E-Paper

নারী পাচারের ‘চেষ্টা’য় ধৃত যুবক, পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ

শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে নরেন্দ্রপুর থানা এলাকার রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডে, গড়িয়া স্টেশন সংলগ্ন সন্ধ্যা বাজারে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ ১০:০৮
এক মহিলাকে পাচারের চেষ্টা করছিল বিকাশ সর্দার।

এক মহিলাকে পাচারের চেষ্টা করছিল বিকাশ সর্দার। —প্রতীকী চিত্র।

নারী পাচারের চেষ্টার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে মারধরের ঘটনায় এলাকায় উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হল। পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখালেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে নরেন্দ্রপুর থানা এলাকার রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডে, গড়িয়া স্টেশন সংলগ্ন সন্ধ্যা বাজারে। অভিযুক্ত যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই রাতে এক মহিলাকে পাচারের চেষ্টা করছিল বিকাশ সর্দার নামে ওই যুবক। মহিলা চিৎকার শুরু করলে স্থানীয় বাসিন্দারা সেখানে চলে এসে বিকাশকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। এর পরে বাজারের একটি বাতিস্তম্ভে তাকে বেঁধে ফেলা হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন নরেন্দ্রপুর থানার কয়েক জন পুলিশকর্মী। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দা ও অটোচালকেরা তঁদেরও ঘিরে ধরেন। ওই বাজারকে কেন্দ্র করে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অভিযোগ তুলে পুলিশকেও ঘেরাও করে রাখা হয়। পরে থানা থেকে আরও বাহিনী গিয়ে অভিযুক্ত বিকাশকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। পুলিশ সূত্রের খবর, বিকাশের বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুরে। রাজমিস্ত্রির কাজের সূত্রে ওই এলাকায় তার নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, অবৈধ ভাবে দখল করে গড়ে ওঠা ওই বাজারটি সন্ধ্যার পর থেকে দুষ্কৃতীদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে। মহিলাদের উদ্দেশ্য করে কটূক্তি, প্রকাশ্যে গাঁজা বিক্রি, সাট্টার রমরমা সেখানে লেগেই রয়েছে। নারী পাচারের আড়কাঠিরাও সন্ধ্যার পর থেকেই সেখানে সক্রিয় হয়ে ওঠে। অবৈধ বাজার এবং অবৈধ পার্কিংয়ের জেরে যানজট নিয়ে একাধিক বার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। স্থানীয় সোনারপুর উত্তরের বিধায়ক ফিরদৌসী বেগম, নরেন্দ্রপুর থানা, রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার চেয়ারম্যানের কাছে মৌখিক ও লিখিত ভাবে একাধিক বার অভিযোগ করার পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি।

এলাকাবাসীর আরও অভিযোগ, বিধায়ক-ঘনিষ্ঠ এক পুরপ্রতিনিধি ও কয়েক জন ব্যবসায়ীর মদতেই ওই বাজার দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চল হয়ে উঠেছে। নরেন্দ্রপুর থানার নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগও এনেছেন স্থানীয়েরা। অথচ রেল স্টেশন সংলগ্ন ওই বাজারের পাশের রাস্তা দিয়েই চার ও পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকে ওই পথে মহিলাদের যাতায়াতের পরিস্থিতি থাকে না বলে দাবি স্থানীয়দের।

তাঁদের দাবি, ওই বাজারের অবৈধ কাজকর্ম নিয়ে সম্প্রতি প্রায় ৬৫০ জন স্থানীয় বাসিন্দার সই-সহ অভিযোগপত্র নরেন্দ্রপুর থানা, বিধায়কের অফিস এবং রাজপুর-সোনারপুর পুরসভায় জমা দেওয়া হলেও কাজ হয়নি। ওই অভিযোগপত্রের প্রাপ্তি স্বীকারের প্রতিলিপিও রয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

যদিও সোনারপুর উত্তরের বিধায়ক ফিরদৌসী বলেন, ‘‘এমন কোনও অভিযোগ নেই। তবে অভিযোগ থাকলে তা খতিয়ে দেখে পুলিশের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।’’ ওই পুরপ্রতিনিধির সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি অবশ্য স্বীকার করেছেন বিধায়ক। তিনি বলেন, ‘‘পুরপ্রতিনিধিরা আমার ঘনিষ্ঠ।’’

প্রসঙ্গত, ওই এলাকায় রেল ও রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার মধ্যে সৌন্দর্যায়ন প্রকল্পের চুক্তি হয়েছে। রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ হয়েছে। কিন্তু অবৈধ বাজারটি তোলা হয়নি। সূত্রের খবর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন এবং পূর্ব রেলের তরফে একাধিক বার বাজারটি উচ্ছেদের নির্দেশ দেওয়া হলেও স্থানীয় বিধায়কের বাধায় তা সম্ভব হয়নি। স্থানীয় পুরসভারচেয়ারম্যান পল্লব দাস বাজার নিয়ে বাসিন্দাদের অভিযোগপত্র পেয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। তবে সেটি পুলিশের কাছে পাঠানো হয়েছে বলেই দায় সেরেছেন তিনি। শনিবারের ঘটনা নিয়ে পল্লব বলেন, ‘‘সমস্ত অভিযোগের খোঁজ নেওয়া হবে। বিধায়ক ও পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

police Racket

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy