Advertisement
E-Paper

আতঙ্ক-যানে এক বিকেল, মেট্রোর বন্ধ কামরায় অসহায় যাত্রীদের হুড়োহুড়ি

মুহূর্তের মধ্যে দরজা-জানলা বন্ধ মেট্রোর কামরাকে গ্রাস করল আতঙ্ক। শুরু হয়ে গেল চিৎকার-চেঁচামিচি। হুড়োহুড়ি। সময় যত গড়াল, পাল্লা দিয়ে বাড়ল আতঙ্ক। সঙ্গে বিভ্রান্তি। কামরা ভরে গিয়েছে ধোঁয়ায়। ভেসে আসছে পোড়া কয়েলের গন্ধ।

মিলন হালদার

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৫২
ময়দান স্টেশনে অসুস্থ যাত্রীদের উদ্ধার ও শুশ্রূষা।—ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

ময়দান স্টেশনে অসুস্থ যাত্রীদের উদ্ধার ও শুশ্রূষা।—ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

ঘড়িতে প্রায় ৫টা। রবীন্দ্র সদন ছাড়িয়ে ময়দান স্টেশনের বেশ খানিকটা আগে থেমে গেল দমদমগামী এসি মেট্রো। এমন তো প্রায়ই হয়। তাই প্রথমে কেউ তেমন আমল দেননি। কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ভেসে এল দুমদুম আওয়াজ। কয়েক জন যাত্রী প্রশ্ন করলেন, ‘‘কী হল?’’ এক জন উত্তর দিলেন, ‘‘মেট্রোর কাজ হচ্ছে বোধ হয়!’’ তার পরেই ট্রেনের জানলা দিয়ে দেখা গেল, ময়দানের দিক থেকে ধোঁয়া আসছে। ব্যস! কামরা জুড়ে চিৎকার উঠল, ‘‘আগুন! আগুন!’’

মুহূর্তের মধ্যে দরজা-জানলা বন্ধ মেট্রোর কামরাকে গ্রাস করল আতঙ্ক। শুরু হয়ে গেল চিৎকার-চেঁচামিচি। হুড়োহুড়ি। সময় যত গড়াল, পাল্লা দিয়ে বাড়ল আতঙ্ক। সঙ্গে বিভ্রান্তি। কামরা ভরে গিয়েছে ধোঁয়ায়। ভেসে আসছে পোড়া কয়েলের গন্ধ। একটা-একটা করে নিভছে মেট্রোর আলো। শেষ পর্যন্ত সব অবশ্য নেভেনি। কিন্তু বন্ধ হয়ে যায় এসি। চিৎকার করে কাঁদতে থাকেন হলুদ জ্যাকেট পরা এক মহিলা। আমরা তখন বুঝতে পেরেছি, বন্দি হয়ে পড়েছি পাতালে। রোজই অফিসে আসি মেট্রোয়। বৃহস্পতিবার বিকেলেও কালীঘাট থেকে ট্রেনে উঠেছিলাম। কিন্তু সেই মেট্রো যে এ দিন এমন আতঙ্ক-যানে পরিণত হবে, তা স্বপ্নেও ভাবিনি।

সামনের দিকের ভিড়টা তখন ছুটে এসেছে পিছনের দিকে। ভিড়ের মধ্যে আর্তনাদ, ‘‘কেউ মেট্রোর ইমার্জেন্সি লাইনে ফোন করুন।’’ ‘‘১০০ নম্বরে ফোন করুন।’’ কেউ শুধরে দিলেন, ‘‘আরে আগুন লেগেছে। ফোন করুন দমকলের নম্বর ১০১-এ।’’ এক যাত্রী ফোন করলেন ১০০ এবং ১০১ নম্বরে। কয়েকটি যুবক চিৎকার করে বললেন, ‘‘ভয় পাবেন না। দমকল-পুলিশে ফোন করা হয়েছে। তারা আসছে।’’ কিন্তু তাতে কান দেওয়ার মতো অবস্থা তখন কারও নেই।

লাথি-ঘুষি মেরে জানলার কাচ ভাঙার চেষ্টা করেন কেউ কেউ। অনেকে চিৎকার করলেন, ‘‘জানলার কাচ ভাঙবেন না, বাইরের ধোঁয়া ঢুকে পড়বে।’’ তত ক্ষণে ট্রেনের মেঝেতে ছড়িয়ে পড়েছে ভাঙা কাচ! হাত কাটল এক জনের। তবে জানলার ভিতরের দিকের কাচ ভাঙা গেলেও বাইরের দিকেরটা ভাঙেনি। এই সময় চিৎকার শোনা গেল, ‘‘আগুন কামরায় ছড়িয়ে পড়ছে!’’ ফের চড়ল আতঙ্কের পারদ। এক যুবক আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলেন, ‘‘আগুন নয়, আমার মোবাইলের আলোর ঝলকানি।’’ শুরু হয়ে গেল ধমকধামক: ‘‘এটা কি ছবি তোলার সময়? মোবাইল বন্ধ করুন।’’

আরও পড়ুন: চলন্ত মেট্রোর হঠাৎ আগুন, পাতালেই যেন নরকদর্শন

তত ক্ষণে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অনেকের শুরু হয়েছে শ্বাসকষ্ট। অবশেষে এল স্বস্তির খবর, এসে গিয়েছে দমকল, পুলিশ। খোলা হয়েছে চালকের কামরার দরজা। আমরা এগোতে শুরু করলাম সেই দিকে। তবে ঘাটতি হয়নি সৌজন্যের। পুরুষদের অনেকেই বললেন, ‘‘হুড়োহুড়ি করবেন না। মহিলা-বৃদ্ধদের এগিয়ে দিন।’’ চালকের কামরার দরজা দিয়ে দেখতে পেলাম ময়দান স্টেশনের আলো। ঘড়িতে তখন ৫টা ৪০ মিনিট।

পাতাল-আতঙ্ক পেরিয়ে লাইন ধরে এগিয়ে গেলাম। ফের পা রাখলাম জীবনের স্টেশনে।

Fire Calamities Kolkata Metro AC Rack Fire Brigade
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy