Advertisement
E-Paper

ডেঙ্গি রোধে কথাই বেশি, কাজ কোথায়

শেষ দু’বছরে কলকাতা সংলগ্ন ওই পুর এলাকায় ডেঙ্গি মারাত্মক আকার নিয়েছিল। এ বছর ডেঙ্গির বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রথম থেকেই বাড়ি বাড়ি নজরদারি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিল নবান্ন।

সৌরভ দত্ত

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৫:৫৫
অসচেতন: দক্ষিণ দমদমের বিভিন্ন জায়গায় এ ভাবেই জমে জল ও আবর্জনা। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

অসচেতন: দক্ষিণ দমদমের বিভিন্ন জায়গায় এ ভাবেই জমে জল ও আবর্জনা। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতার প্রচারে বড় রাস্তায় যা ঘোষণা করা হচ্ছে ওয়ার্ডের অলিগলিতে তারই দেখা নেই দক্ষিণ দমদমে!

শেষ দু’বছরে কলকাতা সংলগ্ন ওই পুর এলাকায় ডেঙ্গি মারাত্মক আকার নিয়েছিল। এ বছর ডেঙ্গির বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রথম থেকেই বাড়ি বাড়ি নজরদারি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিল নবান্ন। প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে কোথায় জল জমে রয়েছে তা খুঁজে বের করে মশা নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দিয়েছিল স্বাস্থ্য ভবন। সেই নির্দেশ রূপায়ণে প্রচারে কোনও ঘাটতি নেই পুর কর্তৃপক্ষের। গত ৭ জানুয়ারির পরে ২৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় দফায় নাগেরবাজার থেকে কালিন্দী পর্যন্ত পদযাত্রা করা হয়েছে। পাশাপাশি, পুর এলাকার যশোর রোড, ভিআইপি রোড, দমদম রোডের মতো বড় রাস্তায় গ্লো-সাইনবোর্ড লাগিয়ে এ বার ডেঙ্গি-যুদ্ধে নামতে চলেছে ওই পুরসভা! সচেতনতার নানা পরামর্শ-সহ বছরের কোন সময়টায় মশার বংশবৃদ্ধি হয়, কোন সময়ে ডেঙ্গির জীবাণু অতি সক্রিয় হয় সে সবও লেখা থাকবে বোর্ডে।

পুর কর্তৃপক্ষ যখন প্রচার কর্মসূচিতে ব্যস্ত তখন বিভিন্ন ওয়ার্ডে জঞ্জাল সাফাই এবং নজরদারির কাজ কতটা হচ্ছে সেই প্রশ্নে সরব বাসিন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, শীতের শেষে বিভিন্ন এলাকায় মশা ভন ভন করছে। কিন্তু মশার উৎস খুঁজে দেখার কাজ এখনও শুরু হয়নি। গত বছর পুরসভার সবক’টি ওয়ার্ডই কমবেশি ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিল। তার মধ্যে ৩, ১২, ১৩, ১৪ এবং ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের পরিস্থিতি ছিল উদ্বেগজনক।

১৩ নম্বর ওয়ার্ডে কাঠপোলের বাসিন্দাদের বক্তব্য, কারও জ্বর হয়েছে কি না, ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে কী করতে হবে তা মনে করিয়ে দিতে স্বেচ্ছাসেবকেরা আসেন ঠিকই। কিন্তু বাড়ির ভিতরে ঢুকে কোথায় কোথায় জল জমে রয়েছে তা দেখতে তো কাউকে দেখি না। এর প্রেক্ষিতে শাসকদলের একাধিক কাউন্সিলর বলেন, ‘‘মাসে ১০ দিন সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে নজরদারি যেমন হওয়ার তা-ই হচ্ছে!’’ সম্ভবত সে জন্যই স্বেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি দলীয় কর্মীদের নজরদারির কাজে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলর প্রবীর পাল। ৩ নম্বর ওয়ার্ডে মাতঙ্গিনী সেকেন্ড লেনের বেশ কিছু বাসিন্দার মন্তব্য, ‘‘গলির মুখে নর্দমার জলই তো যাচ্ছে না। বাড়ির জল বেরোবে কোথা থেকে? সন্ধ্যার পরে ওই নর্দমা থেকেই ঝাঁকে ঝাঁকে মশা উড়ে আসে।’’

শুকনো জঞ্জালেও দু’বছর পর্যন্ত এডিস মশার লার্ভা যে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে তা সচেতনতা পদযাত্রায় নাগরিকদের উদ্দেশে মাইকে ঘোষণা করছেন পুর প্রতিনিধিরাই। অথচ প্রমোদনগরের সোনাই খালে থার্মোকলের থালা, বাটি-সহ জঞ্জালের আস্তরণ জমে রয়েছে। ১২ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিক জায়গাতেও জমে রয়েছে জঞ্জাল। প্রমোদনগরে পুরসভার নতুন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ছাদেও জমে রয়েছে জল! গত বছর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গি সংক্রমণে মৃত্যু হয়েছিল অনু দাসের। সেই সময় মৃতার বাড়ির সামনের মাঠে আবর্জনার স্তূপ ছিল। এক বছর পরও সেই চিত্রের কোনও বদল ঘটেনি। স্থানীয় এক মহিলা বলেন, ‘‘অনুর মৃত্যুর পরে ক’দিন এলাকা খুব পরিষ্কার ছিল। আবার যেই কে সেই। গরম পড়ছে। এখন থেকে সাবধান না হলে মুশকিল।’’ শোচনীয় ছবি ৩২ নম্বর ওয়ার্ডেরও। দিঘির পাড়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্র সংলগ্ন পুরসভার উদ্যানে জল জমে শ্যাওলা পড়ে গিয়েছে। রেল কোয়াটার্সের চারপাশে জমা জল। খোলা ভ্যাটের নোংরা রাস্তায় এসে পড়েছে। বিভিন্ন ওয়ার্ডের এই ছবির সামনে স্বাভাবিক ভাবে বেমানান ঠেকছে বড় রাস্তার প্রচার।

দক্ষিণ দমদমের পুর প্রধান বলেন, ‘‘গতবারের তুলনায় আমাদের প্রস্তুতি অনেক ভাল। কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে। সেগুলিও নজরে রয়েছে। কোথাও যাতে জল না জমে সে ব্যাপারে আমরা সচেষ্ট।’’

Dengue Garbage Logged water South Dumdm Municiplaity
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy