পুজোর ঠিক আগের ঘটনা। দমদমের কর্মস্থল থেকে বেরোতে রাত দশটা হয়ে গিয়েছিল ওয়েব ডিজ়াইনার প্রিয়াঙ্কা ভদ্রের। কালীঘাট মেট্রো স্টেশন থেকে বেরিয়ে দেখেন, বেহালা যাওয়ার একটিই অটো দাঁড়িয়ে রয়েছে। প্রিয়াঙ্কা ছাড়া আর এক মহিলা ছিলেন তাতে। রাত বাড়লেও অটো ছাড়ছিল না। ওঁরা দেখেন, একের পর এক পুরুষ বা বয়স্ক মহিলাকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন চালক। বেছে বেছে তিনি কমবয়সি মহিলা যাত্রীই তুলছিলেন অটোয়! হায়দরাবাদ-কাণ্ডের পরে ওই রাতের কথাই মনে পড়ছিল প্রিয়াঙ্কার। বললেন, ‘‘ভাবুন, কী বিকৃতি! প্রথমে বুঝতে পারিনি। শেষে চার জন কমবয়সি মহিলা যাত্রী হওয়ায় অটো ছাড়লেন চালক। প্রতিদিন যাতায়াত করি। তাই ভয়ে প্রতিবাদ করিনি।’’
এ শহরের মহিলাদের অনেকেই বলছেন, ২০১২ সালে দিল্লির নির্ভয়া-কাণ্ডের পরেও যে চিত্রটা বদলায়নি, তার প্রমাণ হায়দরাবাদের ঘটনা। জেলা বা শহরতলি থেকে বিভিন্ন বয়সি মহিলারা এ শহরে আসেন। কেউ পড়তে, কেউ বা কাজের সূত্রে। তাঁদের সঙ্গে এমন কত কী-ই যে ঘটে, যা হেনস্থার থেকে কম নয়, জানাচ্ছেন তাঁরা। ওই মহিলাদের প্রশ্ন, ‘‘পুলিশ বা প্রশাসনের কর্তারা বলছেন, মহিলারা অভিযোগ করলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া রয়েছে। কিন্তু অভিযোগ করতে হবে কেন? আগাম ব্যবস্থা নেওয়া হবে না কেন?’’
আইনজীবী মানালি বন্দ্যোপাধ্যায় আবার জানান, এক রাতে সাড়ে ১১টা নাগাদ গড়িয়াহাট থেকে বেহালার ম্যান্টন যাবেন বলে অ্যাপ-ক্যাব বুক করেন তিনি। ক্যাবে ওঠার পরে দেখেন, চালক গন্তব্যে না গিয়ে পার্ক সার্কাসের দিকে গাড়ি ঘুরিয়ে দিয়েছেন। মানালির কথায়, ‘‘কোন দিকে যাচ্ছেন, জানতে চাইলে চালক না শোনার ভান করেন। আতঙ্কে চিৎকার করি। প্যানিক বাটন চাপতে গাড়ি থামে। চালক বলেন, ট্রিপ চালু করতেই তিনি ভুলে গিয়েছেন! মাঝরাস্তায় নেমে যেতে হয় আমায়।’’ মানালির অভিযোগ, পুলিশ এবং ক্যাব সংস্থার দ্বারস্থ হয়েও লাভ হয়নি।