিমবঙ্গের নিম্ন আদালতগুলিতে মোট ২৪ লক্ষ ২৭ হাজার ২৬৫টি মামলা জমে রয়েছে। এর মধ্যে ৩০ বছরেরও বেশি ধরে বকেয়া পড়ে রয়েছে ১৩ হাজার ৬২৯টি মামলা। তার মধ্যে ১০ হাজার ৯৫৮টি ফৌজদারি মামলা।

বিচার ব্যবস্থায় বারবার দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির কথা বলা হলেও তা বাস্তবে কতটা কার্যকর হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। মামলাকারীদের অনেকেই বলছেন, ছুটিছাটা, আইনজীবীদের কর্মবিরতি লেগে থাকে। পুলিশ-প্রশাসনের তরফেও দীর্ঘসূত্রিতা থাকে। সব মিলিয়ে নাকাল হতে হয় মামলাকারীদের। অনেক সময়ে দেখা গিয়েছে, বছর-বছর অভিযুক্ত তকমা নিয়ে বসে থাকার পরে শেষে মানুষটি নির্দোষ বলে প্রমাণিত হন। সে ক্ষেত্রে এত বছর ধরে তাঁকে যে কলঙ্কের বোঝা বইতে হল, তার ক্ষতিপূরণ কে দেবে?

ক্ষতিপূরণ তো অনেক দূরের কথা। আপাতত মামলার শুনানিটুকুই হোক, এটাই চাইছেন আশুতোষবাবুর মতো মানুষেরা। (চলবে)

Kolkata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy