Advertisement
E-Paper

গণপিটুনির ছোঁয়াচ লাগল কলকাতায়! বৌবাজারের ছাত্রাবাসে মোবাইল চুরির সন্দেহে পিটিয়ে খুন

বৌবাজারের ছাত্রাবাসে গণপিটুনিতে মৃত এক জন। মোবাইল চোর সন্দেহে তাঁকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় ছাত্রাবাসের ভিতর থেকে বেশ কয়েক জনকে আটক করেছে পুলিশ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০২৪ ১৭:৩৯
বৌবাজারের হস্টেলে গণপিটুনিতে মৃত ইরশাদ (বাঁ দিকে)।

বৌবাজারের হস্টেলে গণপিটুনিতে মৃত ইরশাদ (বাঁ দিকে)। — নিজস্ব চিত্র।

এ বার গণপিটুনির ঘটনা খাস কলকাতায়। বৌবাজারের ছাত্রাবাসে গণপিটুনিতে এক জনের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। মোবাইল চোর সন্দেহে তাঁকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, হস্টেলের দোতলায় এই কাণ্ড হয়েছে। এই ঘটনায় ছাত্রাবাসের ভিতর থেকে ১৫-১৬ জনকে আটক করে পুলিশ। পরে তাঁদের মধ্যে ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, মৃতের নাম ইরশাদ। তাঁর বয়স ৩৭ বছর। চাঁদনি চক এলাকায় একটি টিভি সারাইয়ের দোকানে কাজ করেন তিনি। শুক্রবার তাঁকে বৌবাজারের হস্টেলে ধরে নিয়ে গিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার হস্টেলের এক আবাসিকের মোবাইল ফোন চুরি যায়। থানায় ফোন চুরির অভিযোগ করা হয়েছিল বলে খবর। শুক্রবার সকালে হস্টেলের পাশে এক দোকানের মালিক ছাত্রদের জানান, ওই লোকটি এলাকায় ঘুরঘুর করছেন। বৌবাজারে ওই উদয়ন হস্টেলের উল্টো দিকে রয়েছে বিখ্যাত মিষ্টির দোকান। অভিযোগ, দোকানি বলার পরেই হস্টেলের সামনে ফুটপাথ থেকে ওই ব্যক্তিকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যান ছাত্রেরা। সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ এই ঘটনা হয়।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বৌবাজার থানার পুলিশ। তারা হস্টেলে ঢুকতে চাইলে প্রথমে গেট খোলা হয়নি বলে অভিযোগ। তার পর ঘটনাস্থলে পৌঁছয় মুচিপাড়া থানার পুলিশ। তাদের জন্যও দরজা খোলা হয়নি বলে অভিযোগ। মনে করা হচ্ছে, দোতলায় মারধরের পর সিঁড়ি দিয়ে ইরশাদকে নামিয়ে আনা হয়। সে সময় তাঁকে হিন্দিতে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘খুব মেরেছে (বহুত মারা)।’’ এর পর তাঁকে উদ্ধার করে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানে চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

মৃতের স্ত্রী থানায় অভিযোগ করতে যান। তদন্তে নেমেছে পুলিশ। হস্টেলে গিয়ে ১৫-১৬ জনকে আটক করেছে। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের পায়ে আঘাত লেগেছে। স্থানীয় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ জোগাড় করার চেষ্টা করছেন পুলিশকর্মীরা।

গত কয়েক দিন ধরে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায়, বিশেষত উত্তর ২৪ পরগনায় গণপিটুনির ঘটনা চলছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শিশুচুরির অভিযোগ তুলে মারধর করা হচ্ছে। বারাসতের এক শিশুর ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হওয়ার পর থেকেই সমাজমাধ্যমে ‘ছেলেধরা’ নিয়ে ‘গুজব’ ছড়িয়ে পড়ে উত্তর ২৪ পরগনায়। তার পরেই বারাসত, খড়দহ, অশোকনগরে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনা ঘটে। বনগাঁতে এক যুবককে ছেলেধরা সন্দেহে মারধর করেন স্থানীয় লোকজন। খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, প্রতিটি ঘটনাতেই লোকমুখে বা সমাজমাধ্যমে ‘গুজব’ ছড়িয়ে পড়ার পর সেই ঘটনা ঘটেছে। বারাসতে একই দিনে দুই জায়গায় মোট তিন জনকে ছেলেধরা সন্দেহে মারধর করা হয়। তাঁদের মধ্যে এক মহিলাও ছিলেন। পরে অশোকনগরে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি দেওয়া হয় এক তরুণীকে। বাধা দিতে গেলে পুলিশকেও মারধর করে উন্মত্ত জনতা। খড়দহে এক যুবককে ছেলেধরা সন্দেহে মারধর করেন এলাকার মানুষ। বনগাঁ পুরসভা এলাকার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ঠাকুরপল্লিতে রাস্তায় ভবঘুরে এক যুবককে ঘুরতে দেখে সন্দেহ হয় স্থানীয়দের। দ্রুত গুজব ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। স্থানীয়দের সন্দেহ হয়, ওই যুবক ছেলেধরা। শিশু অপহরণের উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছেন। মুহূর্তে এলাকায় লোকজন জড়ো হয়ে যায়। শুরু হয় গণপিটুনি। ছেলেধরা সন্দেহে ওই যুবককে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। গুরুতর জখম অবস্থায় তিনি এখন বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গাইঘাটাতেও এক যুবককে মারধর করা হয় ছেলেধরা সন্দেহে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ বার কলকাতায় মোবাইল চোর সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনা। তাতে মৃত্যু হয়েছে যুবকের।

mobile steal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy